Advertisement
১১ মে ২০২৪

পাখা নেই, সিসিটিভি বসালেন প্রধান শিক্ষক

শ্রেণিকক্ষে পাখা নেই। প্রায় আড়াই হাজার পড়ুয়ার জন্য নদিয়ার নাকাশিপাড়ার পাটপুকুর হাইস্কুলে জলের কল মাত্র একটি। শৌচাগারের জন্য ছাত্রীদের ভরসা আশপাশের বাড়ি। এই ‘নেই’ রাজ্যের মধ্যেও প্রধান শিক্ষকের ‘শখ’ যথেষ্ট।

পাটপুকুর হাইস্কুলে প্রধান শিক্ষককে ঘিরে বিক্ষোভ পড়ুয়া ও শিক্ষাকর্মীদের।—নিজস্ব চিত্র।

পাটপুকুর হাইস্কুলে প্রধান শিক্ষককে ঘিরে বিক্ষোভ পড়ুয়া ও শিক্ষাকর্মীদের।—নিজস্ব চিত্র।

মনিরুল শেখ
নাকাশিপাড়া শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০১৪ ০০:২৬
Share: Save:

শ্রেণিকক্ষে পাখা নেই। প্রায় আড়াই হাজার পড়ুয়ার জন্য নদিয়ার নাকাশিপাড়ার পাটপুকুর হাইস্কুলে জলের কল মাত্র একটি। শৌচাগারের জন্য ছাত্রীদের ভরসা আশপাশের বাড়ি। এই ‘নেই’ রাজ্যের মধ্যেও প্রধান শিক্ষকের ‘শখ’ যথেষ্ট। স্কুলের উন্নয়ন তহবিলের অর্থে পঞ্চাশ হাজার টাকা খরচ করে ছ’-ছ’টি সিসিটিভি লাগিয়ে ফেলেছেন তিনি।

সোমবার শিক্ষকদের বসার ঘরে তিনটি, বারান্দা ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের ঘরে একটি ও খোদ প্রধান শিক্ষক সুমিত্র অধিকারীর ঘরে একটি সিসিটিভি বসেছে। স্কুলের প্রাথমিক পরিকাঠামোর উন্নতি না করে স্টাফরুমে সিসিটিভি বসানোর বিলাসিতায় বেজায় ক্ষেপেছেন অন্য শিক্ষক-শিক্ষিকারা। প্রতিবাদে বুধবার বেলা বারোটা থেকে ক্লাস বয়কট করেন তাঁরা। সঙ্গে যোগ দেয় হাজার খানেক পড়ুয়াও।

প্রধান শিক্ষক অবশ্য তাঁর সিদ্ধান্তে এখনও অবিচল। তাঁর বক্তব্য, “স্কুলের নিরাপত্তা ও নজরদারির স্বার্থেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।” যদিও হদ্দ গ্রামের স্কুলে নিরাপত্তার অভাবটা হচ্ছে কোথায়, পরিষ্কার হয়নি। সহ-শিক্ষকদের দাবি, নিরাপত্তা নয়, তাঁদের উপরে নজরদারিটাই মূল লক্ষ্য প্রধান শিক্ষকের।

সহ-শিক্ষক আজহার আলি বিশ্বাস, অভিজিত্‌ সাহারা বলছেন, ‘‘আমাদের সঙ্গে মৌখিক আলাপ-আলোচনা ছাড়াই প্রধান শিক্ষক এই কাজ করেছেন। স্কুলে হাজারও সমস্যা ঘোচানোর দিকে ওঁর মন নেই। অথচ টাকা-পয়সার শ্রাদ্ধ করে সিসিটিভি বসালেন আমাদের উপর নজরদারির জন্য। উনি স্কুলটাকে জেলখানা হিসেবে বিবেচনা করছেন। আর আমাদের দাগী আসামী।’’ সহ-শিক্ষিকা শ্রাবণী ঘোষ, শম্পা সাহারা বলেন, ‘‘আমরা অনেক দূর থেকে আসি। বসার ঘর সংলগ্ন শৌচাগারে গিয়ে একটু মুখে-চোখে জলের ঝাপটা দিই। কিন্তু এখন বসার ঘরে এমন ভাবে সিসিটিভি বসানো হয়েছে যে শৌচাগারে যেতেও লজ্জা করছে। ওদিকেই তাকিয়ে আছে সিসিটিভি।”

এমনিতে পাটপুকুর হাইস্কুলের ভবনটি তিন তলা হলেও রং করা নেই। প্লাস্টারও হয়নি সর্বত্র। বিবর্ণ-হতশ্রী ভবনটির কিছু জানলা ভাঙা। ক্লাসঘরে কোনও পাখা নেই। শুধু শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষকের বসার ঘরে পাখা আছে। স্টাফরুমে শিক্ষিকাদের জন্য শৌচাগার আছে একটি। আর একটি বাইরে শিক্ষকদের জন্য, ছাত্ররাও ব্যবহার করে সেটা। তবে, ছাত্রীদের দরকার পড়লে যেতে হয় আশপাশের লোকজনের বাড়িতে। এই অবস্থায় এ দিন দুপুরবেলা ছাত্র-ছাত্রীরা প্রধান শিক্ষকের ঘরে ঢুকে বিক্ষোভ দেখায়। অষ্টম শ্রেণির তাসমিনা খাতুন, মাম্পি খাতুনরা সরাসরি প্রশ্ন করে, ‘‘আমাদের ক্লাসরুমে পাখা নেই। দরজা-জানা লা ভাঙা। ভরা চৈত্রের গরমে ক্লাসে বসা দুষ্কর। এই অবস্থায় পাখা লাগানোর পরিবর্তে শিক্ষকদের বসার ঘরে সিসিটিভি বসানো হল কেন?’’

সরাসরি উত্তর দিতে না পারলেও সুমিত্রবাবু তাঁর যুক্তিতে অনড়ই আছেন। তিনি বলেন, ‘‘স্কুলের নিরাপত্তা আর নিয়ন্ত্রণ করা আমার কাজ। দিন পনেরো আগে পরিচালন সমিতির সভা ডেকে সিসিটিভি বসানোর প্রস্তাব নেওয়া হয়। সেখানে তিন জন শিক্ষক প্রতিনিধিও ছিলেন। এ ব্যাপারে অনুমতি চেয়ে জেলা স্কুল পরিদর্শককে গত মাসের মাঝামাঝিতে দু’বার চিঠি পাঠিয়েছি। কোথাও অন্যায় হয়নি।” পরিচালন সমিতির বৈঠকে সিদ্ধান্ত যে হয়েছিল, মেনে নিয়েছেন সম্পাদক হোসেন আলি শেখ। তিনি বলেন, “সিসিটিভি কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আমরা। কোথায় বসানো হবে ঠিক হয়নি।”

নাকাশিপাড়ার বিডিও হেমন্ত ঘোষ বলেন, ‘‘বিষয়টি আমিও শুনেছি। জেলা স্কুল পরিদর্শককে (মাধ্যমিক) জানানো হয়েছে। পরিচালন সমিতির সদস্যরা একযোগে সিদ্ধান্ত নিলে সিসিটিভি বসাতে অসুবিধা নেই। তবে তা শ্রেণিকক্ষে বসানোই বাঞ্ছনীয়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

cctv nakashipara school
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE