Advertisement
১৬ মে ২০২৪
কৃষ্ণগঞ্জ উপনির্বাচন

ঘুঘড়াগাছিই পাখির চোখ সব দলের

বিরোধীদের কাছে যেটা হাতিয়ার, শাসক দল আবার সেটাকেই ঢাল হিসাবে ব্যবহার করতে চাইছে! কৃষ্ণগঞ্জ উপনির্বাচনের আগে ঘুঘড়াগাছিকেই এখন পাখির চোখ করে নিজেদের জমি শক্ত করতে চাইছে সব পক্ষ। গত ২৩ নভেম্বর কৃষ্ণগঞ্জের ঘুঘড়াগাছিতে জমি দখলকে কেন্দ্র করে দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন হয়েছিলেন অপর্ণা বাগ নামে স্থানীয় এক বধূ। গুলিতে জখম হয়েছিলেন একাদশ শ্রেণির এক পড়ুয়া-সহ আরও দু’জন মহিলা।

সুস্মিত হালদার
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:৫৪
Share: Save:

বিরোধীদের কাছে যেটা হাতিয়ার, শাসক দল আবার সেটাকেই ঢাল হিসাবে ব্যবহার করতে চাইছে!

কৃষ্ণগঞ্জ উপনির্বাচনের আগে ঘুঘড়াগাছিকেই এখন পাখির চোখ করে নিজেদের জমি শক্ত করতে চাইছে সব পক্ষ। গত ২৩ নভেম্বর কৃষ্ণগঞ্জের ঘুঘড়াগাছিতে জমি দখলকে কেন্দ্র করে দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন হয়েছিলেন অপর্ণা বাগ নামে স্থানীয় এক বধূ। গুলিতে জখম হয়েছিলেন একাদশ শ্রেণির এক পড়ুয়া-সহ আরও দু’জন মহিলা। ওই ঘটনায় তৃণমূলের স্থানীয় বেশ কয়েকজন নেতার নাম জড়িয়ে পড়ায় অস্বস্তিতে পড়ে শাসক দল। তখনও উপনির্বাচনের দিন ঘোষণা হয়নি। কিন্তু তখন থেকেই বিরোধীরা ওই ঘটনাকে সামনে রেখে ‘ঘর গোছাতে’ শুরু করেছিল।

এখন শিয়রে নির্বাচন। মাস দুয়েক আগের ওই ঘটনা এখনও তরতাজা। আর সেই ঘুঘড়াগাছিকে হাতিয়ার করে কিস্তিমাত করতে চাইছে বিজেপি, সিপিএম ও কংগ্রেস। আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি কৃষ্ণগঞ্জ বিধানসভার উপনির্বাচন। ইতিমধ্যে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া হয়ে গিয়েছে তৃণমূলের প্রার্থী সত্যজিৎ বিশ্বাস, বিজেপির প্রার্থী মানবেন্দ্রনাথ রায়, কংগ্রেস প্রার্থী নিত্যগোপাল মণ্ডল ও সিপিএমের প্রার্থী অপূর্ব বিশ্বাসের। সব দলই নিজেদের মতো করে প্রচারও শুরু করে দিয়েছে। আর সেই প্রচারের অন্যতম মুখ্য বিষয় ঘুঘড়াগাছি।

সিপিএমের দাবি, ঘুঘড়াগাছির ওই ঘটনায় সবথেকে বেশি পাশে ছিল তারাই। ঘটনার পরেই জেলা নেতৃত্বের পাশাপাশি একাধিকবার ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়েছেন রাজ্য নেতৃত্ব। সেই তালিকায় রয়েছেন বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্র, বৃন্দা কারাতের মতো নেতারা। জখমদের হাসপাতালে ভর্তি করানো, নিহতদের পরিবারকে আর্থিক সাহায্যের মতো যাবতীয় দায়িত্বভার কাঁধে তুলে নিয়েছে তারাই। সম্প্রতি ঘুঘড়াগাছিতে অপর্ণা বাগের স্মৃতিতে একটি শহিদ বেদী তৈরি করেছে সিপিএম।

সিপিএমের এক জেলা কমিটির সদস্যের কথায়, “এরপরেও অন্যরা কী করে আশা করতে পারে যে, ঘুঘড়াগাছি তাদের পাশে থাকবে!” ওই নেতার দাবি, “অপর্ণা-হত্যা শুধু ঘুঘড়াগাছিই নয়, গোটা বিধানসভাতেই এটা স্পর্শকাতর বিষয়। যেখানে বিন্দুমাত্র সুবিধা করতে পারবে না অন্যরা।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুমিত দে বলেন, “তৃণমূল যে সন্ত্রাসের রাজনীতি করে ঘুঘড়াগাছি তার অন্যতম জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত।”

একই সুর বিজেপি নেতাদের গলাতেও। ঘুঘড়াগাছির ঘটনার পরে ছুটে এসেছিলেন জয়প্রকাশ মজুমদার, শমীক ভট্টাচার্যের মতো নেতারা। গ্রামে ঢুকে তাঁরা একাধিক বার সভাও করেছেন। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ বলছেন, “বিজেপি চেষ্টার কসুর করেনি। কিন্তু তাদের থেকে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে সিপিএম।” যদিও এমন ব্যাখ্যা মানতে রাজি নন বিজেপির জেলা নেতৃত্ব। জেলা বিজেপির মুখপাত্র সৈকত সরকার বলেন, “দেখে নেবেন, আমরাই লিড দেব। কারণ সিপিএম বলে ওই এলাকায় এখন কিছু নেই। কংগ্রেসের অবস্থাও তথৈবচ। তৃণমূল তো ঘটনার পর থেকে গ্রামেই ঢুকতে পারেনি। তৃণমূলের সন্ত্রাস থেকে বাঁচতে মানুষ আমাদের সঙ্গেই থাকবেন।” সৈকতবাবুর দাবি, “ঘুঘড়াগাছির ওই ঘটনায় তৃণমূলের নেতারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে জড়িত। মিটিং, মিছিলেও আমরা এই বিষয়টি তুলে ধরছি।”

কংগ্রেসের জেলা সভাপতি অসীম সাহা বলেন, “ঘুঘড়াগাছির মানুষ তৃণমূলের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসছে। বিজেপি ও সিপিএম যে শাসক দলের বিকল্প হতে পারে না, সেটা স্থানীয় মানুষ বুঝে গিয়েছেন। আমরা নিশ্চিত ঘুঘড়াগাছি আমাদের সঙ্গেই থাকবে।”

বিরোধীদের হাতিয়ার, ঘুঘড়াগাছিকে ঢাল করে তৃণমূলের দাবি, ঘুঘড়াগাছি এখন নিজেদের ‘ভুল’ বুঝতে পেরে তৃণমূলের সঙ্গেই আছে। প্রসঙ্গত, ঘটনার পরে এক ঘুঘড়াগাছিতে রক্ষা ছিল না, দোসর ছিল লঙ্কা-লক্ষ্মণ (ঘুঘড়াগাছি কাণ্ডে ধৃত লঙ্কা ওরফে লঙ্কেশ্বর ঘোষ স্থানীয় ব্লক তৃণমূলের সভাপতি লক্ষ্মণ ঘোষচৌধুরীর ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত)। সেই সময় সব দল ঘুঘড়াগাছিতে ঢুকলেও ঢুকতে পারেনি তৃণমূল। জেলা তৃণমূলের একাংশ মেনেও নিয়েছেন যে, ঘুঘড়াগাছি তাদের ‘গলার কাঁটা’ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তার উপরে ব্লক সভাপতির নাম লঙ্কার সঙ্গে সরাসরি জড়িয়ে পড়ায় দলের কর্মীদেরও আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরেছিল। যদিও এই লক্ষ্মণবাবুকেই এই ‘যুদ্ধে’ প্রধান সৈনিক হিসাবে এগিয়ে দিয়েছে দল। তৃণমূলের জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্তের দাবি, “ঘুঘড়াগাছির ওই জমিতে যে ৫২টি পরিবার আছে, তার মধ্যে ৪১টি পরিবারই এখন আমাদের সঙ্গে। ওই পরিবারের সদস্যরা আমাদের বিভিন্ন প্রচার-কর্মসূচিতে থাকবেন। তাঁরাই আমাদের হয়ে যা বলার বলবেন।”

আর ঘুঘড়াগাছি কী বলছে? ভোটের রাজনীতি নিয়ে প্রকাশ্যে রা কাড়তে না চাইলেও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গ্রামের বাসিন্দারা বলছেন, “ওই নৃশংস ঘটনার জবাব তো দিতেই হবে। তবে রাজনীতির কারবারিরা যদি আমাদের দাবার বোড়ে ভাবেন, তাহলে তাঁরা ভুল করবেন।” আর অপর্ণার পরিবারের দাবি, “ভোটে হার-জিত যাই হোক না কেন, আমরা আর রক্ত দেখতে চাই না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

krishnaganj by-election ghugragachi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE