Advertisement
১৭ মে ২০২৪

ঝড়ে পড়া গাছ নিয়ে বিপাকে প্রাথমিক স্কুল

ঝড়ে উপড়ে গিয়েছে মূল্যবান গাছ। সেই গাছ সরানো হবে কী করে, তা নিয়েই বিপাকে ধোড়াদহ নিম্ন বুনিয়াদি বিদ্যালয় । স্কুল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, গত তিন দিন সরকারি দফতরে বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ জানিয়েছেন। কিন্তু প্রশাসনিক স্তরে চলছে দায় এড়ানোর পালা। প্রতিদিন চুরি হয়ে যাচ্ছে মূল্যবান ওই গাছগুলির ডালপালা। ভ্রূক্ষেপ নেই প্রশাসনের। করিমপুর ২ ব্লকের ধোড়াদহ ১ পঞ্চায়েত অফিসের পিছনে প্রায় বাইশ বিঘা জমির উপর ধোড়াদহ নিম্ন বুনিয়াদি বিদ্যালয়। ছাত্র ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় দেড়শো।

স্কুল চত্বরে ভেঙে পড়া গাছ। —নিজস্ব চিত্র।

স্কুল চত্বরে ভেঙে পড়া গাছ। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
করিমপুর শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০১৪ ০০:৩২
Share: Save:

ঝড়ে উপড়ে গিয়েছে মূল্যবান গাছ। সেই গাছ সরানো হবে কী করে, তা নিয়েই বিপাকে ধোড়াদহ নিম্ন বুনিয়াদি বিদ্যালয় । স্কুল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, গত তিন দিন সরকারি দফতরে বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ জানিয়েছেন। কিন্তু প্রশাসনিক স্তরে চলছে দায় এড়ানোর পালা। প্রতিদিন চুরি হয়ে যাচ্ছে মূল্যবান ওই গাছগুলির ডালপালা। ভ্রূক্ষেপ নেই প্রশাসনের।

করিমপুর ২ ব্লকের ধোড়াদহ ১ পঞ্চায়েত অফিসের পিছনে প্রায় বাইশ বিঘা জমির উপর ধোড়াদহ নিম্ন বুনিয়াদি বিদ্যালয়। ছাত্র ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় দেড়শো। শিক্ষক শিক্ষিকা আছেন তিন জন। রয়েছে বহু সেগুন ও শিশু গাছ। সোমবারের ঝড়ে ১১ টি গাছ উপড়েছে। তারপর থেকে অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে মূল্যবান গাছগুলি।

স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা সীমা সরকার বিশ্বাস বলেন, “মঙ্গলবার সকালে আমি গাছ ভাঙার খবর পেয়েই স্কুলে ছুটে আসি। তারপর প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে দরবার করেছি। কোনও লাভ হয়নি। স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য, উপপ্রধান, পঞ্চায়েতের এক্সিকিউটিভ অ্যাসিস্ট্যান্ট সকলেই বিষয়টি সম্পর্কে অবগত।”

সীমাদেবী জানান স্কুলের তরফে প্রথমে করিমপুর নতুন চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শককে (এসআই) বিষয়টি জানান হয়। তিনি সাফ জানিয়ে দেন, তাঁর এক্তিয়ার নয়। জানাতে হবে বিডিও। বিডিওকে জানাতে গেলে তিনি স্কুল কর্তৃপক্ষকে বলেন, ভেঙে পড়া গাছগুলি স্কুল চত্বরে রয়েছে তাই দায়িত্ব স্কুলের। খবর দেওয়া হয় নদিয়া জেলা প্রশাসনে। আস্বস্ত করে প্রশাসন জানায়, আলোচনা করে গাছগুলি নিলামে বিক্রির ব্যবস্থা করা হবে। জেলাশাসক নিজেও উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। কিন্তু তিনদিন পরেও কোনও ব্যবস্থা হয়নি।

সমস্যায় স্কুল কর্তৃপক্ষ। সারাদিন স্কুলে বসে গাছ পাহারা দেওয়া সম্ভব নয়। তাছাড়া রাতের অন্ধকারে যে কোনও দিন গাছ চুরি করে হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা শিক্ষিকাদের। বুধবার গাছগুলির ব্যবস্থা করার জন্য লিখিত আবেদন নিয়ে ফের একবার করিমপুর নতুন চক্রের এসআইয়ের কাছে গেলে তিনি সেই আবেদনপত্র গ্রহণ না করে প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করার পরামর্শ দেন। বিডিওকে আবেদনপত্র জমা দিতে গেলে তিনিও তা নিতে অস্বীকার করেন। সীমাদেবী বলেন, “উল্টে তিনি আমাকে বলেন, দরখাস্ত জমা নেওয়া মানেই গাছের দায়িত্ব তাঁর উপর গিয়ে পড়বে। ওই দায়িত্ব তিনি নিতে পারবেন না। বিডিও স্পষ্ট বলেন কোনও গাছ হারালে সে দায়িত্ব নাকি আমার।” সীমাদেবীর অভিযোগ থানায় জানানোর প্রসঙ্গে বিডিও বলেন, “পুলিশের আর কাজ নেই আপনাদের ভাঙা গাছ পাহারা দেবে।”

স্কুলের সহ শিক্ষক হিমাদ্রি বিশ্বাস বলেন, মঙ্গলবার পঞ্চায়েত দু’দিনের জন্য পাহারার বসিয়েছিল। বৃহস্পতিবার থেকে আবার সমস্যায় পড়েছেন তাঁরা। ‘অন্য কোনও জিনিস হলে স্কুলের ঘরে তুলে গুছিয়ে রাখা যেত। কিন্তু গাছ রাখব কোথায়। অত দামী গাছ কাটলেও তো আইনি ঝামেলায় পড়তে হবে’ আশঙ্কা প্রকাশ করেন হিমাদ্রিবাবু। মঙ্গলবার থেকে প্রশাসনের নানা স্তরে তাঁদের ঘোরান হচ্ছে। সকলেই নিজেদের ঘাড় থেকে দায়িত্ব ঝেড়ে ফেলতে চাইছেন বলে অভিযোগ। বিদ্যালয়ের আর এক শিক্ষক সুভাষ প্রামাণিক বলেন, “বৃহস্পতিবার বন দফতরকেও জানান হয় বিষয়টি। তারা পুলিস সুপারকে জানাতে বলেন। পুলিস সুপার বলেন এসডিপিও কে জানাতে। এসডিপিও বলেন এটা আমাদের কাজ নয় এসডিও কে বলুন। আমরা এখন এই গাছ নিয়ে কি করবো সেটাই বুঝতে পারছি না।”

করিমপুর নতুন চক্রের এসআই মহম্মদ গিয়াসুদ্দিন বলেন, “বিষয়টি লিখিতভাবে আমাদের জেলা চেয়ারম্যানকে জানাতে বলেছি। আমি নিজেও চেয়ারম্যানকে জানিয়েছি। যা ব্যবস্থা নেওয়ার উনিই নেবেন।” করিমপুর ২ বিডিও তাপস কুণ্ডু বলেন, যে কোনও স্কুলের গাছ কাটা বা তার ব্যবস্থা করায় আমার অধিকার নেই। ওই বিষয়টি দেখার দায়িত্ব জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যানের। তবুও আমি আমার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তারাই যা করার করবে।

তেহট্টের মহকুমা শাসক অর্ণব চট্টোপাধ্যায় বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি। নদিয়ার জেলাশাসক পি বি সালিম জানান, “ঘটনার কথা জেনেছি। মহকুমা শাসককে জানাচ্ছি। প্রশাসন খুব তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা করবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE