Advertisement
০৪ মে ২০২৪

অসম্পূর্ণ ফল প্রকাশ, ক্ষুব্ধ পরীক্ষার্থীরা

পার্ট-১ পরীক্ষার ‘অসম্পূর্ণ’ ফল মঙ্গলবার প্রকাশ হওয়ায় কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে। প্রায় সাড়ে ১০ হাজার ছাত্রছাত্রীর পরীক্ষার ফল অসম্পূর্ণ ভাবে প্রকাশিত হয়েছে বলে অভিযোগ। ওই অভিযোগ অবশ্য স্বীকার করে নিয়েছেন কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ামক পার্থসারথী দে বলেন, “বিভিন্ন বিষয়ের নম্বর সময় মতো বিশ্ববিদ্যালয়ে জমা না পড়ার ফলেই ওই অসম্পূর্ণ ফল প্রকাশ করতে হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:১২
Share: Save:

পার্ট-১ পরীক্ষার ‘অসম্পূর্ণ’ ফল মঙ্গলবার প্রকাশ হওয়ায় কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে। প্রায় সাড়ে ১০ হাজার ছাত্রছাত্রীর পরীক্ষার ফল অসম্পূর্ণ ভাবে প্রকাশিত হয়েছে বলে অভিযোগ। ওই অভিযোগ অবশ্য স্বীকার করে নিয়েছেন কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ামক পার্থসারথী দে বলেন, “বিভিন্ন বিষয়ের নম্বর সময় মতো বিশ্ববিদ্যালয়ে জমা না পড়ার ফলেই ওই অসম্পূর্ণ ফল প্রকাশ করতে হয়েছে। বার বার জানানো সত্ত্বেও সময়ের মধ্যে নম্বর জমা দেওয়ার কোনও তাগিদ হেড এগজামিনার, এগজামিনার এবং কলেজ কর্তৃপক্ষের ছিল না। তবে আগামী বৃহস্পতিবার মার্কশিট দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কোনও মার্কশিট অসম্পূর্ণ থাকলে ছাত্রছাত্রীদের আবেদনের ভিত্তিতে পরে নতুন করে মার্কশিট দেওয়া হবে।”

সেক্ষেত্রে ‘তাড়াহুড়ো’ করে অসম্পূর্ণ ফল প্রকাশ করা হলো কেন? পার্থসারথীবাবু বলেন, “কলেজ সংসদ নির্বাচনের বিষয়টি উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তবে পার্ট-১ পরীক্ষার ফল তো বের করতেই হত।”

গত অগস্টে পার্ট-১ লিখিত পরীক্ষা শুরু হয়। নিয়ম অনুযায়ী পরীক্ষা শেষে সেপ্টেম্বরের মধ্যে যাবতীয় খাতা বিতরণ কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেওয়ার। নদিয়া জেলার ক্ষেত্রে ডিএল রায় কলেজ বিতরণ কেন্দ্র এবং মুর্শিদাবাদ জেলার ক্ষেত্রে অনার্সের খাতা বিতরণ কেন্দ্র ইউনিয়ন ক্রিশ্চান ট্রেনিং কলেজ এবং জেনারেল বা পাশ কোর্সের খাতা বিতরণ কেন্দ্র কৃষ্ণনাথ কলেজ। ওই বিতরণ কেন্দ্রগুলি থেকে হেড এগজামিনারের মাধ্যমে বিভিন্ন এগজামিনার খাতা সংগ্রহ করেন।

কিন্তু দেখা গিয়েছে, নদিয়া জেলার মাজদিয়া কলেজের পার্ট-১ রসায়ন জেনারেল কোর্সের খাতা গত সাড়ে চার মাস ধরে বহরমপুর স্টেশনের আরএমএস ডাকঘরে পড়ে ছিল। পার্ট-১ পরীক্ষার ফল প্রকাশের উদ্যোগ নেওয়ার পরেই গত বৃহস্পতিবার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। সেই মতো বহরমপুর স্টেশনের আরএমএস থেকে গত শনিবার ওই খাতা সংগ্রহ করা হয়। মঙ্গলবার ওই খাতা দেখার জন্য জিয়াগঞ্জ শ্রীপত্‌ সিংহ কলেজের রসায়নের অধ্যাপক সুকুমার মালকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সুকুমারবাবু আবার ওয়েবকুপার মুর্শিদাবাদ জেলার সভাপতিও। তিনি বলেন, “রসায়ন জেনারেল কোর্সের দুটি প্যাকেটে মোট ৬৭টি খাতা দেখার জন্য আমি নিয়েছি। আমার কলেজের রসায়নের অধ্যাপকদের দিয়ে আগামী দু’এক দিনের মধ্যে ওই খাতা দেখে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিয়ে দেব।”

তাঁর কথায়, “মাজদিয়া কলেজ কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল জেনারেল কোর্সের খাতা বিতরণ কেন্দ্র কৃষ্ণনাথ কলেজে ওই খাতা পাঠানোর। কিন্তু কোনও কারণে তারা ভুল করে প্যাকেটের উপরে ঠিকানা হিসেবে ইউনিয়ন ক্রিশ্চান ট্রেনিং কলেজের নাম উল্লেখ করায় ওই বিপত্তি। ইউসিটিসি’র নাম থাকায় কৃষ্ণনাথ কলেজ কর্তৃপক্ষ ওই খাতা নিতে অস্বীকার করে। শেষ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাকে ওই খাতা দেখে অবিলম্বে নম্বর জমা দেওয়ার ভার দেওয়ায় এ দিন ইউসিটিসি থেকে ওই খাতা নিয়ে এসেছি।”

ওই খাতা দেখার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে দায় এড়িয়ে যান মুর্শিদাবাদ জেলার রসায়নের হেড এগজামিনার সাফল্য ঘোষ। তাঁর কথায়, “জেনারেল কোর্সের রসায়নের যে সমস্ত খাতা দেখার জন্য বিতরণ কেন্দ্র কৃষ্ণনাথ কলেজে এসেছিল, সেই সমস্ত খাতা দেখে নম্বরও জমা দিয়েছি। ওই ৬৭টি খাতার ব্যাপারে আমার কিছু জানা নেই।”

এ ক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠেছে, ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থে ওই ৬৭টি খাতার দায়িত্ব কি হেড এগজামিনার বা বিতরণ কেন্দ্র হিসেবে কৃষ্ণনাথ কলেজ কর্তৃপক্ষ এড়িয়ে যেতে পারে? কৃষ্ণনাথ কলেজ অধ্যক্ষ কল্যাণাক্ষ ঘোষ বলেন, “ওই প্যাকেটের উপরে ইউসিটিসি কলেজের নাম ও ঠিকানা লেখা ছিল। ফলে বাইরে থেকে আমাদের পক্ষে কোনও ভাবেই বোঝা সম্ভব নয় যে প্যাকেট বন্দি ওই খাতা জেনারেল কোর্সের। তবে জানার পরেই বিষয়টি ইউসিটিসি কলেজ কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়।”

ওই কথা শুনে পার্থসারথীবাবু বলেন, “তাহলেই বুঝুন হেড এগজামিনার এবং এগজামিনারদের নৈতিক দায়িত্ব কোথায়?” তিনি জানান, “মুর্শিদাবাদের একটি কলেজে ২৫ হাজার ছাত্রছাত্রীর নম্বর তালা বন্ধ হয়ে পড়ে ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে জমা পড়েনি। গত ১১ জানুয়ারি মেসেঞ্জার পাঠিয়েও কলেজ কর্তৃপক্ষ ওই নম্বর দেয়নি। তার দু’দিন পরে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ওই নম্বর পাঠিয়ে দেয়। ওই নম্বর দু’দিন আগে জমা পড়লে দু’দিন আগে পরীক্ষার ফল বের করা যেত।”

কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা সমূহের সহকারী নিয়ামক সুকান্ত মজুমদারও বলেন, “কয়েক দিন আগে মুর্শিদাবাদের দুটি বিতরণ কেন্দ্র থেকে প্রায় পাঁচ হাজার খাতা তুলে নিয়ে আসা হয় কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে। পরে এগজামিনারদের বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলে নিয়ে এসে তাদের দিয়ে খাতা দেখানোর বন্দোবস্ত হয়।”

তবে সব চেয়ে হতাশ পার্ট-১ পরীক্ষার্থীরা। রানাঘাট কলেজের পার্ট-১ রসায়ন অনার্সের পরীক্ষার্থী সৌমী দত্ত বলেন, “আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েব সাইটে দেখি যে আমার নাম নেই। জানতে পারি, যারা ফেল করেছে তাদের নাম উল্লেখ থাকে না। কিন্তু আমি এমন কোনও খারাপ পরীক্ষা দিইনি যে ফেল করব।” কল্যাণী মহাবিদ্যালয়ের পার্ট-১ জেনারেল কোর্সের ছাত্রী প্রিয়া মণ্ডলও একই কথা বলেন। প্রিয়ার কথায়, “মার্কশিট হাতে না পাওয়া পর্যন্ত চিন্তায় থাকতে হবে। এটা যন্ত্রণার।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

result out part 1 kalyani university
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE