Advertisement
০২ মে ২০২৪

দুর্ঘটনায় মৃত্যু দুই ছাত্রীর,রণক্ষেত্র পণ্ডিতপুর মোড়

প্রতিদিনের মতো ওরা বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল। বলেছিল, ছুটি হয়ে গেলে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে আসবে। একজন যাচ্ছিল গৃহশিক্ষকের কাছে পড়তে। অন্য জনের গন্তব্য ছিল স্কুল। বুধবার সকালে থানারপাড়ার নতিডাঙায় কয়লাবোঝাই ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয় বাচেনা খাতুন (১৬) ও সাবানা পারভিন (৯) নামে ওই দুই ছাত্রী। ঘটনাস্থলে মারা যায় বাচেনা। শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মৃত্যু হয় সাবানার।

ক্ষোভের আগুনে জ্বলছে ট্রাক।—নিজস্ব চিত্র

ক্ষোভের আগুনে জ্বলছে ট্রাক।—নিজস্ব চিত্র

কল্লোল প্রামাণিক
থানারপাড়া শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০১:৪৩
Share: Save:

প্রতিদিনের মতো ওরা বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল। বলেছিল, ছুটি হয়ে গেলে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে আসবে।

একজন যাচ্ছিল গৃহশিক্ষকের কাছে পড়তে। অন্য জনের গন্তব্য ছিল স্কুল। বুধবার সকালে থানারপাড়ার নতিডাঙায় কয়লাবোঝাই ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয় বাচেনা খাতুন (১৬) ও সাবানা পারভিন (৯) নামে ওই দুই ছাত্রী। ঘটনাস্থলে মারা যায় বাচেনা। শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মৃত্যু হয় সাবানার। সন্ধ্যার পরে বাড়িতে ফিরল শোভরাজপুর গ্রামের ওই দুই ছাত্রীর নিথর দেহ।

এ দিন দুর্ঘটনার পরে উত্তেজিত জনতা ঘাতক ট্রাকে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন লাগিয়ে দেয়। মৃতদেহ আটকে নতিডাঙা-বহরমপুর রাজ্য সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভও দেখায় তারা। পরে পুলিশ ও দমকল এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। ভস্মীভূত ওই গাড়িটিকে পুলিশ থানায় নিয়ে এলেও ঘটনার পরেই চম্পট দিয়েছে চালক।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বাচেনা ও সাবানা দু’জনেই নতিডাঙা অমিয় স্মৃতি বিদ্যালয়ের দশম ও পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী। তাদের বাড়িও একই জায়গায়। দু’জনেই যাচ্ছিল নতিডাঙায়। বাচেনার গন্তব্য ছিল গৃহশিক্ষকের বাড়ি। আর সাবানা যাচ্ছিল স্কুলে। বাচেনার সাইকেলের পিছনে বসেছিল সাবানা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কয়লা বোঝাই ট্রাকটি বহরমপুর থেকে নতিডাঙার দিকেই আসছিল। রাস্তার বাঁকে দ্রুত গতিতে আসা ট্রাকটি ওই ছাত্রীদের সাইকেলে ধাক্কা মারে। দু’জনেই চাকার তলে পড়ে যায়। ওই দুই ছাত্রীর মৃত্যর ঘটনায় শোভরাজপুর তো বটেই, গোটা স্কুলও শোকস্তব্ধ হয়ে পড়ে। এ দিন মৃত্যুর খবর স্কুলে পৌঁছতেই স্কুল ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা মসিকুল সরকার, মহিরুদ্দিন মল্লিকদের কথায়, “এমন দৃশ্য চোখে দেখা যায় না। যে ভাবে ঘটনাটি ঘটল তাতে ওই দুই ছাত্রীর বিন্দুমাত্র দোষ ছিল না। তারা রাস্তার বাঁ দিক দিয়েই যাচ্ছিল। ট্রাকটি ওই বাঁকের মুখে তার গতি কমালে এমন ঘটনা কিছুতেই ঘটত না।”

স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্ষোভ ঠিক এখানেই। তাঁরা জানান, এই রাস্তা দিয়ে খুব কম সময়ে বহরমপুর যাওয়া যায়। কয়েক মাস আগেও এই রাস্তার অবস্থা অত্যন্ত খারাপ ছিল। তখন গাড়িঘোড়ার এত চাপও ছিল না। তারপর রাস্তা ভাল হতেই গাড়ির চাপ যেমন বেড়ে গিয়েছে, তেমনই বেড়ে গিয়েছে গাড়ির গতিও। আমরা প্রশাসনকে বারবার বলেছি যে, এই বেপরোয়া গাড়ি চালানো বন্ধ করতে। কিন্তু কেউই সে ব্যাপারে উদ্যোগী হয়নি।

সাবানার বাবা সাহাদত মণ্ডল বলেন, “দু’জনে রোজদিনই একসঙ্গে বাড়ি থেকে বেরোত। এ দিনও যাওয়ার সময় বলে গিয়েছিল, ছুটি হয়ে গেলেই তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরবে। কিন্তু এ কী হয়ে গেল বলুন তো!” প্রতিবেশীরা জানান, অত্যন্ত মিশুকে ছিল সাবানা ও বাচেনা। শিক্ষকদের কথায়, “অত্যন্ত গরিব পরিবারের ওই দুই ছাত্রীর শেখার আগ্রহ ছিল প্রশংসনীয়। এমন ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

kallol pramanick panditpur accident
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE