Advertisement
১৮ মে ২০২৪

চার লেনের সড়কে বাড়ছে দুর্ঘটনা, অবরোধও

দু’লেন থেকে চার লেন হয়েছে জাতীয় সড়ক। পাল্লা দিয়ে যেমন গতি বেড়েছে গাড়ির তেমনই বেড়েছে যানবাহনের চাপও। আর তার ফলেই উত্তরবঙ্গগামী ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে বাড়ছে দুর্ঘটনার সংখ্যাও। সেই দুর্ঘটনাকে ঘিরে আবার প্রায় প্রতিদিনই চলছে অবরোধ। তাই যাত্রীদের দুর্ভোগ আর কাটছে না। গত ২৭ মে সামশেরগঞ্জের চকসাপুরের কাছে জাতীয় সড়কের পাশেই রিকশা ভ্যানে বসেছিল ৪ শিশু।

দুর্ঘটনায় মৃত্যুর পর জাতীয় সড়ক অবরোধ রঘুনাথগঞ্জের অজগরপাড়ায়। —নিজস্ব চিত্র।

দুর্ঘটনায় মৃত্যুর পর জাতীয় সড়ক অবরোধ রঘুনাথগঞ্জের অজগরপাড়ায়। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রঘুনাথগঞ্জ শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০১৪ ০৪:১০
Share: Save:

দু’লেন থেকে চার লেন হয়েছে জাতীয় সড়ক। পাল্লা দিয়ে যেমন গতি বেড়েছে গাড়ির তেমনই বেড়েছে যানবাহনের চাপও। আর তার ফলেই উত্তরবঙ্গগামী ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে বাড়ছে দুর্ঘটনার সংখ্যাও। সেই দুর্ঘটনাকে ঘিরে আবার প্রায় প্রতিদিনই চলছে অবরোধ। তাই যাত্রীদের দুর্ভোগ আর কাটছে না।

গত ২৭ মে সামশেরগঞ্জের চকসাপুরের কাছে জাতীয় সড়কের পাশেই রিকশা ভ্যানে বসেছিল ৪ শিশু। একটি গাড়ির সঙ্গে সেই রিকশা ভ্যানের ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ৮ ও ১০ বছরের দুই শিশুর। ৩ জুন রঘুনাথগঞ্জ থানার উমরপুর থেকে রিকশা ভ্যানে করে ফিরছিলেন কয়েকজন যাত্রী। লরির সঙ্গে ধাক্কায় তালাই মোড়ের কাছে মারা যান ৩ জনই। ১৬ জুন সাত সকালে লরির ধাক্কায় একাদশ শ্রেণির এক স্কুল ছাত্রের ঘটনাস্থলেই মৃত্যু ঘটে। সোমবার ভোরে সাগরদিঘির রতনপুর থেকে রাতের ডিউটি সেরে পাশের গ্রাম রসবেলুড়িয়ায় বাড়ি ফিরছিলেন বিপ্লব মন্ডল (২৭) নামে এক সিভিক পুলিশের কর্মী। লরির ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর। জুন মাসের তিন সপ্তাহে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে ১১ জনের মৃত্যু ঘটেছে বাস বা লরির ধাক্কায়। এ বছরের ৬ মাসে শুধুমাত্র জঙ্গিপুর মহকুমার ৫টি থানা এলাকা দিয়ে যাওয়া ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৯১টি। আর মৃত্যু হয়েছে ৮২ জনের। এই দুর্ঘটনার জেরে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই উত্তেজিত জনতা জাতীয় সড়ক অবরোধ করেছে। ফলে দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে যাত্রীদের। নাকাল হতে হয়েছে নিত্যযাত্রীদের। দূরপাল্লার বাসের যাত্রীদের রাস্তায় অপেক্ষা করতে হয়েছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা।

মুর্শিদাবাদ জেলার মানুষ মাত্রই ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক নিয়ে দুর্ভোগের কবলে পড়ার তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে। একসময় ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক বলতে ফুটে উঠত ভয়াবহ চিত্র। জঙ্গিপুরের সাংসদ হিসেবে বারবার ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের দুরবস্থা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। মুর্শিদাবাদ থেকে কলকাতায় ফেরার পথে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে দুর্ঘটনায় পড়তে হয়েছে প্রণববাবুকেও। সেই প্রণববাবুরই চেষ্টায় ২০১০ সালের ১০ অক্টোবর শুরু হয়েছিল ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ককে চার লেনে উন্নীত করার কাজ। ৪৪৪ কিলোমিটার সড়কপথের মধ্যে সে কাজ আপাতত শেষ হয়েছে ফরাক্কা থেকে বহরমপুরের শিবপুর পর্যন্ত মাত্র ১০০ কিলোমিটারের।

ওই অংশে সড়কের হাল আমুল বদলে গিয়েছে। চার লেনের সড়ক বেয়ে অন্তত ফরাক্কা থেকে বহরমপুর যাতায়াত অনেকটাই সহজ হয়েছে। উত্তরবঙ্গের সঙ্গে দক্ষিণবঙ্গের সড়ক পথে যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক। মালদহ , শিলিগুড়ি, নেপাল, ভুটান, এমনকী বাংলাদেশে পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রেও এই সড়ক পথ প্রধান অবলম্বন। ফলে সঙ্কীর্ণ এই সড়ক পথে দুর্ঘটনা বাড়ছিল। ২০১০ সালের একটি হিসেবে দেখা গিয়েছে, সে বছর ফরাক্কা থেকে বহরমপুর পর্যন্ত এই সড়ক পথে ১৬২ জনের দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে। গত তিন বছরে এই মৃত্যুর সংখ্যাটা ১৬৭, ১৭৪ ও ১৭৮। ফলে বারবারই অভিযোগ তুলে সোচ্চার হয়েছিল সব রাজনৈতিক দলই। দাবি ছিল চার লেনের সড়কের। কেন্দ্রীয় জাতীয় সড়ক পরিবহণ দফতরের হিসেবে, দুই লেনের ওই সড়ক পথে ২০১০ সালের হিসেবে যানবাহন যাতায়াত করত দৈনিক গড়ে ৪৫৮৬টি। ২০১৪ সালে চার লেনের এই সড়কে তা বেড়ে হওয়ার কথা ৫৭২৯। ২০৩০ সালে তা ১৫ হাজারে দাঁড়াবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

শুধু যানবাহনের সংখ্যা বেড়েছে তাই নয়, গতি বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। ফলে দুর্ঘটনা বাড়ছে। পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর অবশ্য গতি বৃদ্ধিকে দুর্ঘটনা বৃদ্ধির কারণ বলে মনে করেন না। তাঁর মতে, “গতি বাড়লে দেশের জ্বালানি সম্পদ অনেক বাঁচবে। যাতায়াতের সময় কমবে। কিন্তু সমস্যা হল, ওই সড়ক পথের দু’পাশে প্রচুর সংখ্যায় জনবসতি রয়েছে। চার লেনের ওই সড়কে কোথাও আন্ডারপাস, কোথাও বাইপাস, সেতু, রেল সেতু তৈরি হওয়ার কথা। কিন্তু এখনও সে সব তৈরি হয়নি।” সেই সঙ্গে তাঁর বক্তব্য, এই সড়ক পথ দিয়ে পারাপার হওয়া বা যাতায়াত করার মতো সচেতনতা এখনও সেভাবে গড়ে ওঠেনি। তা ছাড়া বিভিন্ন ছোট যানবাহন ট্রাফিক রুল না মেনে চার লেনে ঢুকে পড়ছে। ফলে দুর্ঘটনা ঘটছে। তাঁর আশা, ধীরে ধীরে অভ্যস্থ হয়ে গেলে দুর্ঘটনার হার অনেকটাই কমে যাবে। মঙ্গলবারই এ নিয়ে জেলার পুলিশ অফিসারদের নিয়ে বৈঠক ডাকা হয়েছে। তিনি জানান, ওই সড়ক পথের পাশে যে সব গ্রাম রয়েছে, সেগুলিতে সিভিক পুলিশের ট্রাফিক দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। সামশেরগঞ্জ, সুতি ও ফরাক্কার ঘন জনবসতি পুর্ণ মোড়গুলিতে, তাতে দুর্ঘটনা হয়তো কিছুটা কমানো যাবে। জঙ্গিপুরের সাংসদ অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়ের সংসদীয় এলাকার মধ্যেই পড়ে এই জাতীয় সড়কের বিরাট অংশ। তিনি বলেন, “এই জাতীয় সড়কই ছিল মুর্শিদাবাদের উন্নয়নের পথে অন্যতম প্রধান বাধা। যাতায়াতের গতি বাড়লে সর্বস্তরে গতি বাড়বে। সময় ও খরচ দুই-ই বাঁচবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

raghunathganj blockade accident four lane road
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE