Advertisement
E-Paper

দলবদলের হিড়িক কংগ্রেসে, তবু তৃণমূলকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না অধীর

তবে কি ‘অধীর ম্যাজিক’ এখন ‘মান্নান ম্যাজিক’-এর চ্যালেঞ্জের মুখে! নইলে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর ‘গড়’ হিসাবে পরিচিত মুর্শিদাবাদ জেলায় তৃণমূলের এত দিনের মরা গাঙে এখন স্রোত বইতে শুরু করেছে কেন? কেবল রাজনৈতিক মহলেই নয়, এই চর্চা শুরু হয়েছে আমজনতার মধ্যেও। উপলক্ষ দল বদলের হিড়িক। মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে কংগ্রেস, সিপিএম এবং আরএসপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় বড়ঞা ও রঘুনাথগঞ্জের মোট ৬টি গ্রাম পঞ্চায়েত দখল করল তৃণমূল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:৫৫
তৃণমূলে যোগ দিতে মান্নান হোসেনের বাড়িতে ভিড়।  ছবি: গৌতম প্রামাণিক।

তৃণমূলে যোগ দিতে মান্নান হোসেনের বাড়িতে ভিড়। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।

তবে কি ‘অধীর ম্যাজিক’ এখন ‘মান্নান ম্যাজিক’-এর চ্যালেঞ্জের মুখে! নইলে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর ‘গড়’ হিসাবে পরিচিত মুর্শিদাবাদ জেলায় তৃণমূলের এত দিনের মরা গাঙে এখন স্রোত বইতে শুরু করেছে কেন? কেবল রাজনৈতিক মহলেই নয়, এই চর্চা শুরু হয়েছে আমজনতার মধ্যেও। উপলক্ষ দল বদলের হিড়িক।

মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে কংগ্রেস, সিপিএম এবং আরএসপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় বড়ঞা ও রঘুনাথগঞ্জের মোট ৬টি গ্রাম পঞ্চায়েত দখল করল তৃণমূল। কয়েক দিনের মধ্যে ওই দুটি ব্লকের আরও ৫টি পঞ্চায়েত দখল করতে চলেছে বলে দাবি তৃণমূলের। তৃণমূলের দখলে আসা ৬টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে বড়ঞা ব্লকের ৪টি সাবলপুর, কল্যাণপুর ১, কল্যাণপুর ২ এবং বড়ঞা ১ এবং দু’টি রঘুনাথগঞ্জের দফরপুর ও জরুর গ্রাম পঞ্চায়েত। এছাড়াও খড়গ্রাম ব্লকের আরও ১১ জন গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন বৃহস্পতিবার।

এদিনই কংগ্রেসের বড়ঞা ব্লক সভাপতি ও কার্যনির্বাহী সভাপতিও দলত্যাগ করে তৃণমূলে যোগ দেন। বামফ্রন্টের দখলে থাকা বড়ঞা পঞ্চায়েত সমিতির আরএসপি-র সহ-সভাপতি, কংগ্রেসের এক জন এবং সিপিএমের এক জন মিলে মোট ৩ জন সদস্যও তৃণমূলে যোগ দেন। তৃণমূলের বড়ঞা ব্লক সভাপতি জালালুদ্দিন আফাজ বলেন, “কয়েক দিনের মধ্যে এই ব্লকের আরও ৩টি পঞ্চায়েত তৃণমূলের দখলে আসবে।” দলবদলের ফলে শক্তি বৃদ্ধি হওয়ায় রঘুনাথগঞ্জের কানুপুর ও রানিনগর পঞ্চায়েত ২টি দখল করার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। ওই পঞ্চায়েতের প্রধানদের বিরুদ্ধে তৃণমূল অনাস্থা জানিয়ে সাধারণ সভা ডাকার জন্য নোটিস দিয়েছে।

মুর্শিদাবাদের রাজনৈতিক মানচিত্রে বড়ঞা ও রঘুনাথগঞ্জের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। বড়ঞা ব্লক অধীর চৌধুরীর লোকসভা কেন্দ্রের অধীন। বড়ঞা পঞ্চায়েত সমিতি বামেদের দখলে থাকলেও বিধানসভা ও লোকসভা কংগ্রেসের দখলে রয়েছে।

ইতিমধ্যে তৃণমূলের দখলে গিয়েছে রঘুনাথগঞ্জের ২টি পঞ্চায়েত। অদূর ভবিষ্যতে ওই ব্লকের আরও ২টি পঞ্চায়েত তৃণমূলের দখলে যেতে চলেছে বলে দাবি তৃণমূলের। ওই ৪টি পঞ্চায়েতই বিধানসভায় কংগ্রেসের পরিষদীয় দলনেতা মহম্মদ সহরবের নির্বাচনী এলাকার অর্ন্তগত। তার মধ্যে কানুপুর পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা স্বয়ং সহরব। সিপিএমের মুর্শিদাবাদ জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্যের বাড়িও রঘুনাথগঞ্জে।

‘হেভিওয়েট’ ওই তিন নেতার খাস তালুকে ‘ধস’ নামায় অবশ্য চিন্তিত নন তাঁরা। এমনকী দল বদলের ঢলকেও ‘মান্নান-ম্যাজিক’ বলে মানতে নারাজ তাঁরা। কংগ্রেসের পরিষদীয় দলনেতা মহম্মদ সহরব বলেন, “ওসব ম্যাজিক-ট্যাজিক কিছু নয়। নিজেদের ব্যক্তিগত ক্ষতির স্বার্থে পঞ্চায়েত সদস্যরা দল ছেড়ে তৃণমূলে গিয়েছেন। কংগ্রেস সাধারণ আমজনতা ভিত্তিক দল। পঞ্চায়েত সদস্যরা দল বদল করলেও আমজনতা রয়েছে কংগ্রেসের সঙ্গেই।” আর সিপিএমের মুর্শিদাবাদ জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্যের প্রতিক্রিয়া, “অনৈতিক ভাবে ভাঙনের যে খেলা তৃণমূল খেলছে সেই আগুনেই ওই দলটিই এক দিন পুড়ে ছাই হয়ে যাবে।”

মাস আড়াই আগে কংগ্রেস ছেড়ে প্রাক্তন সাংসদ মান্নান হোসেন তৃণমূলে যোগ দেন। তিনি দলের জেলা সভাপতি হয়েছেন বড় জোর দেড় মাস। কংগ্রেস ছেড়ে দেওয়ার সময়ই তিনি কংগ্রেস এবং সিপিএমের ঘর ভাঙার সংকল্প নেন। গত ২১ নভেম্বর কল্যাণীতে তৃণমূলের দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কর্মিসভায় সে কথা মান্নান ঘোষণাও করেন। দলত্যাগ ঠেকাতে চেয়ে তৃণমূল পঞ্চায়েত আইনে সংশোধনী এনে বিধানসভায় বিল উত্থাপন করতে চেয়েছিল। প্রস্তাবিত ওই বিল পাশ হলে মান্নানের মনের বাসনা পূরণ হবে না। তাই তিনি নিজের সংকল্প পূরণের জন্য কল্যাণীর কর্মিসভায় প্রস্তাবিত পঞ্চায়েত আইনের বিরোধিতা করেন।

তাঁর বিরোধিতা যে উদ্দেশ্যহীন ছিল না, প্রমাণ দিতেই কোমর বেঁধে মাঠে নামেন মান্নান। দলের জেলা কমিটি ও ব্লক কমিটি গঠন করেন। শুরু করেন বিরোধীদের ঘর ভাঙার খেলা। তিনি বলেন, “কিছু দিনের মধ্যে বড়ঞা, রঘুনাথগঞ্জ ও খড়গ্রাম-সহ বিভিন্ন এলাকার বেশ কিছু পঞ্চায়েত তৃণমূলের দখলে আসতে চলেছে।”

একদা তাঁর রাজনৈতিক গুরু মান্নান হোসেনকে অবশ্য এতটা কৃতিত্ব দিতে রাজি নন মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেসের মুখপাত্র অশোক দাস। তিনি বলেন, “মান্নান হোসেন মাস দুয়েক আগে তৃণমূলে ভিড়েছেন। আর কংগ্রেসের বড়ঞা ব্লক সভাপতি ও কার্যনিবার্হী সভাপতি তাঁদের অনুগামীদের নিয়ে মাস ছয়েক আগে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। ফলে এ ক্ষেত্রে বিষয়টিকে মান্নান-ম্যজিক বলা যাচ্ছে না।”

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, “যাঁরা তৃণমূলে আজ ‘অফিসিয়ালি’ গেলেন, তাঁরা অনেক আগেই কংগ্রেস ছেড়েছেন।” তাঁর দাবি, “কয়েকটি পঞ্চায়েত হাতছাড়া হয়েছে ঠিকই। ফের হরিহরপাড়ার ২টি পঞ্চায়েত এবং বেলডাঙা ২ পঞ্চায়েত সমিতি আমাদের দখলে এল। দলে কেউ আসবে, কেউ যাবে এমনটা হয়েই থাকে।”

মান্নানের বাড়ি যাওয়ার পথে বাধা

নিজস্ব সংবাদদাতা • কান্দি

তৃণমূলে যোগ দিতে যাওয়ার পথে এক কংগ্রেসকর্মীকে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠল খড়গ্রামে। বৃহস্পতিবার মহিশার, ঝিল্লি ও খড়গ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা থেকে বেশ কয়েকজন কংগ্রেস ও সিপিএমের নেতা-কর্মী তৃণমূলে যোগ দিতে জেলা তৃণমূল সভাপতি মান্নান হোসেনের বাড়ি যাচ্ছিলেন। অভিযোগ সেই সময় কংগ্রেসকর্মীরা তাঁদের বাধা দেন। খড়গ্রাম পঞ্চায়েতের কংগ্রেস সদস্যা কৃষ্ণা দাসের স্বামী নিতাই দাসের অভিযোগ, “আমাকে গাড়ি থেকে নেমে আসার জন্য চাপ দেন কংগ্রেসকর্মীরা। রাজি না হওয়ায় টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয় ব্লক কংগ্রেস কার্যালয়ে।” এই খবর জানার পরে তৃণমূলের তরফে খড়গ্রাম থানায় অপহরণের অভিযোগ দায়ের করা হয়। তখন কংগ্রেসের লোকেরা নিতাইবাবুকে থানায় হাজির করেন। থানা থেকে নিতাইবাবুকে কান্দি মহকুমা আদালতে তোলা হয়। সেখানে নিতাইবাবু জবানবন্দি দেন। তিনি বলেন, “নিজের ইচ্ছায় আমি মান্নান হোসেনের কাছে যাচ্ছিলাম তৃণমূলে যোগ দিতে। সেই সময় আমাকে জোর করে গাড়ি থেকে নামিয়ে এনেছেন কংগ্রেসকর্মীরা।” ব্লক তৃণমূলের সভাপতি আবুল কাশেম বলেন, “মান্নান হোসেনের নেতৃত্বে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার যে হিড়িক জেলা জুড়ে, তাতে মুর্শিদাবাদে কংগ্রেস বলে কিছু থাকবে কি না সন্দেহ। তাই উত্তেজিত হয়ে দিশা হারিয়ে ফেলেছে কংগ্রেস। এই ঘটনা তারই প্রমাণ।” খড়গ্রাম পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি কংগ্রেসের কানাইলাল ঘোষ বলে, “জোর করে কাউকে আটকানো হয়নি। নিতাই দাস যা বলছেন সেটা তৃণমূল নেতাদের শেখানো বুলি।”

mannan hossain congress adhir chowdhury
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy