Advertisement
E-Paper

টোটো কোম্পানি নিয়ে নাজেহাল নবদ্বীপ

শুরুতে যাকে মুশকিল আসান বলে মনে করেছিলেন শহরের মানুষ, সেই টোটোকে ঘিরেই এখন নিত্যনতুন সমস্যা দেখা দিচ্ছে নবদ্বীপের পথে। প্রাচীন এই শহরের ঘিঞ্জি পথে মাস আটেক আগে যখন ব্যাটারি চালিত নতুন ধরনের রিকশা প্রথম চলতে শুরু করেছিল, তখন টোটো বা টুকটুক নামের সেই নতুন রিকশাকে নিয়ে মানুষের খুশির সীমা ছিল না। শহরের একমাত্র ‘জন’ বা ‘গণ’ যান, প্রবল প্রতাপশালী রিকশার পরিবর্ত হিসেবেই মানুষ টোটোকে দ্রুত কাছে টেনে নিয়েছিলেন।

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:১২

শুরুতে যাকে মুশকিল আসান বলে মনে করেছিলেন শহরের মানুষ, সেই টোটোকে ঘিরেই এখন নিত্যনতুন সমস্যা দেখা দিচ্ছে নবদ্বীপের পথে। প্রাচীন এই শহরের ঘিঞ্জি পথে মাস আটেক আগে যখন ব্যাটারি চালিত নতুন ধরনের রিকশা প্রথম চলতে শুরু করেছিল, তখন টোটো বা টুকটুক নামের সেই নতুন রিকশাকে নিয়ে মানুষের খুশির সীমা ছিল না। শহরের একমাত্র ‘জন’ বা ‘গণ’ যান, প্রবল প্রতাপশালী রিকশার পরিবর্ত হিসেবেই মানুষ টোটোকে দ্রুত কাছে টেনে নিয়েছিলেন। প্রবল জন সমর্থন পেয়ে শহরে প্রায় প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে টোটোর সংখ্যাও। আর এই নিয়ন্ত্রণহীন সংখ্যা বৃদ্ধির নিট ফল, নবদ্বীপের সঙ্কীর্ণ রাস্তা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দমবন্ধ যানজটে। নবদ্বীপে যানজট যে আগে হত না এমন নয়। কিন্তু সে সব জট সাধারণত পোড়ামাতলা, বাজার রোড, ঢপওয়ালীর মোড়, বউবাজারের মতো বিশেষ কিছু জনবহুল রাস্তায় দিনের বিশেষ সময়ে হত। সর্বত্রগামী টোটোর কারণে এখন শহরের আর কোনও রাস্তাই যানজটের কবল মুক্ত নয়।

চৈতন্যধাম নবদ্বীপ পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত পরিচিত একটি গন্তব্য। অথচ যে কোনও পুরনো শহরের মতো নবদ্বীপও কোনও পরিকল্পনা ছাড়া এলোমেলো ভাবে বেড়ে উঠেছে। হাজার বছরের প্রাচীন এই নগরের মানচিত্র গত তিনশো বছরে বার বার বদলে গিয়েছে বিধ্বংসী নদী ভাঙনে। শহর নবদ্বীপের এখনকার অবস্থান গঙ্গার পশ্চিম পাড়ে হলেও, সুদূর অতীতে বিভিন্ন সময়ে গঙ্গা কখনও নবদ্বীপের উত্তরে, আবার কখনও পশ্চিমে প্রবাহিত হয়েছে। যার ফলে শহরের মূল ভূখণ্ডের অনেকটা অংশ চলে গিয়েছে নদীগর্ভে। জন বিস্ফোরণের চাপে বেশিরভাগ শহর যখন সম্প্রসারিত হতে চাইছে, তখন রাজ্যের তৃতীয় ঘনবসতিপূর্ণ শহর নবদ্বীপের আয়তন বৃদ্ধির কোনও উপায় নেই। ১১.২৫ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের নবদ্বীপের উত্তর এবং পূর্ব দিক গঙ্গা দিয়ে ঘেরা। দক্ষিণ এবং পশ্চিম দিকে ব্যান্ডেল-কাটোয়া রেল লাইন। রেল লাইনের ওপারে বর্ধমান জেলা। ফলে শহর নবদ্বীপের আয়তন বৃদ্ধির কোনও উপায় নেই। যে কারণে শহরে নতুন রাস্তা তৈরিও সম্ভব নয়। এখন শহরে সাকুল্যে ৫৭ কিমি রাস্তা টোটো জাতীয় যান চলাচলের উপযুক্ত। এ দিকে শহরের রাস্তাঘাট না বাড়লেও যানবাহন বেড়েছে অনেক বেশি।

গত বছর দোল উৎসবের সময় নবদ্বীপের যান-চিত্রে লেগেছিল বদলের রং। শহরের পথে প্রথম দেখা মিলেছিল ব্যাটারিচালিত রিকশার। রিকশা নিয়ে বীতশ্রদ্ধ মানুষ দূষণহীন ব্যাটারিচালিত রঙিন রিকশাকে প্রথম দর্শনেই পছন্দ করেছিলেন। অন্যদিকে শহরের কিছু মানুষের কাছে ‘টোটো’ বা ‘টুকটুক’ হয়ে উঠল রোজগারের এক নতুন পথ। রোজগার হারানোর ভয়ে ভীত হয়ে প্রথম দিকে টোটো বা টুকটুক ঠেকাতে মাঠে নেমে পড়েছিলেন সাধারণ রিকশা চালকরা। কিন্তু ব্যাটারি-রিকশার গতি ঠেকানো যায়নি। বরং বিষয়টি বুঝতে পেরে তাঁরা নিজেরাই ঝুঁকেছেন টোটোর দিকে। ফলে বছর ঘুরতে না ঘুরতেই নবদ্বীপের রাস্তায় প্রতিদিন সাড়ে পাঁচশো থেকে ছ’শো ব্যাটারিচালিত রিকশা চলছে।

শহরের নতুন সমস্যার শুরু ঠিক এখান থেকেই। যে কেউ ব্যাটারি-রিকশা কিনে পথে নেমে পড়েছেন। চালকদের অধিকাংশের শহরের রাস্তায় সাইকেল ছাড়া অন্য যানবাহন চালানোর অভিজ্ঞতা নেই। জানা নেই ট্রাফিক আইন। ফলে রাস্তায় নাস্তানাবুদ হচ্ছেন চালক ও পথচারী সকলেই। নবদ্বীপ শ্রীচৈতন্য টোটো চালক সমিতির সম্পাদক সঞ্জীবকুমার দেবনাথ বলেন, “এখন সবার আগে দরকার শহরে টোটো গাড়ির সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা। আমাদের ইউনিয়নে রয়েছে ৩৫০টি টোটো। অথচ শহরের পথে রোজ গড়ে ছ’শো টোটো চলছে। নদিয়া ও বর্ধমান থেকে প্রচুর টোটো ঢুকছে। পঞ্চায়েত এলাকার টোটো ঠেকাতে না পারলে সমস্যা দিনে দিনে আরও বাড়বে।”

নবদ্বীপ শহরে প্রথম টোটো এনেছিলেন কৃষ্ণগোপাল ভৌমিক। তাঁর বেশ কয়েকটি টোটো নবদ্বীপে চলে। তিনি বলেন, “যদি নবদ্বীপের কিছু টোটো মায়াপুরে চালানোর ব্যবস্থা করা যায় তাহলে শহরের যানজট যেমন কমে, তেমনই যাঁরা চালাচ্ছেন তাঁদের উপার্জনও অনেক বেড়ে যাবে।” যানজটে অবরুদ্ধ শহরকে মুক্ত করতে প্রশাসন কী ভাবছে? নবদ্বীপের আইসি তপনকুমার মিশ্র বলেন, “গোটা শহরের যানবাহন চলাচলে বড়সড় বদল ঘটতে চলেছে। বেশিরভাগ গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা একমুখী করার কথা ভাবা হচ্ছে। চলতি পর্যটন মরসুম থেকেই শহর যানজট মুক্ত করার ব্যাপারে চেষ্টা চলছে।”

এই অবস্থায় টোটোকে লাইসেন্স দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নবদ্বীপ পুরসভা। নবদ্বীপের পুরপ্রধান বিমানকৃষ্ণ সাহা বলেন, “নবদ্বীপের মতো একটা আন্তর্জাতিক মাপের পর্যটনকেন্দ্র শুধুমাত্র রিকশা সর্বস্ব হতে পারে না। সব দিক বিবেচনা করে পুরসভার বোর্ড অফ কাউন্সিলরের বৈঠকে ব্যাটারিচালিত রিকশাকে লাইসেন্স দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জানুয়ারি থেকেই লাইসেন্স দেওয়া হবে।” লাইসেন্স দেওয়ার সময় বেশ কিছু শর্তও আরোপ করছে তৃণমূল পরিচালিত পুরসভা। যার মধ্যে নীল-সাদায় টোটো রাঙানো নিয়ে রসিকতাও শুরু হয়েছে শহরে।

কেমন লাগছে আমার শহর?
নিজের শহর নিয়ে আরও কিছু বলার থাকলে আমাদের জানান।
ই-মেল পাঠান district@abp.in-এ। subject-এ লিখুন ‘আমার শহর-নদিয়া মুর্শিদাবাদ’।
ফেসবুকে প্রতিক্রিয়া জানান: www.facebook.com/anandabazar.abp
অথবা চিঠি পাঠান ‘আমার শহর’, নদিয়া মুর্শিদাবাদ বিভাগ, জেলা দফতর
আনন্দবাজার পত্রিকা, ৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা ৭০০০০১

amar shohor toto nabadwip debashis banyopadhyay
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy