Advertisement
E-Paper

দেওয়ালে প্রাক্তনেরা, প্রচারে নিঃসঙ্গ নিত্য

নাম ঘোষণা হওয়ার পরেও যেন কিছুতেই স্বস্তি পাচ্ছেন না তিনি। কেননা, দলেরই একটা বড় অংশ তাকে মানতে পারছেন না।তিনি নিত্যগোপাল মণ্ডল। গত উপ-নির্বাচনে কৃষ্ণগঞ্জ কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থী হয়ে দাঁড়িয়ে মোটে হাজার পাঁচেক ভোট পেয়েছিলেন তিনি, জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছিল।

সুস্মিত হালদার ও সামসুদ্দিন বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০১৬ ০১:৫৫
বদলে গিয়েছেন দুই প্রার্থী। — নিজস্ব চিত্র

বদলে গিয়েছেন দুই প্রার্থী। — নিজস্ব চিত্র

নাম ঘোষণা হওয়ার পরেও যেন কিছুতেই স্বস্তি পাচ্ছেন না তিনি। কেননা, দলেরই একটা বড় অংশ তাকে মানতে পারছেন না।

তিনি নিত্যগোপাল মণ্ডল। গত উপ-নির্বাচনে কৃষ্ণগঞ্জ কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থী হয়ে দাঁড়িয়ে মোটে হাজার পাঁচেক ভোট পেয়েছিলেন তিনি, জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছিল। তাঁকেই দল ফের দাঁড় করানোয় কর্মীদের একাংশ বেঁকে বসেছেন। প্রথমে যাঁর নাম ঘোষণা হয়েছিল, সেই বিশ্বনাথ বিশ্বাসকেই প্রার্থী করার জন্য সওয়াল করে চলেছেন ব্লকের অনেক নেতাই।

এমনকী দেওয়ালগুলোও যেন নিত্যগোপালের সঙ্গে বেইমানি করছে। প্রথম বার প্রার্থী ঘোষণার পরেই দেওয়ালে চুন মেরে ‘বিশ্বনাথ বিশ্বাসকে হাত চিহ্নে ভোট দিন’ লিখে দিয়েছিলেন কংগ্রেস কর্মীরা। এখন নিত্যগোপাল যেখানেই যাচ্ছেন, বড় বড় হরফে লেখা ‘কংগ্রেস প্রার্থী বিশ্বনাথ বিশ্বাস’। অস্বস্তি তো হবেই। ইতিমধ্যে দু’বার এই কেন্দ্রে প্রার্থী বদল হয়ে গিয়েছে। নিত্য-অনুগামীরা বলছেন, মনোনয়ন জমা না হওয়া পর্যন্ত স্বস্তিতে থাকা মুশকিল। না আঁচালে বিশ্বাস নেই।

আশঙ্কাটা একেবারে উড়িয়ে দিতে পারছে না নিত্য-শিবির। তাঁর আগের দু’জনও পুরোদমে প্রচার শুরু করে দিয়েছিলেন। জেলা থেকে সর্বসম্মতি ক্রমেই দক্ষিণপাড়ার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক বিশ্বনাথ বিশ্বাসের নাম পাঠানো হয়েছিল রাজ্যে। তাঁকে নিয়ে প্রচার শুরু করে দিয়েছিল বামেরাও। কৃষ্ণগঞ্জ ও হাঁসখালির নানা এলাকায় বহু দেওয়ালে লেখাও হয়ে যায়। সাত দিন পরে হঠাৎ কর্মীরা শোনেন, প্রার্থী তিনি নন। তাঁর পরিবর্তে চাকদহের বাসিন্দা প্রতাপ রায়কে প্রার্থী করছে দল। এই নিয়ে ক্ষোভ তৈরি হয়। বিশেষ করে হাঁসখালির ব্লক ও অঞ্চল নেতারা তীব্র আপত্তি জানান।

প্রার্থী হিসাবে নাম ঘোষণার পরে প্রতাপ রায় প্রচারে নামেন। তাঁর লোকজনও দেওয়াল লেখা শুরু করে দেন। কিন্তু দলের একটা অংশ এগিয়ে আসেনি। তাঁর প্রার্থিপদ প্রত্যাহারের জন্য দলের ভিতরে থেকেই চাপ সৃষ্টি হতে থাকে। শেষ পর্যন্ত শঙ্কর সিংহের বাড়িতে এলাকার নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলোচনার পরে প্রতাপ জানিয়ে দেন, তিনি প্রার্থী হতে চান না।

এর পরে এলাকার নেতাকর্মীদের একটা বড় অংশ আবার দলের কাছে বিশ্বনাথবাবুর হয়ে সওয়াল করতে শুরু করেন। কিন্তু তাঁদের হতাশ করে নিত্যগোপাল মণ্ডলের ‌নাম ঘোষণা করে প্রদেশ নেতৃত্ব। তাতে আরও ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন বিশ্বনাথ-অনুগামীরা। নিত্যগোপালের হয়ে প্রচার করতে পারবেন না বলে তাঁরা সরাসরি জানিয়ে দিয়েছেন। হাঁসখালি ব্লক কংগ্রেস সভাপতি দিনেশ চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘বারবার এই প্রার্থী পরিবর্তন কর্মীরা মানতে পারছেন না। আমরা তাঁদের বোঝানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু এই ব্লকের আট অঞ্চল সভাপতিরই, প্রথমে যাঁর নাম ঘোষণা করা হয়েছিল তাঁকেই প্রার্থী করতে হবে। না হলে তাঁরা প্রচারে নামবেন না।’’

বিশ্বনাথ বলেন, ‘‘জানি না, দল কেন আমার প্রার্থিপদ প্রত্যাহার করে নিল। আমি দলটা করি। তাই দলের সিদ্ধান্ত মেনে চলব। নেতৃত্বেরও কিন্তু বোঝা উচিত, মানুষ কী চাইছে।’’ বিতর্ক এড়িয়ে নিত্যগোপাল শুধু বলেন, ‘‘দল আমাকে প্রার্থী করেছে। আমি চেষ্টা করছি, সকলকে নিয়ে সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে।’’

অনেকটা একই অবস্থা কালীগঞ্জ কেন্দ্রেও। কংগ্রেসের প্রার্থী বদলের জেরে সেখানেও দেওয়ালে দুই নাম। কালীগঞ্জ, বড়চাঁদঘর, জুড়ানপুর, মাটিয়ারি, পানিঘাটা, দেবগ্রামের মতো এলাকায় কোথাও লেখা ‘বাম-কংগ্রেস জোট প্রার্থী কাবিলউদ্দিন শেখকে ভোট দিন”, আবার কোথাও লেখা, “বাম-কংগ্রেস জোট প্রার্থী হাসানুজ্জামান শেখকে ভোট দিন।” প্রথমে এলাকারই কাবিলউদ্দিন শেখের নাম ঘোষণা করেও দলীয় নেতাকর্মীদের একাংশের বিক্ষোভের জেরে পরে প্রার্থী পাল্টে মুর্শিদাবাদের বেলডাঙার বাসিন্দা হাসানুজ্জামান শেখকে প্রার্থী করে কংগ্রেস। কিন্তু প্রথম দফার দেওয়াল লিখন আগের মতো রয়েই গিয়েছে।

কাবিলউদ্দিনের বক্তব্য, “দেওয়াল মোছা আমার কাজ নয়। দল মনে করলে আমার নাম লেখা দেওয়াল মুছবে।” তবে হাসানুজ্জামানের দাবি, “শীঘ্রই আগের প্রার্থীর নাম মুছে দেওয়ালে আমার নাম লেখা হবে।” কে পাল্টাবে দেওয়ালের নাম? জেলা কংগ্রেস সভাপতি অসীম সাহা বলেন, ‘‘কেন? আমরাই! এমনটা সব দলেরই হয়।’’ তাঁর দাবি, ‘‘প্রার্থী নিয়ে কিছু কর্মীর ক্ষোভ আছে ঠিকই, কিন্তু সেটা আলোচনায় মিটে যাবে।’’ দেখে-শুনে কালীগঞ্জের তৃণমূল কর্মীদের টিপ্পনী, “দেওয়াল লিখনই তো বলে দিচ্ছে, বিরোধীরা কতটা ছন্নছাড়া। আগে ওরা পরিষ্কার করে জানাক, কে ওদের প্রার্থী, তার পরে তো লড়তে আসবে!”

Former Candidates
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy