Advertisement
০৬ মে ২০২৪

পাইনে জ্বলল আলো, খুশিতে ভাসল বহরমপুর

বড় দিনের উৎসবে মাতোয়ারা বহরমপুর। আলোয় ভাসছে গির্জার মোড়, ওয়াইএমএ ময়দান চত্বর ও গোরাবাজার শহীদ সূর্য সেন রোডকে নিয়ে বহরমপুরের গোটা তল্লাট। ঠিক যেন দুর্গাপুজোর অষ্টমীর রাত! শীতের কনকনে ঠাণ্ডা উপেক্ষা করে ২৫ ডিসেম্বরের সন্ধ্যায় গোটা বহরমপুর শহর নেমে এসেছে পথে। বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় ঢোকার লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে মুখোশ ও সান্তা টুপিতে ‘সেলফি’ তোলার ধূম। সব মিলিয়ে উৎসবের আনন্দে সামিল বহরমপুরের মত মফ্ফসলও।

ছোট্ট যিশুর পা ছুঁয়ে। বহরমপুর ক্যাথলিক চার্চে। ছবি: গৌতম প্রামণিক।

ছোট্ট যিশুর পা ছুঁয়ে। বহরমপুর ক্যাথলিক চার্চে। ছবি: গৌতম প্রামণিক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বহরমপুর শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:০৬
Share: Save:

বড় দিনের উৎসবে মাতোয়ারা বহরমপুর। আলোয় ভাসছে গির্জার মোড়, ওয়াইএমএ ময়দান চত্বর ও গোরাবাজার শহীদ সূর্য সেন রোডকে নিয়ে বহরমপুরের গোটা তল্লাট। ঠিক যেন দুর্গাপুজোর অষ্টমীর রাত! শীতের কনকনে ঠাণ্ডা উপেক্ষা করে ২৫ ডিসেম্বরের সন্ধ্যায় গোটা বহরমপুর শহর নেমে এসেছে পথে। বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় ঢোকার লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে মুখোশ ও সান্তা টুপিতে ‘সেলফি’ তোলার ধূম। সব মিলিয়ে উৎসবের আনন্দে সামিল বহরমপুরের মত মফ্ফসলও।

বুধবার সারা সন্ধে বহরমপুরের বিভিন্ন বাজার ঘুরে ইন্দিরা সুপার মাকের্টের একটি দোকানে অবশেষে ‘ক্রিসমাস ট্রি’-এর সন্ধান মেলে। উচ্চতা অনুযায়ী ১২০-২৫০ টাকা দাম। সান্তা, ফেয়ারি, স্টার, গিফট—সবই প্রতীকি, সাজাতে বাড়তি কয়েকশো টাকা খরচ হয়েছে। এলইডি আলোয় মোড়া সবুজ পাইন গাছ সারা রাত জ্বলেছে ঘরে। রাত ঠিক ১২টায় ‘জিঙ্গল বেল জিঙ্গল বেল’ গেয়ে ওঠে হোম থিয়েটার। সকালে ঘুম ভাঙা চোখে সান্তা বুড়োর ভোর রাতে রেখে যাওয়া উপহার দেখে কচিকাঁচাদের আনন্দ চোখে-মুখে। ক্যামেরায় ধরে রাখা ওই মুহূর্ত ছবি কিছুক্ষণের মধ্যেই ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে। লাইক-কমেন্টেস্ ছড়াছড়ি। অন্যান্য দিনের অভ্যাস সরিয়ে রেখে কুয়াশা মাখা সকালে কেক দিয়ে চা-পান।

বহরমপুরের গির্জার মোড়ে প্রোটেস্ট্যান্ট গির্জা ও ওয়াইএমএ ময়দানের উল্টো দিকে ক্যাথলিক চার্চের আলোয় ভেসে গেল গোটা সন্ধ্যা। গত কয়েক বছর ধরেই ওই দুই গির্জা কর্তৃপক্ষ বড় দিনের উৎসবের মেজাজটা তৈরি করে দিয়েছে। ফলস্বরূপ দিনের আলো নিভতে না নিভতেই ওই দুই গির্জা ঘিরে সাধারণ মানুষের উপচে পড়া ভিড়। ওই ভিড়ের পাশ দিয়ে দ্রুত গতিতে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় মোটরবাইকের তীব্র আওয়াজ ও সদ্য শহরের পথে চলা ব্যাটারি চালিত টুকটুকের দাপট— সব মিলিয়ে উৎসব মুখর বহরমপুরের নাগরিক। পিছিয়ে নেই বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলগুলিও। গোরাবাজার শহীদ সূর্য সেন রোডের মেরি ইমাকুলেট স্কুল হোক বা পঞ্চাননতলায় ডন বস্কো। এ দিন সকাল থেকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ওই দুটি স্কুল। তার মধ্যে ডন বস্কো স্কুল কর্তৃপক্ষ এ দিন এলাকার কচিকাঁচা-সহ সমস্ত অতিথিদের কেক খাওয়ায়।

২৫ ডিসেম্বর থেকে ইংরেজি নতুন বছরের শুরু দিন পর্যন্ত চলে বহরমপুরের ফেস্টিভ মুড। ওই ফেস্টিভ মুড ধরে রাখতে কোনও রেস্তোরাঁয় ভেড়ার শরীরের বিশেষ অংশের মাংস বিভিন্ন সস দিয়ে ভাল ভাবে টোস্ট করে সেঁকে নিয়ে পরিবেশন করা হচ্ছে, কোথাও আবার ‘মদিরা কাবাব’ চেটেপুটে খাচ্ছেন উৎসবপ্রিয় মানুষ। চাইনিজ মুরগির মাংসের কিমার সঙ্গে বিভিন্ন মশলা মিশিয়ে তৈরি করা ‘মাপো চিকেন’ খেতে ভিড় করছেন বহরমপুরের মানুষ। বহরমপুরের ইন্দ্রপ্রস্থের এক রেস্তোরাঁ মালিক শৈবাল রায় বলেন, “ভেড়ার বিশেষ অংশের মাংস বিভিন্ন সস দিয়ে সেঁকে নিয়ে পরিবেশন করা হচ্ছে। আমাদের রেস্তোরাঁয় যারা নিয়মিত আসেন, তাঁদের কাছে কিন্তু ভীষণ জনপ্রিয় হয়েছে। এছাড়াও সি-ফুড হিসেবে অক্টোপাস ও স্কুইড রয়েছে।”

নতুন নতুন খাবার তৈরির জন্য ওই রেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষের সুনাম রয়েছে। এ বছর বড় দিন উপলক্ষে তারা নিয়ে এসেছে বিশেষ এক সামুদ্রিক মাছের ডিম ‘ক্যাভিয়ার’। দুবাই এয়ারপোর্টের ক্যাভিরা হাউস থেকে অর্ডা দিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। শৈবাল বলেন, “যে কোনও খাবারের স্প্রেডার হিসেবে ওই মাছের ডিম ব্যবহার করা হয়। প্রতি কিলোগ্রামের দাম ২০-৩০ লক্ষ টাকা। মুম্বাইয়ের তাজ হোটেল ছাড়া অন্য কোথাও পাওয়া যায় বলে আমি অন্তত নেট ঘেঁটে পাইনি।” রয়েছে স্ন্যাক্স ও চাইনিজ পদ্ধতিতে রান্না বোনলেস কাঁকড়ার মাংস ‘ক্র্যাপ পকোড়া’। তবে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ‘চকোলেট ফাউন্টেন’।

গরম চকোলেটের ঝর্ণায় ভিজিয়ে যে কোনও খাবারের স্বাদ নিতে যার জুড়ি মেলা ভার।

বড় দিনের রাত স্মৃতিতে ধরে রাখতে ‘স্পেশাল’ মুর্গ্ মুসল্লম্ থেকে ওয়াইন ভরা চকলেট-এর এলাহি আয়োজনও রয়েছে কোনও কোনও রেস্তোরাঁয়। বহরমপুর স্টেশন লাগোয়া শিল্পতালুকের ভেতরে গড়ে ওঠা এক হোটেলের রেস্তোরাঁয় ঢুকে ‘টমেটো এগ ড্রপ স্যুপ’ শীত সন্ধ্যায় দারুণ ভাবে বিকোচ্ছে। ওই হোটেলের জেনারেল ম্যানেজার প্রলয় তেওয়ারি বলেন, “হানি পটাটো ফিঙ্গার, মুরগির মাংসের কিমার সঙ্গে বিভিন্ন মশলা মিশিয়ে তৈরি করা মাপো চিকেন, সিজওয়ান চিলি প্রণ, মুগ চিঙ্গারি কাবাব কোরিয়ান রাইস, সাংহাই চিকেন। চিকেন রারা মশালা বড় দিন উৎসবের মেজাজ তৈরি করে দেবে।” এছাড়াও ফেম স্পেশাল মাটন মশালা ও লব স্টার মশালা রয়েছে। ওই হোটেল কর্তৃপক্ষ সান্তাক্লজ সাজিয়ে বুধবার রাতে অতিথিদের কচিকাঁচাদের হাতে উপহার হিসেবে তুলে দেয়।বহরমপুর-জলঙ্গি রাজ্য সড়ক লাগোয়া কদবেলতলার কাছে অন্য এক হোটেল কর্তৃপক্ষ মিক্সড ভেজিটেবল, চাইনিজ ভেজিটেবল, প্রণ, মাটন, চিকেন দিয়ে তৈরি থাই স্যুপ বেছে নিয়েছে বড় দিনের সন্ধ্যার উষ্ণতা দিতে। ওই হোটেল মালিক সুপর্ণা সাহা বলেন, “বিশেষ দিনের জন্য কুলচার সঙ্গে খেতে ভাল লাগবে বলে বিশেষ ভাবে বানানো হয়েছে গার্লিক ফ্লেভারের সানসাইন স্পেশাল মাটন চটপটা। সেই সঙ্গে পাস্তা, প্যাগেটি ছাড়াও রয়েছে স্পেশাল বিরিয়ানি।” এছাড়াও মুকতালি কাবাব, মদিরা কাবাব, বানজারা কাবাব, শোলে কাবাব, সাংহাই চিকেন বড় দিনকে মনে রেখেই বানানো হয়েছে। বহরমপুরের পাশাপাশি বড় দিনের উৎসবের মেজাজ ধরে রেখেছে ঐতিহাসিক শহর লালবাগও। তবে হাজারদুয়ারি চত্বরে টাঙা চালকদের এ দিন দুপুরে মারধরের ঘটনা ঘটে। প্রতিবাদে তারা সন্ধ্যায় মিছিল করে মুর্শিদাবাদ থানায় বিক্ষোভ দেখায়। অভিযোগ, মোটরবাইক বাহিনী এসে তাদের আচমকা মারধর করে। গোটা বিষয়টি জানিয়ে থানায় অভিযোগও দায়ের হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

festivals baharampur x-mas day
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE