Advertisement
E-Paper

পাত্রীর বাড়িতে ডাকাতি, পাশে পাত্রপক্ষ

দিন সাতেক পরে মেয়ের বিয়ে। সোমবার রাতে দুষ্কৃতীরা লুঠ করে নিয়ে গিয়েছে বাড়িতে রাখা সোনার গয়না, নগদ টাকা। করিমপুরের মধ্যগোপালপুরের ওই ঘটনার পরে মেয়ের বিয়ে নিয়ে যখন ঘোর অনিশ্চয়তায় ভুগছে পাত্রীর পরিবার, ঠিক তখনই মুশকিল আসান করতে এগিয়ে এলেন স্বয়ং পাত্র ও তাঁর বাড়ির লোকজন। তাঁরা পাত্রীর পরিবারকে জানিয়ে দিয়েছেন, নির্ধারিত দিনেই বিয়ে হবে।

কল্লোল প্রামাণিক

শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:৫১

দিন সাতেক পরে মেয়ের বিয়ে। সোমবার রাতে দুষ্কৃতীরা লুঠ করে নিয়ে গিয়েছে বাড়িতে রাখা সোনার গয়না, নগদ টাকা। করিমপুরের মধ্যগোপালপুরের ওই ঘটনার পরে মেয়ের বিয়ে নিয়ে যখন ঘোর অনিশ্চয়তায় ভুগছে পাত্রীর পরিবার, ঠিক তখনই মুশকিল আসান করতে এগিয়ে এলেন স্বয়ং পাত্র ও তাঁর বাড়ির লোকজন। তাঁরা পাত্রীর পরিবারকে জানিয়ে দিয়েছেন, নির্ধারিত দিনেই বিয়ে হবে। তার জন্য পাত্রীর পরিবারকে কোনও দুশ্চিন্তা করার দরকার নেই।

মাস দু’য়েক আগে মধ্যগোপালপুরের প্রশান্ত মণ্ডলের মেয়ের বিয়ে ঠিক হয় মুরুটিয়ার দক্ষিণকৃষ্ণপুরে। পাত্র অমিত মণ্ডল ব্লক অফিসে চাকরি করেন। প্রান্তিক চাষি প্রশান্তবাবু জানান, বিয়ের দিন ঠিক হয় ২৫ অগ্রহায়ণ। সেই মতো তিলতিল করে জমানো টাকায় তৈরি করা হয়েছিল সোনার গয়না। সোমবারেই ব্যাঙ্ক থেকে তুলে আনা হয়েছিল জমি বিক্রির টাকা। মঙ্গলবার বিয়ের কেনাকাটা করতে যাওয়ার কথা ছিল।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রাত তখন আটটা। প্রশান্তবাবুর স্ত্রী, মেয়ে ও বৌমা রান্নাঘরে ব্যস্ত ছিলেন। শীতের রাতে গোটা পাড়া ঘুমিয়ে না পড়লেও এলাকা সুনসান হয়ে গিয়েছিল। প্রশান্তবাবুর স্ত্রী ছায়াদেবী জানান, সে সময় হঠাত্‌ই দরজায় কড়া নাড়ার আওয়াজ শুনে রান্নাঘর থেকে তিনি বেরিয়ে বাড়ির সদর দরজা খুলে দেন। বাড়িতে ঢোকেন তাঁর ছেলে ও ছেলের শ্বশুর। তাঁদের সঙ্গেই হুড়মুড় করে ঢুকে পড়ে লুঙ্গি পরা একজন লোকও। ছায়াদেবীর কথায়, “প্রথমে আমি ভেবেছিলাম, লোকটা বোধহয় মানসিক ভারসাম্যহীন। কিন্তু তারপরেও ঢুকে পড়ে আরও প্রায় জনা দশেক লোক। ওরা ঢুকেই ভিতর থেকে সদর দরজা বন্ধ করে দেয়। সবার হাতেই ছিল আগ্নেয়াস্ত্র।”

প্রশান্তবাবু জানান, এরপর কেউ আর চিত্‌কারের সুযোগটুকু পাননি। প্রত্যেকের মাথায় আগ্নেয়াস্ত্র ধরে দুষ্কৃতীরা শাসিয়ে ছিল, “মুখ দিয়ে আওয়াজ বেরোলেই এখানে লাশ পড়ে থাকবে।” এরপর তারা সবার মোবাইল ফোনগুলো কেড়ে নেয়। তারপর আলমারিতে থাকা টাকা ও সোনার গয়না নিয়ে নিশ্চিন্তে ‘অপারেশন’ সেরে বেরিয়ে যায়। পাড়া প্রতিবেশীরা কেউই টের পাননি। দুষ্কৃতীরা বেরিয়ে যাওয়ার পরে মণ্ডলবাড়ির চিত্‌কারে পড়শিরা ছুটে আসেন। কিন্তু ততক্ষণে চম্পট দিয়েছে দুষ্কৃতীরা। পরে খবর পেয়ে পুলিশ আসে। ঘটনার তদন্তও শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে থানা। তবে মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত ওই ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি।

ঘটনার পর সারারাত দু’চোখের পাতা এক করতে পারেননি প্রশান্তবাবুর পরিবারের সদস্যরা। একটা চিন্তা তাঁদের পিছু ছাড়ছিল নানির্ধারিত দিনে কী করে হবে মেয়ের বিয়ে? শেষ পর্যন্ত সমস্যার সমাধান করে দিয়েছেন পাত্রের পরিবারের লোকজন। হবু শ্বশুরবাড়িতে ডাকাতির খবর শুনে মঙ্গলবার সকালেই মধ্যগোপালপুরে চলে এসেছিলেন পাত্র অমিতবাবু নিজেও। তিনি বলেন, “বিয়ের ক’দিন আগে এমন একটা অঘটন ঘটে যাওয়ায় ওই পরিবারের সকলেই খুব ভেঙে পড়েছিলেন। আমরা ওঁদের বলেছি কোনও দুশ্চিন্তা না করতে। আর সোনার গয়না আমি নিজেই স্ত্রীর জন্য তৈরি করে দেব।” অমিতবাবুর মা গান্ধারীদেবী বলেন, “এই বিপদের দিনে আমরা পাশে থাকব না তো কে থাকবে? বৌমাকে আমরা নির্দিষ্ট দিনেই ঘরে নিয়ে আসব।”

পাত্রীর পরিবার তো বটেই, পাত্র পক্ষের এমন ভূমিকায় প্রশংসায় পঞ্চমুখ গোটা গ্রাম। পাত্রীর মা ছায়াদেবী বলছেন, “ওদের কোনও দাবি-দাওয়া ছিল না। আমরাই একমাত্র মেয়ের বিয়ের জন্য সব কিছুর আয়োজন করেছিলাম। কিন্তু কপালে নেই, কী আর করা যাবে! তবে বেয়াইবাড়ির লোকজনের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ হয়ে থাকলাম।” আর পাত্রী পিয়ালি মণ্ডল বলছেন, “যা হল তা আমার দুর্ভাগ্য । কিন্তু শ্বশুরবাড়ির লোকজনের প্রতি আমার শ্রদ্ধা আরও বেড়ে গেল।”

robbery wedding house kollol pramanik karimpur marriage hall
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy