Advertisement
০৩ মে ২০২৪

দুর্নীতি ঢাকতে ঘুষ দিতে গিয়ে ধৃত প্রধানশিক্ষক

মহকুমাশাসককে ৩০ হাজার টাকা ঘুষ দিতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়লেন প্রধানশিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী। মঙ্গলবার জঙ্গিপুরের মহকুমাশাসকের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে সামশেরগঞ্জ ব্লকের ভাসাই পাইকর হাইস্কুলের প্রধানশিক্ষক আব্দুর রউফ ও স্কুলের কর্মী ইমারুল হককে গ্রেফতার করে পুলিশ। এর আগেও গত ১৩ অগস্ট পুলিশকে মারধরের অভিযোগে ওই প্রধান শিক্ষককে গ্রেফতার করেছিল সামশেরগঞ্জ থানার পুলিশ।

প্রিয়াঙ্কা সিংলা।—নিজস্ব চিত্র।

প্রিয়াঙ্কা সিংলা।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রঘুনাথগঞ্জ শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৪ ০১:৩৪
Share: Save:

মহকুমাশাসককে ৩০ হাজার টাকা ঘুষ দিতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়লেন প্রধানশিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী।

মঙ্গলবার জঙ্গিপুরের মহকুমাশাসকের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে সামশেরগঞ্জ ব্লকের ভাসাই পাইকর হাইস্কুলের প্রধানশিক্ষক আব্দুর রউফ ও স্কুলের কর্মী ইমারুল হককে গ্রেফতার করে পুলিশ। এর আগেও গত ১৩ অগস্ট পুলিশকে মারধরের অভিযোগে ওই প্রধান শিক্ষককে গ্রেফতার করেছিল সামশেরগঞ্জ থানার পুলিশ। জঙ্গিপুরের সহকারী বিদ্যালয় পরিদর্শক পঙ্কজ পাল বলেন, “ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ রয়েছে জেলা শিক্ষা দফতরে। রিপোর্ট পাঠিয়ে তাঁকে সতর্কও করা হয়েছে একাধিকবার। তারপরেও মিড-ডে মিলের দুর্নীতি থেকে বাঁচতে মঙ্গলবার মহকুমাশাসকককে ঘুষ দিতে যান ওই প্রধানশিক্ষক। এটা অত্যন্ত লজ্জার।”

ভাসাই পাইকর হাইস্কুলে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত প্রায় ৪৮০০ ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। এদের মধ্যে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ৩১৩৪ জন ছাত্র-ছাত্রীর মিড-ডে মিলের খাবার বাবদ ২৮ কুইন্ট্যাল চাল ছাড়াও প্রতি সপ্তাহে দেড় লক্ষ টাকা করে বরাদ্দ রয়েছে। অভিযোগ, প্রতিদিন গড়ে মাত্র শ’দুয়েক ছাত্র সেই মিড-ডে মিলের খাবার খায় ওই স্কুলে। অথচ দীর্ঘদিন ধরে দুই থেকে আড়াই হাজার ছাত্র-ছাত্রীর উপস্থিতি দেখিয়ে মিড-ডে মিলের টাকা তোলা হয়েছে।

পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখতে জঙ্গিপুরের মহকুমাশাসক প্রিয়াঙ্কা সিংলা বৃহস্পতিবার ওই স্কুলে যান। মহকুমাশাসক বলেন, ‘‘স্কুলে গিয়ে দেখি মিড-ডে মিলের রান্না বন্ধ রয়েছে। পরিবর্তে স্কুলের রান্নাঘরে রাঁধুনিরা শিক্ষকদের জন্য ভাত-মাংস রান্না করছেন। স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কাছে মিড-ডে মিলের খাতাপত্র দেখতে চাওয়া হলে তিনি জানান তা রয়েছে স্কুলের সম্পাদকের বাড়িতে।” কেন হিসেবপত্র স্কুলে নেই তার কোনও সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেননি ওই প্রধানশিক্ষক। পরদিন শো-কজ করে তিন দিনের ভিতর জবাবদিহি চাওয়া হয় প্রধানশিক্ষকের কাছে। সেই মতো লিখিত একটা জবাব দেন প্রধানশিক্ষক। তবে তাতে সন্তুষ্ট হননি মহকুমাশাসক।

মহকুমাশাসক বলেন, “ঠিক মতো জবাব দিতে না পারায় প্রধানশিক্ষককে সমস্ত ভাউচার-সহ খাতাপত্র নিয়ে হাজির হতে বলা হয় আমার অফিসে। কিন্তু অফিসে না গিয়ে মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১০টা নাগাদ তিনি আমার অফিস লাগোয়া বাসায় দেখা করতে চান। আমার নিরাপত্তারক্ষীকে তিনি বলেন স্কুলে পরীক্ষা চলায় তাড়া আছে। তাই বাসাতেই দেখা করতে চান। অনুমতি দিলে প্রধানশিক্ষক ও তাঁর এক সঙ্গী আমার ঘরে ঢোকেন। তাঁরা আমাকে অগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসের হিসেবপত্র দেখাতে থাকেন। আমি তাঁদের বলি জানুয়ারি থেকে গোটা শিক্ষাবর্ষের পুরো হিসেব নিয়ে অফিসে আসবেন। এরপর প্রধান শিক্ষক একটি খাম সামনের টেবিলে রেখে আমাকে তা দেখে নিতে বলেন। দেখা যায় তাতে ৩০ হাজার টাকা রয়েছে। এরপরই রক্ষী দিয়ে গেট আটকে রঘুনাথগঞ্জ থানায় পুলিশকে খবর দেওয়া হয়।”

প্রধানশিক্ষক আব্দুর রউফের আগামী শনিবারই চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার কথা। তার আগে এই রকম একটা ঘটনা ঘটালেন কেন জানতে চাইলে তিনি শুধু বলেন, “ভুল হয়ে গিয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

raghunathganj bribery corruption priyanka singla
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE