Advertisement
E-Paper

দোলের বিদেশি ভক্ত টানতে আধুনিক শৌচাগার নবদ্বীপে

ইটের দেওয়ালে পলেস্তারা নেই। ছাদ বলতে টালি বা টিনের। কিন্তু উঠোনের এককোণে শৌচাগারটি সদ্য রং করা, হাল ফ্যাশনের ‘সিন্থেটিক ডোর’ লাগানো। দোলের বিদেশি ভক্তদের সুবাদে এই ভাবেই ভোল বদলাচ্ছে নবদ্বীপ। নবদ্বীপের দোল আক্ষরিক অর্থেই এখন আন্তর্জাতিক উত্‌সব। এই সময় হাজার-হাজার বিদেশি আসেন চৈতন্যধাম পরিক্রমা করতে। বেশ কিছু দিন নবদ্বীপে থাকেন তাঁরা।

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০১৪ ০৩:৫৬

ইটের দেওয়ালে পলেস্তারা নেই। ছাদ বলতে টালি বা টিনের। কিন্তু উঠোনের এককোণে শৌচাগারটি সদ্য রং করা, হাল ফ্যাশনের ‘সিন্থেটিক ডোর’ লাগানো। দোলের বিদেশি ভক্তদের সুবাদে এই ভাবেই ভোল বদলাচ্ছে নবদ্বীপ।

নবদ্বীপের দোল আক্ষরিক অর্থেই এখন আন্তর্জাতিক উত্‌সব। এই সময় হাজার-হাজার বিদেশি আসেন চৈতন্যধাম পরিক্রমা করতে। বেশ কিছু দিন নবদ্বীপে থাকেন তাঁরা। কিন্তু কোনও মঠেই এই বিপুল সংখ্যক বহিরাগতের থাকার ব্যবস্থা নেই। ফলে সংশ্লিষ্ট মঠ-মন্দিরের আশপাশে পনেরো দিন থেকে এক মাস থাকার মতো জায়গা খুঁজে নেন ভক্তরা। তবে ‘হোম স্টে’ বলতে যেমনটা বোঝায়, এটা তেমন নয়। খাওয়া-দাওয়া সব মঠেই। শুধু থাকা বিশেষ করে শৌচাগারের জন্য ঘর ভাড়া নেওয়া। দৈনিক দু’শো থেকে হাজার বারোশো টাকা পর্যন্ত ভাড়া হয়। যে বাড়ির শৌচাগার যত ভাল, তার ‘রেট’ তত বেশি।

স্থানীয় বাসিন্দা লালমোহন মোদক বলেন, “বাথরুমে কমোড থাকাটা সবচেয়ে জরুরি। সঙ্গে পর্যাপ্ত জল। দিনভর পরিক্রমায় ঘুরতে হয় বলে তিন-চার বার করে বিদেশিরা স্নান করেন। প্রতি বছর ভিড় বাড়ছে। এই বছর ভিন্‌ রাজ্যের কিছু মানুষও দেখছি বাসা ভাড়া করে আছেন।”

কেশবজি গৌড়ীয় মঠে এ বার ১৫ হাজার ভক্ত এসেছেন। তার মধ্যে ৬ হাজার বিদেশি। মঠের তরফে তপন কুমার মিশ্র বলেন, “আমাদের ভক্তেরাও আশপাশেই থাকছেন। শৌচাগার পছন্দ হলে দৈনিক হাজার টাকা দিতেও পিছ-পা নন এঁরা। তা বুঝতে পেরে এলাকার মানুষ আগে বাড়িতে শৌচাগারটি আধুনিক মানের তৈরি করছেন। তারপর নানা ভাবে পুঁজি সংগ্রহ করে বিদেশিদের থাকার উপযোগী ব্যবস্থা গড়ে তুলছেন।”

এই ভাবেই প্রতি বছর একটু-একটু করে বদলে যাচ্ছে কোলেরডাঙা, হরিতলা, ঢাকানগর, নেতাজিনগর বা প্রফুল্লনগরের মতো নবদ্বীপের প্রত্যন্ত এলাকাগুলি। শুধু বহিরঙ্গে নয়, বদল ঘটেছে অন্তরঙ্গেও। আজ থেকে এক দশক আগে যে এলাকায় মানুষ শৌচকার্যের জন্য মাঠে যেতেন, এখন সেখানে বাড়ি-বাড়ি ঝাঁ চকচকে আধুনিক শৌচাগার।

যেমন, বছর দশেক আগেও ঘন বাঁশবনে ঘেরা জলা জমিতে মুলি বাঁশ আর দরমার এক চিলতে ঝুপড়িতে স্বামী, ছেলেপুলেকে নিয়ে দিন কাটাতেন নবদ্বীপের হরিতলার সরস্বতী ঘোষ। এখন তাঁর দোতলা পাকা বাড়ির উপর-নীচ মিলিয়ে চারটি ঘর।

প্রতিটি ঘরের সঙ্গে লাগোয়া শৌচাগারতাতে শাওয়ার থেকে কমোড। মেঝেতে ঝাঁ চকচকে টাইলস্‌। বাড়ির সামনে দোকানঘর। বিক্রি হচ্ছে বোতলবন্দি পানীয়। দোতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে নীচের চওড়া রাস্তা দিয়ে দোলের পরিক্রমা দেখছিলেন সরস্বতীদেবী। হাজার-হাজার মানুষের সংকীর্তনে মুখরিত চারিদিক।

সে দিকে তাকিয়ে সরস্বতীদেবী বলেন, “সামান্য কিছু সোনা ছিল। তাই বেচে আর কিছু ধার করে প্রথমে শৌচাগারটা ভাল ভাবে বানাই। তারপর প্রতি বছর যা আয় হচ্ছে, বাড়ির কাজেই লাগিয়ে দিচ্ছি। দেখতে-দেখতে দোতলাও হয়ে গেল। নিজেরই বিশ্বাস হয় না।”

সরস্বতীদেবীর মতোই কোলেরডাঙার প্রদীপ দাস, ঢাকানগরের প্রফুল্ল সাহা, গৌরসুন্দর দাস, কৃষ্ণ দাসরা বদলে ফেলেছেন বাড়ির খোলনলচে। জরুরি অবস্থায় শুধু শৌচাগার নয়, ছোট্ট ঠাকুর ঘরও রাতারাতি বদলে যাচ্ছে ভাড়ার ঘরে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে দীর্ঘদেহী বিদেশি জড়ানো ভাষায় আশ্বাস দিচ্ছেন, “ডোন্ট ওরি। অতেই চলবে।”

চৈতন্যধামে ‘বসুধৈব কুটুম্বকম’।

modern wash-room foreign pilgrimees nabadwip debashis bandopadhay
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy