Advertisement
০৩ মে ২০২৪

নবদ্বীপে বিদ্যুৎ সরবরাহে বদল

তেরো পার্বণের শহর নবদ্বীপ। রথযাত্রা থেকে রাস, ঝুলন থেকে দোলযাত্রা কিংবা বর্ষা থেকে বসন্ত সব ঋতুতেই নবদ্বীপ ব্যস্ত কোনও না কোনও উৎসবে। আর নবদ্বীপের উৎসব মানেই দেশ-বিদেশের লাখো লাখো মানুষের ভিড়। রাজ্যের উৎসব মানচিত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠা নবদ্বীপের অর্থনীতি ক্রমশই উৎসব নির্ভর হয়ে উঠছে। অথচ সেই উৎসবের রাতেই গাঢ় অন্ধকারে ডুবে যায় শহর নবদ্বীপ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৪ ০০:৪৭
Share: Save:

তেরো পার্বণের শহর নবদ্বীপ। রথযাত্রা থেকে রাস, ঝুলন থেকে দোলযাত্রা কিংবা বর্ষা থেকে বসন্ত সব ঋতুতেই নবদ্বীপ ব্যস্ত কোনও না কোনও উৎসবে। আর নবদ্বীপের উৎসব মানেই দেশ-বিদেশের লাখো লাখো মানুষের ভিড়। রাজ্যের উৎসব মানচিত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠা নবদ্বীপের অর্থনীতি ক্রমশই উৎসব নির্ভর হয়ে উঠছে। অথচ সেই উৎসবের রাতেই গাঢ় অন্ধকারে ডুবে যায় শহর নবদ্বীপ। পর্যটকে ঠাসা রাস উৎসবে নবদ্বীপে প্রতিবারই বিদ্যুতের অভাবে পানীয় জল, টেলিফোনের মতো জরুরি পরিষেবা স্তব্ধ হয়ে পড়ে। শিকেয় ওঠে ব্যবসা-বাণিজ্য। মোমবাতির আলোয় হাসপাতাল, নার্সিংহোম ভূতুড়ে বাড়ির মতো জেগে থাকে। রাস শেষে বিদ্যুৎ ফিরলে হাঁফ ছেড়ে বাঁচে সারা শহর।

কিন্তু কেন নবদ্বীপের অন্যতম প্রধান উৎসবে এ হেন অন্ধকার নেমে আসে শহরে? স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, সুউচ্চ প্রতিমা নবদ্বীপের রাসের প্রধান বৈশিষ্ট্য। বহুকালের প্রথা মেনে রাস উৎসবে নবদ্বীপে কম বেশি তিনশো প্রতিমা হয়। যেগুলির উচ্চতা শহরের ঝুলে থাকা বিদ্যুৎবাহী হাই টেনশন বা লো টেনশেন তারের চেয়ে অনেক বেশি। সেই সব প্রতিমা যখন শোভাযাত্রা করে ‘আড়ং’-- এ বের হয় তখন নিরাপত্তার জন্য গোটা শহরের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখতে হয়। প্রায় সারারাত ধরে সেই শোভাযাত্রা চলে। এমনকী প্রতিমা নিয়ে যাওয়ার সময়ে কোনও সমস্যা দেখা দিলে বিদ্যুতের লাইন যথেচ্ছ ভাবে কেটে দেওয়া হয়। যার নিট ফল শহর জুড়ে বিদ্যুৎ-বিপর্যয়। নবদ্বীপে এ নিয়ে বিতর্কের অন্ত নেই। কারও মতে প্রতিমার উচ্চতা কমানো হলে ক্ষতি কোথায়? আবার কারও মতে বিদ্যুৎবাহী তারের উচ্চতা বৃদ্ধি করা হোক। কোনও ভাবে প্রতিমার উচ্চতার ঐতিহ্যের সঙ্গে আপোস করা যাবে না।

শেষ পর্যন্ত এই দুর্ভোগ এবং বিতর্কের ইতি ঘটতে চলেছে পাকাপাকি ভাবে। আমূল বদলে যাচ্ছে নবদ্বীপের বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা। আরএপিডিআরপি প্রকল্পে গোটা শহরের বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার খোলনলচে পাল্টে ভূগর্ভস্থ করার কাজও শুরু হয়েছে। ফলে শহরের বেশির ভাগ বিদ্যুবাহী তার ওভারহেডের বদলে মাটির তলা দিয়ে যাবে। তা ছাড়া বসানো হবে ৭০টি অতিরিক্ত ট্রান্সফর্মার। আনা হবে একটি অতিরিক্ত ১১কেভি বিদ্যুতের লাইনও। ফলে শুধু উৎসবের সময়ে বিদ্যুৎ বিপর্যয় ঠেকানো যাবে এমন নয়, কমে যাবে ‘পাওয়ার ব্রেক ডাউন’, ‘লো ভোল্টেজ’ এবং ঝড়-বৃষ্টির মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সমস্যাও।

ঠিক কী ভাবে কাজ হবে? রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন নিগমের আঞ্চলিক ম্যানেজার সিদ্ধার্থ রায় জানান, আরএপিডিআরপি (রিস্ট্রাকচার অ্যাকসিলারেটেড পাওয়ার ডেভলপমেন্ট অ্যান্ড রিফর্মড প্রোগ্রাম) প্রকল্পে কল্যাণী, চাকদহ, শান্তিপুর, রানাঘাটের মতো শহরে বিদ্যুৎ বণ্টনে আধুনিকীকরণ শুরু হয়েছে। কিন্তু নবদ্বীপের সঙ্গে অনান্য জায়গার পার্থক্য হল নবদ্বীপে বেশির ভাগ কাজটা হবে মাটির তলা দিয়ে। তিনি বলেন, “আমরা চেষ্টা করব ১০০ শতাংশ কাজই মাটির তলা দিয়ে করতে।” তবে প্রাচীন এই শহরে সেই কাজ কতটা সম্ভব হবে তা নিয়ে প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যাচ্ছে।

নতুন ব্যবস্থায় নবদ্বীপে কমবেশি ৫৫ কিলোমিটার হাই টেনশন এবং ১২৪ কিমি লো টেনশন লাইন মাটির তলা দিয়ে যাওয়ার কথা। জানা গিয়েছে শহরের প্রধান রাস্তাতে তো বটেই ২৪টি ওয়ার্ডের পুরোটাই ভূগর্ভস্থ তারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ বণ্টন করা হবে। নিগমের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার রাজু মণ্ডল বলেন, “নবদ্বীপে এখন ১৭০টি ট্রান্সফর্মার রয়েছে। আরও ৭০টি বসানো হবে। রাস্তার দু’ধারে এক মিটার গভীর এবং এক মিটার চওড়া গর্ত করে কেবল নিয়ে যাওয়া হবে।”

তবে প্রকল্পটি রূপায়ণের ক্ষেত্রে শহরের বাসিন্দাদের সাময়িক কিছু অসুবিধা হতে পারে। তার জন্য এলাকাবাসীর সহযোগিতাও খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে জানিয়েছেন নিগম কর্তারা। তাই বারে বারে নবদ্বীপের পুরসভা এবং সাধারণ মানুষের সহযোগিতার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি শহরের বিভিন্ন রাস্তার তলা দিয়ে জল, টেলিফোন-সহ বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানির কেবল তার রয়েছে। ওই রূপায়ণের সময় সে সবের কী হবে তা নিয়ে নিগমকর্তাদের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা চলছে সংশ্লিষ্ট দফতরের।

শহরের পুরপ্রধান বিমানকৃষ্ণ সাহার কথায়, “ওই প্রকল্প রূপায়িত হলে সল্টলেক ছাড়া নবদ্বীপই একমাত্র পুরসভা হতে চলেছে যার সমগ্র বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা মাটির তলা দিয়ে হবে। সুতরাং এ ব্যাপারে পুরসভা এবং নবদ্বীপবাসীকে সবরকম ভাবে সাহায্য করার আবেদন জানাচ্ছি।” নবদ্বীপের বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী পুণ্ডরীকাক্ষ সাহা বলেন, “রাস উৎসবের সময়ে বিদ্যুৎ না থাকার জন্য সাধারণ মানুষকে খুব কষ্ট পেতে হয়। এই প্রকল্পের ফলে সেই অসুবিধা আর থাকবে না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

electric supply alteration nabadwip rapdrp
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE