Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

কমিশনের সুপারিশ মানছেন না স্কুল কর্তৃপক্ষ

স্কুল সার্ভিস কমিশনের সুপারিশ অগ্রাহ্য করার অভিযোগ উঠেছে নদিয়ার বগুলার একটি মাধ্যমিক স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক তথা ওই স্কুলের পরিচালন সমিতির সম্পাদকের বিরুদ্ধে। বিমল বিশ্বাস নামে ওই ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষকের সঙ্গে স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।

মনিরুল শেখ
বগুলা শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০১:১৩
Share: Save:

স্কুল সার্ভিস কমিশনের সুপারিশ অগ্রাহ্য করার অভিযোগ উঠেছে নদিয়ার বগুলার একটি মাধ্যমিক স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক তথা ওই স্কুলের পরিচালন সমিতির সম্পাদকের বিরুদ্ধে। বিমল বিশ্বাস নামে ওই ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষকের সঙ্গে স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।

বগুলার এই বেনালি ডি সি হাইস্কুলে প্রধানশিক্ষক নেই প্রায় এক দশক। বিমলবাবু দায়িত্ব সামলাচ্ছেন প্রায় বছর চারেক ধরে। সম্প্রতি স্কুল সার্ভিস কমিশন বারাসাতের বাসিন্দা দেবাশিস চক্রবর্তীকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করে মাস দু’য়েক আগে। নিয়ম অনুযায়ী, সুপারিশের দিন পনেরোর মধ্যে স্কুল কর্তৃপক্ষকে নিয়োগপত্র দিতে হবে। কিন্তু সেই নিয়োগপত্র দেবাশিসবাবু এখনও হাতে পাননি। দীর্ঘদিন ধরে প্রধানশিক্ষক না থাকায় ক্ষুব্ধ এলাকার লোকজন এ ব্যাপারে বিমলবাবুর বিরুদ্ধে নদিয়ার স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) কৌশিক রায়ের কাছে লিখিত নালিশও জানিয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, শাসকদলের সঙ্গে নিজের সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে বিমলবাবু পদ আঁকড়ে থাকতে চাইছেন।

কৃষ্ণগঞ্জের বিধায়ক তৃণমূলের সত্যজিৎ বিশ্বাস বলেন, “বিমলবাবুর আমাদের দলের শিক্ষা সেলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। তবে আমরা চাই কমিশনের সুপারিশ মতো প্রধানশিক্ষক নিয়োগ করা হোক। বিমলবাবু কেন তাতে বারবারই বেঁকে বসছেন, তা বলতে পারব না।”

বিমলবাবুর সাফাই, “চলতি বছরের ২ জানুয়ারি কমিশনের সুপারিশ হাতে পেয়ে পরের দিনই পরিচালন সমিতির সভার জন্য নোটিশ জারি করি। সেই মতো ১৩ জানুয়ারি সভা বসে। কিন্তু তখন কৃষ্ণগঞ্জ বিধানসভার উপ নির্বাচনের জন্য জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে আদর্শ আচরণবিধি জারি থাকায় নিয়োগপত্র দেওয়া যায়নি।” ভোট শেষে কেন নিয়োগপত্র দেওয়া হল না? তাঁর উত্তর, “ছেলে অসুস্থ ছিল। তাই ভোট শেষে তড়িঘড়ি সভা ডেকে নিয়োগপত্র দিতে পারিনি। ৪ মার্চ পরিচালন সমিতির সভা ডাকা হয়েছে। তখন সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”

কিন্তু কমিশনের সুপারিশের পরেও ডিসেম্বরের মধ্যে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগপত্র না পাওয়ায় বেতনবৃদ্ধিও আটকে গিয়েছে দেবাশিসবাবুর। তিনি এ ব্যাপারে নদিয়ার রানাঘাটের অতিরিক্ত স্কুল পরিদর্শকেরও দ্বারস্থ হয়েছেন। সেই সঙ্গে ১৪ জানুয়ারি তিনি স্কুল সার্ভিস কমিশনের কাছেও প্রতিকার চেয়ে চিঠি দেন। তাঁর দাবি, চলতি মাসের ২৩ তারিখে কমিশন সেই চিঠির বিষয়ে উল্লেখ করে তাঁকে ও নদিয়ার স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) কৌশিক রায়কে চিঠি দিয়েছে। চিঠিতে কমিশনের তরফে নিয়োগপত্র দেওয়ার দশ দিনের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। তা-সত্ত্বেও দেবাশিসবাবুকে নিয়োগপত্র দেওয়ার ব্যাপারে কোনও পদক্ষেপই করছেন না স্কুল কর্তৃপক্ষ।

এলাকার বাসিন্দারা অবশ্য দাবি করছেন, নানা অজুহাতে বিমলবাবু ইচ্ছা করেই দেরি করছেন। ১২ জন শিক্ষক রয়েছেন ওই স্কুলে। ছাত্র সংখ্যা সাকুল্যে ৬৫০। এলাকাবাসীদের একাংশের অভিযোগ, পড়শি গ্রাম কেষ্টপুর, বালিডাঙা, নতুনগ্রাম, পায়রাডাঙা, পারবাটিকামারি থেকে এক সময় এই স্কুলে পড়ুয়ারা আসত। তখন পড়াশুনার মানও ছিল উন্নত। তাঁদের দাবি, “ক্ষমতা দখলে মরিয়া বিমলবাবু পড়াশুনার মান্নোন্নয়নের জন্য কিছু করেন না। ফলে ছাত্র-সংখ্যা দিন দিন কমছে। অনেকে অনেকটা অতিরিক্ত পথ উজিয়ে চূর্ণী নদী পেরিয়ে পাশের গ্রাম ভৈরবচন্দ্রপুর হাই স্কুলে যাচ্ছে।”

বিমলবাবু অবশ্য এই সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, “আমার আমলে স্কুলের উন্নতিই হয়েছে।”

দেবাশিসবাবু অবশ্য স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে সেভাবে সুর চড়াচ্ছেন না। তাঁর বক্তব্য, “দেখি ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক কী করেন? ওঁদের মুখাপেক্ষী হয়েই রয়েছি।” স্কুল পরিদর্শক কৌশিকবাবুও বলছেন, “নিয়োগপত্র দেওয়ার কর্তৃত্ব স্কুল কর্তৃপক্ষের রয়েছে। আমার কিছু করার নেই। তবে বিষয়টি নজরে এসেছে। দেখছি কী করা যায়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE