কাজ কবে শেষ হবে। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।
মৃত সাপের মতো জলের পাইপ লাইন পড়ে রয়েছে। জলের সংযোগ হয়নি এখনও। বিদ্যুৎ সংযোগ যেমন নেই, তেমনই বিদ্যুতের কাজও সম্পূর্ণ হয়নি। গাড়ি রাখার জায়গা গড়ে ওঠেনি, তৈরি হয়নি হিমঘর। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শনিবার নবান্ন থেকে যে ২৩টি প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন, তার মধ্যে অন্যতম বহরমপুরের ‘কিষান মাণ্ডি’র এমনটাই দশা।
মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুর লাগোয়া ভাকুড়ি (দক্ষিণ) ‘মডেল ফার্মের’ মধ্যে প্রায় ১৫ বিঘা জায়গা জুড়ে ওই কৃষক বাজার তৈরিতে ব্যয়বরাদ্দ প্রায় ৬ কোটি টাকা। কিন্তু এখনও অর্ধেক কাজ হয়নি। কৃষক সহায়ক ভবনের দোতলায় শৌচালয়ের নিচে মুখ থুবড়ে পড়ে রয়েছে বেসিন। এমনকী সরকার নির্ধারিত দরে এলাকার কৃষকদের উৎপাদিত ফসল কিনে যেখানে মজুত করে রাখার কথা, সেই গুদামের সিমেন্টের মেঝেতে জল জমে রয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই লোক দেখানো উদ্বোধন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। জেলা কংগ্রেসের মুখপাত্র অশোক দাস যেমন বলেন, “সম্পূর্ণ পরিকাঠামো তৈরি না করে লোকসভা ভোটের দিকে তাকিয়ে তড়িঘড়ি হাঁসজারু প্রসব করেছে রাজ্য সরকার।”
আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন উপলক্ষে কৃষি বিপণন দফতর শনিবার ওই বাজারে এক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করেছিল। হাজির ছিলেন খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও উদ্যান পালন দফতরের মন্ত্রী তৃণমূলের সুব্রত সাহা, কংগ্রেস থেকে সদ্য ‘বহিষ্কৃত’ বিধায়ক ইমানি বিশ্বাস, বহরমপুরের মহকুমাশাসক সুপ্রিয় দাস-সহ এলাকার কয়েকশো বাসিন্দা। অনুষ্ঠানে মহকুমাশাসক সুপ্রিয় দাস মেনে নেন, “কাজ শেষ হতে এখনও ১৫-২০ দিন সময় লাগবে।” কৃষি বিপণন দফতরের জেলা আধিকারিক দেবাশিস রায় আশ্বস্ত করেন, “দ্রুত কাজ শেষ করে কিষান মাণ্ডি চালু করা হবে। প্রতিটি ব্লকেই কিষান মাণ্ডি তৈরি হচ্ছে। আগামী ৩-৪ মাসের মধ্যে হরিহরপাড়া, কান্দি ও সাগরদিঘির কৃষক বাজারের কাজ সম্পূর্ণ হয়ে যাবে।”
এদিকে ভাকুড়িতে যেখানে কৃষক বাজার তৈরি হয়েছে, সেখান থেকে আড়াই কিমি দূরে আখের মিল এলাকায় বিশাল সব্জি বাজার রয়েছে। ওই সব্জি বাজারে সারগাছি, ভাবতা, মহুলা, বেলডাঙা, বাণীনাথাপুর, পুলিন্দা, ছত্রপুর, বেলপুকুর, পশ্চিমগামিনী, হরিহরপাড়া, নওদার বিস্তৃত এলাকার চাষিরা সব্জি কেনাবেচার জন্য প্রতি দিন ভিড় করেন। সেখানে আশপাশে জনবসতি না থাকায় ভাকুড়ির কৃষক বাজারে কতটা ভিড় হবে তা নিয়ে দ্বিধা রয়েছে চাষিদের। প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরের ভাকুড়ি শিবমন্দির ব্যবসায়ী সমিতির হাটে সব্জি বিক্রি করেন বেনু মণ্ডল। তিনি বলেন, “আখের মিল এলাকায় কৃষক বাজার গড়ে উঠলে আমরা উপকৃত হতাম।” স্থানীয় খসরুল শেখও বলেন, “দীর্ঘ দিন ধরে আখের মিল ও বহরমপুরের বাজারে সব্জি বেচাকেনার ফলে পরিচিতি গড়ে উঠেছে। এখনই এখানে তা সম্ভব নয়।”
কংগ্রেস নেতা অশোক দাসের অভিযোগ, “যেখানে আখের মিল এলাকায় সুবিশাল সব্জি বাজার রয়েছে, সেখানে কৃষক বাজার তৈরি না করে পরিকল্পনাহীন ভাবে ভাকুড়ি এলাকায় কৃষক বাজার তৈরি নিয়ে এলাকার চাষিদের ক্ষোভ রয়েছে।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্যও বলেন, “জনবসতি কম এলাকায় কৃষক বাজার গড়ে উঠলে কৃষকদের সুবিধা হবে না।”
তবে, বহরমপুর ব্লকের একটা অংশের যেমন গজধরপাড়া, গাকুন্দা, হাটগাছা, বুটাডাঙা, সুন্দিপুর, সল্লাগাছা এলাকার চাষিদের তুলনায় কাছে হবে এই বাজার। স্থানীয় চাষি আবদুস সালাম বলেন, “এত দিন আমরা বহরমপুর বা আখের মিল বাজারে সব্জি বিক্রি করার জন্য যেতাম। বাড়ি ফিরতে দেরি হয়ে যেত। এখন বাড়ির কাছেই বাজার হওয়ায় সব্জি বিক্রি করে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে গিয়ে অন্য কাজ করতে পারব। এতে বাড়তি আয় হবে।”
শনিবারের অনুষ্ঠানে এলাকার কৃষকদের কাছে সুব্রত সাহা আবেদন করেন, “কৃষক বাজার আপনাদের সম্পত্তি। আপনাদের উৎপাদিত ফসল কেনাবেচার জন্য ওই কৃষক বাজারে নিয়ে এসে দ্রুত চালুর ব্যবস্থা করুন। এই কৃষক বাজার সফল করতে হবে আপনাদেরই।”
কৃষকদের আগামী দিনে নানা রকম প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে বলেও মন্ত্রী সুব্রত সাহা আশ্বাস দেন। মন্ত্রীর আশ্বাস উপস্থিত চাষিদের কতটা আশ্বস্ত করল, মুখ দেখে বোঝা ভার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy