Advertisement
০২ মে ২০২৪

তিন মাস বন্ধ পঞ্চায়েত অফিস, হয়রানি রোজনামচা নারায়ণপুরের

তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে পঞ্চায়েত ভবন তালাবন্ধ। প্রায় দু’মাস হল কোনও প্রধান নেই। তাই ছেলেমেয়ের বার্থ সার্টিফিকেট বা ভোটার তালিকায় নাম তোলা সব ব্যাপারেই দৌড়তে হচ্ছে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে বিডিও অফিসে। সেখানেই বসেছে অস্থায়ী পঞ্চায়েত অফিস। কাজ সেরে বাড়ি ফিরতে দিন কাবার হয়ে যায়। অথচ মানুষের ভোগান্তি রুখতে পঞ্চায়েত ভবন খোলার জন্য কোনও হোলদোল নেই প্রশাসনের। যা নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে করিমপুর-২ ব্লকের নারায়ণপুর-১ পঞ্চায়েতের বাসিন্দাদের মধ্যে।

এ ভাবেই পড়ে রয়েছে অ্যাম্বুল্যান্স। —নিজস্ব চিত্র

এ ভাবেই পড়ে রয়েছে অ্যাম্বুল্যান্স। —নিজস্ব চিত্র

কল্লোল প্রামাণিক
করিমপুর শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০১৪ ০০:২৫
Share: Save:

তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে পঞ্চায়েত ভবন তালাবন্ধ। প্রায় দু’মাস হল কোনও প্রধান নেই। তাই ছেলেমেয়ের বার্থ সার্টিফিকেট বা ভোটার তালিকায় নাম তোলা সব ব্যাপারেই দৌড়তে হচ্ছে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে বিডিও অফিসে। সেখানেই বসেছে অস্থায়ী পঞ্চায়েত অফিস। কাজ সেরে বাড়ি ফিরতে দিন কাবার হয়ে যায়। অথচ মানুষের ভোগান্তি রুখতে পঞ্চায়েত ভবন খোলার জন্য কোনও হোলদোল নেই প্রশাসনের। যা নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে করিমপুর-২ ব্লকের নারায়ণপুর-১ পঞ্চায়েতের বাসিন্দাদের মধ্যে।

চলতি বছরের ২৭ জুন বিকেলে কৃষ্ণনগর আদালত থেকে বাড়ি ফেরার পথে দুষ্কৃতীদের হাতে খুন হন স্থানীয় তৃণমূল নেতা আনিসুর রহমান। তার আধ ঘণ্টার মধ্যে পঞ্চায়েত ভবনের মধ্যেই দুষ্কৃতীদের হাতে খুন হন সিপিএম সদস্য আব্দুল হক শেখ। সেই দিনই প্রশাসন নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে পঞ্চায়েতের গেটে তালা ঝুলিয়ে দেন। তারপর থেকেই বন্ধ রয়েছে পঞ্চায়েত অফিস। যাবতীয় ফাইল, কাগজপত্র ও কম্পিউটার নিয়ে যাওয়া হয়েছে প্রায় কুড়ি কিমি দূরের ব্লক অফিসে। সেখানেই একটি ঘরে অস্থায়ীভাবে কর্মচারীরা পঞ্চায়েতের কাজ সারছেন। এ দিকে পঞ্চায়েত বন্ধ থাকায় ছোটখাটো দরকারেও দৌড়তে হচ্ছে বিডিও অফিসে। যা নিয়ে ক্ষোভের অন্ত নেই স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে।

স্থানীয় ও পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে, পঞ্চায়েতের নির্বাচনে নারায়ণপুর-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের মোট ১৫টি আসনের মধ্যে ৮টি আসনে সিপিএম ও ৭টি আসনে জিতেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। সংখ্যাগরিষ্ঠ সিপিএম বোর্ড গঠন করে। প্রধান নির্বাচিত হন সিপিএমের আলতাফন বিবি এবং উপ-প্রধান হন পাপিয়া খাতুন। কিন্তু বোর্ড গঠনের বছর দুয়েকের মধ্যেই মৃত্যু হয় সিপিএম সদস্য রঞ্জিত্‌ মিস্ত্রির। চলতি বছরের গত ৩০ মে মারা যান তৃণমূল সদস্যা নুরনাহার খাতুন। এর ফলে দুই দলেরই সদস্য সংখ্যা ছয়ে গিয়ে পৌঁছয়। ইতিমধ্যে সিপিএমের এক সদস্য আমিনুল সরকার প্রধানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তৃণমূলের ছয় সদস্যের সঙ্গে প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবে সই করেন। সেই অনাস্থা প্রস্তাব ২০ অগস্ট বিডিওর কাছে জমা দেওয়া হয়। ৪ সেপ্টেম্বর তারিখে সেই অনাস্থা ভোটে তৃণমূল ৭-০ ব্যবধানে জয় লাভ করে। তারপরেও প্রশাসন এ পর্যন্ত প্রধান নির্বাচন করেনি।

হাগনাগাড়ির বাসিন্দা জাকেরা বিবি বলেন, “ছেলের রেসিডেন্সিয়াল সার্টিফিকেট আনতে বিডিও অফিসে দৌড়তে হচ্ছে। আমাদের মতো খেটে খাওয়া মানুষের সারা দিন নষ্ট করে সামান্য কাজের জন্য অতদূর যাওয়া সম্ভব?” নারায়ণপুরের প্রশান্ত দে বলেন, “কোনও রোগী ভর্তির জন্য প্রয়োজনীয় নাগরিক সার্টিফিকেট বা কখনও মৃত্যু সার্টিফিকেট নিতে যেতে হচ্ছে ব্লক অফিসে।”

এলাকার অসুস্থ রোগী বা প্রসূতিদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে যে অ্যাম্বুল্যান্স ব্যবহার করা হত তাও ওই পঞ্চায়েত অফিসের মধ্যেই পড়ে রয়েছে। তার ফলে বিপদে আপদে হাতের কাছে অ্যাম্বুল্যান্স থাকা সত্ত্বেও তা পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানালেন নারায়ণবাবু।

পঞ্চায়েত ভবনের মধ্যেই ভূমি দফতরের আরআই অফিস। পঞ্চায়েত বন্ধ থাকার কারণে জমি সংক্রান্ত সকল কাজ পড়ে রয়েছে। মহিষবাথানের ব্লক অফিসে গিয়ে তা করার সময় মিলছে না। তাই এ ভাবে আর কত দিন ভুগতে হবে প্রশ্ন বাসিন্দদের।

পঞ্চায়েতের সদস্য সিপিএমের ফাজিলনগরের বাসিন্দা হাসান মণ্ডল বলেন, “পঞ্চায়েতের কাজ ব্যাহত হচ্ছে। এর মধ্যে একশো দিনের বা বনসৃজনের কোনও কাজ হয়নি। এলাকার উন্নয়ন স্তব্ধ হয়ে রয়েছে। সিপিএমের পক্ষ থেকে বিডিও, এসডিও ও ডিএমকে বারবার বলেছি যে, প্রধান নির্বাচন আইন মাফিক যেদিন হয় হোক। কিন্তু সাধারণ মানুষের অসুবিধার কথা ভেবে তাড়াতাড়ি পঞ্চায়েত অফিস খোলার ব্যবস্থা করুন। তবুও আজ পর্যন্ত পঞ্চায়েত অফিস খুলল না।” পঞ্চায়েতের সদস্য তৃণমূলের সন্তোষ প্রামাণিক জানান, সমস্যার এখানেই শেষ নয়। পঞ্চায়েতের তিন সদস্যের মৃত্যুর পর অন্যান্য সার্টিফিকেটের পাশাপাশি ভোটার তালিকায় নাম তোলার কাজ চলছে। অথচ বাসিন্দা সার্টিফিকেট দেওয়ার জন্য পঞ্চায়েতে কোনও প্রধান নেই।

করিমপুর-২ ব্লক তৃণমূলের সংখ্যালঘু সেলের সহ-সভাপতি সরিফুল ইসলাম হালসানা বলেন, “বিডিও ২১ অক্টোবর প্রধান নির্বাচনের দিন করলেও ১৮ তারিখে আমাদের জানিয়ে দেন ভোটের দিন প্রয়োজনীয় পুলিশ নেই বলে প্রধান নির্বাচন করতে হবে আরও কিছুদিন পরে। কিন্তু যত দিন যাচ্ছে মানুষের সমস্যা ততই বাড়ছে।” করিমপুর-২ বিডিও তাপস কুণ্ডু বলেন, “প্রধান নির্বাচন করতে প্রয়োজনীয় পুলিশ এই মুহূর্তে পাওয়া যাচ্ছে না। তাই আর কিছুদিন পর ওই নির্বাচনের দিন ঠিক হবে।”

একই কথা জানান তেহট্টের মহকুমা শাসক অর্ণব চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “মানুষের অসুবিধা হচ্ছে ঠিকই। তবে আমরাও কিছু করতে পারছি না। একবার একটা দিন ঠিক করা হয়েছিল। কিন্তু পুজোর জন্য এখন পুলিশ বিভিন্ন জায়গায় ডিউটিতে গিয়েছে। সামনে জগদ্ধাত্রী পুজো ও রাস উত্‌সব। সেসব না মিটলে ভোটের দিন নিরাপত্তার পুলিশ পাওয়া যাবে না। তাই এখনই কিছু করা যাচ্ছে না।” তাহলে কবে নাগাদ সমস্যা মিটবে? সে প্রশ্নের অবশ্য কোনও সদুত্তর মেলেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE