Advertisement
১১ মে ২০২৪

আন্দুলিয়ায় টিফিনের সময় সব্জি চাষ খুদে পড়ুয়াদের

টিফিনের ঘণ্টা পড়তেই হইহই করে ওরা ছুটে যায় স্কুলের বাগানে। কাউকে কিছু বলতে হয় না। যাবতীয় দায়িত্ব ওরা নিজেরাই ভাগ করে নিয়েছে। বিশ্বেশ্বর হাজরা জলের বালতি এগিয়ে দিচ্ছে রিনি রায়ের হাতে। দীপঙ্কর পাল ছোট কোদাল দিয়ে আলগা করে দিচ্ছে গাছের গোড়ার মাটি।

বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত পড়ুয়ারা। —নিজস্ব চিত্র।

বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত পড়ুয়ারা। —নিজস্ব চিত্র।

কৌশিক সাহা
কান্দি শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:২২
Share: Save:

টিফিনের ঘণ্টা পড়তেই হইহই করে ওরা ছুটে যায় স্কুলের বাগানে। কাউকে কিছু বলতে হয় না। যাবতীয় দায়িত্ব ওরা নিজেরাই ভাগ করে নিয়েছে।

বিশ্বেশ্বর হাজরা জলের বালতি এগিয়ে দিচ্ছে রিনি রায়ের হাতে। দীপঙ্কর পাল ছোট কোদাল দিয়ে আলগা করে দিচ্ছে গাছের গোড়ার মাটি। রুস্তম শেখ, হাশিব শেখেরা ব্যস্ত বাগানের আগাছা পরিস্কার করতে। ওরা সকলেই কান্দির আন্দুলিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়ুয়া। স্কুলের মিড ডে মিলের সব্জির জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষকে থলে হাতে আর বাজারে যেতে হয় না। স্কুলেরই একফালি জমিতে সব্জির আবাদ করছে ২৫১ জন খুদে পড়ুয়া।

কান্দি শহর থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরে আন্দুলবেড়িয়ার ওই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চার দিকে প্রাচীর বলতে কিছু নেই। একটি দোতলা ও একটি একতলা ভবনের মোট ছয়টি ঘরে চলে পড়াশোনা। বিদ্যালয় ভবনের গা ঘেঁসে রয়েছে বাহারি ফুলবাগান। বাকি জায়গাতে চাষ করা হয়েছে শীতকালীন সব্জি। ফুলকপি, বাঁধাকপি, মূলো, পালং, বেগুন, ওলকপি, বিট, গাজর কী নেই সেই তালিকায়!

বিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ন’মাস আগে নির্মল স্কুলের নিয়ম মেনে স্কুলের শিক্ষকরা স্কুল চত্বরে সব্জি বাগান করতে উদ্যোগী হন। বাগান তো হবে, কিন্তু বিদ্যালয় চত্বরের চারপাশে যে কোনও প্রাচীর নেই। বিন্দুমাত্র দমে না গিয়ে শিক্ষকরা নিজেরাই টাকা দিয়ে বেড়ার জন্য বাঁশ কেনেন। বেড়া বাঁধার জন্য এগিয়ে আসেন স্থানীয় জনাকয়েক অভিভাবকও। বিনা পারিশ্রমিকে তাঁরা বেড়া বেঁধে দেন। সব্জি চাষের উপযুক্ত মাটিও তৈরি করে দেন তাঁরাই। সেই কাজ শেষ হলে শিক্ষকরা কান্দি বাজার থেকে চারা কিনে এনে পড়ুয়াদের হাতে তুলে দেন।

স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, চারাগাছ রোপণ করা থেকে গাছের গোড়ায় জল দেওয়া, আগাছা পরিষ্কার করা সবই সামলাচ্ছে পড়ুয়ারা। এখন মিড ডে মিলের জন্য আলু, পেঁয়াজ ও আদা ছাড়া অন্য কোনও সব্জি বাজার থেকে কিনতে হচ্ছে না বলে দাবি শিক্ষকদের। তবে সেই সব্জি চাষে একটাই শর্ত--- কোনও রাসায়নিক সার ব্যবহার চলবে না। সেই শর্ত অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলাও হচ্ছে বলে দাবি শিক্ষকদের।

স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়া রিনি, রুস্তম, হাশিবরা বলে, “আমরা সবাই টিফিনের ঘণ্টার জন্য অপেক্ষা করি। ঘণ্টা বাজলেই একছুটে বাগানে চলে যাই। গাছের যত্ন করতে আমাদের ভাল লাগে। শিক্ষকরাও আমাদের সাহায্য করেন।” স্থানীয় অভিভাবক গৌতম হাজরা, অশোক রায়চৌধুরীদের কথায়, “পড়াশোনার পাশাপাশি আমাদের ছেলেমেয়েরা স্কুলে সব্জি চাষেও হাত লাগায়। এটা আমাদের খুব ভাল লাগে। ওরা যে ভাবে পরম মমতায় গাছের যত্ন করে তা দেখে আমরা বড়রাও মাঝেমধ্যে অবাক হয়ে যাই। সময় পেলে আমরাও ওদের সাহায্য করি।”

বর্তমানে স্কুলে স্কুলে মিড ডে মিলে পড়ুয়াদের সপ্তাহে দু’দিন করে ডিম ও বাকি চার দিন সব্জি, ডাল, ভাত দেওয়া হয়। তার জন্য ছাত্র পিছু বরাদ্দ ৩.৬৯ টাকা। যেহেতু ওই স্কুলের পড়ুয়ারা নিজেদের খাওয়ার সব্জি নিজেরাই আবাদ করে, তাই সব্জির জন্য বরাদ্দ টাকা বাঁচিয়ে ওই পড়ুয়াদের বাড়তি একদিন ডিম কিংবা মাংস রান্না করে খাওয়ানো হয়।

স্কুলের প্রধানশিক্ষক অনিন্দ্য সিংহ বলেন, “নির্মল স্কুলের নিয়মাবলিতে স্কুল চত্বরে জায়গা থাকলে কিচেন গার্ডেন করার কথা বলা হয়েছে। আমরা সেই নিয়ম মেনেই ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে বাগান করেছি। পড়াশোনার পাশাপাশি সব্জি চাষেও পড়ুয়াদের উৎসাহের অন্ত নেই। শুধু শীতকালেই নয়, বছরভর যাতে সব্জি চাষ করা যায় আমরা সেই প্রস্তুতিও নিচ্ছি।”

স্কুলের ওই উদ্যোগে খুশি মুর্শিদাবাদ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান দেবাশিষ বৈশ্য। তিনি বলেন, “খুবই ভাল উদ্যোগ। নির্মল স্কুল হিসেবে ওই স্কুলকে পুরস্কৃত করা যায় কি না দেখব।” পড়ুয়াদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “পড়াশোনার পাশাপাশি নিজেদের প্রয়োজন নিজেরাই মিটিয়ে নিচ্ছে শুনে খুব ভালো লাগছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE