Advertisement
১১ মে ২০২৪

জলের সঙ্কট চরমে, তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ পঞ্চায়েতে

ভরা চৈত্রে জলের সঙ্কট ক্রমশ বাড়ছে। জলস্তর নেমে যাওয়ায় অকেজো হয়ে যাচ্ছে নলকূপগুলি। পঞ্চায়েত-প্রশাসনে জানিয়েও সুরাহা না হওয়ায় ক্ষোভ বাড়ছে। বৃহস্পতিবার সেই ক্ষোভেই মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জের মির্জাপুর গ্রামের কয়েকশো বাসিন্দা পঞ্চায়েত অফিসে দিনভর তালা ঝুলিয়ে রাখলেন। দুর্ব্যবহারের অভিযোগে পঞ্চায়েতের এক মহিলাকর্মীকে হেনস্থা করলেন বিক্ষুব্ধরা। পুলিশ এসে তাঁকে রক্ষা করে। তবে উত্তেজিত জনতাকে সামলাতে রীতিমতো কালঘাম ছোটে পুলিশের।

মির্জাপুরে বিক্ষোভ সামলাচ্ছে পুলিশ। নিজস্ব চিত্র।

মির্জাপুরে বিক্ষোভ সামলাচ্ছে পুলিশ। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রঘুনাথগঞ্জ শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০১৪ ০০:৩২
Share: Save:

ভরা চৈত্রে জলের সঙ্কট ক্রমশ বাড়ছে। জলস্তর নেমে যাওয়ায় অকেজো হয়ে যাচ্ছে নলকূপগুলি। পঞ্চায়েত-প্রশাসনে জানিয়েও সুরাহা না হওয়ায় ক্ষোভ বাড়ছে। বৃহস্পতিবার সেই ক্ষোভেই মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জের মির্জাপুর গ্রামের কয়েকশো বাসিন্দা পঞ্চায়েত অফিসে দিনভর তালা ঝুলিয়ে রাখলেন। দুর্ব্যবহারের অভিযোগে পঞ্চায়েতের এক মহিলাকর্মীকে হেনস্থা করলেন বিক্ষুব্ধরা। পুলিশ এসে তাঁকে রক্ষা করে। তবে উত্তেজিত জনতাকে সামলাতে রীতিমতো কালঘাম ছোটে পুলিশের।

গরম পড়তেই মির্জাপুর পঞ্চায়েতের বোধপুর, সাদিকপুর, জগন্নাথপুর, বাইন্ধাপাড়া, বিজয়পুর, আমগাছি, বাছুরাইল, নওদা-সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় পানীয় জলের সঙ্কট শুরু হয়েছে। জলস্তর নেমে যাওয়ায় গ্রামের নলকূপগুলিতেও জল উঠছে না আর। এলাকায় রাজ্যের জনস্বাস্থ্য কারিগরী দফতরের জল সরবরাহের পাইপ লাইন থাকলেও তা থেকে নিয়মিত জল পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ। এমনিতে দিনে তিন বার মাত্র জল আসে। তা-ও বাড়ি বাড়ি জল সরবরাহের ব্যবস্থা নেই। রাস্তার ধারে ট্যাপকল। অভিযোগ, আশপাশের বাড়ির লোকজল পাইপের সঙ্গে সংযোগ করে অবৈধ ভাবে জল টেনে নিচ্ছে। ফলে ট্যাপকলে জল মিলছে না সব সময়। জনস্বাস্থ্য দফতরের কাউকে না পেয়ে ক্ষোভটা গিয়ে পড়েছে পঞ্চায়েতের উপর।

বুধবার দুপুরে জল নিয়ে এক দফা বিক্ষোভ দেখিয়ে পঞ্চায়েত কর্মীদের অফিস থেকে বের করে দিয়ে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছিলেন মহিলারা। বিক্ষোভ দেখানোর জন্য জমায়েতের ডাক দিয়ে মাইকে প্রচারও করেছিলেন একাংশ গ্রামবাসী। সেই মতো বৃহস্পতিবার সকালে কয়েকশো মানুষ চড়াও হন পঞ্চায়েতে। বিক্ষুব্ধ স্বপন দাস বলেন, “এলাকার আশপাশের মাঠে সেচের জন্য গভীর নলকূপ বসানো হয়েছে প্রচুর সংখ্যায়। ফলে জলস্তর নেমে গিয়েছে। গ্রামের পানীয় জলের সরকারি নলকূপ আর কাজ করছে না। পাইপ লাইনের মাধ্যমে জল সরবরাহের ব্যবস্থা রয়েছে সড়ক পথের ধারে। সেখান থেকেই জল বয়ে নিয়ে যেতে হয় গ্রামবাসীদের। কিন্তু কিছু গ্রামবাসী সেই পাইপ লাইন থেকে বেআইনি ভাবে বাড়িতে লাইন টেনে নেওয়ায় সকলে জল পাচ্ছে না। জল না পেয়ে মরার অবস্থা আমাদের।”

মির্জাপুর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা করবী সরকার আবার জানান, জল-সঙ্কটে স্কুলে ছুটি দিয়ে দিয়েছেন তিনি। সিপিএমের পঞ্চায়েত প্রধান সৌমি কাদিয়া তীব্র জলকষ্টের কথা স্বীকার করে বলেন, “এলাকার বহু বাড়িতে বেআইনি ভাবে সাব-মার্সিবল পাম্প বসিয়ে জল তোলা হচ্ছে। পাশেই সিমেন্ট কারখানার জন্য বসানো হয়েছে কয়েক ডজন গভীর নলকূপ। ফলে গ্রামের নলকূপে জল উঠছে না। পাইপ লাইনেও জল মিলছে না নিয়মিত। সবই জানি। কিন্তু আমাদের কিছু করার নেই।”

মির্জাপুর এলাকার এই জল-সঙ্কটের কথা এখনও জানেন না জেলার জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের সহকারী বাস্তুকার কাজল সরকার। তিনি বলেন, “ওখানে পাইপের মাধ্যমে জল সরবরাহের ব্যবস্থাটি পুরনো। রঘুনাথগঞ্জ শহর থেকে নতুন একটি আর্সেনিক মুক্ত পানীয় জল সরবরাহ ব্যবস্থা চালু হয়েছে। মির্জাপুর এলাকার বেশ কয়েকটি গ্রামে জল সরবরাহ শুরু হয়ে গিয়েছে জানি।” নতুন প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত বেসরকারি ঠিকাদার সংস্থার আধিকারিক সহদেব মহাপাত্র অবশ্য জানান, ভালভ চুরি হয়ে যাওয়ার কারণে এখনও মির্জাপুরে জল সরবরাহ ব্যবস্থা চালু করে উঠতে পারেননি তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

raghunathgunj water-crisis
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE