Advertisement
০৬ মে ২০২৪

বিজেপির জোরদার প্রচার দেখে তৃণমূলের কটাক্ষ, ‘ফাঁকা কলসি’

ভোটের এখনও বেশ কয়েক দিন দেরি। কিন্তু প্রচারে ইতিমধ্যেই অন্য দলগুলোকে পিছনে ফেলে দিয়েছে বলে দাবি বিজেপির। গত কয়েক দিনে নদিয়ায় হাঁসখালি, কৃষ্ণগঞ্জ, গয়েশপুর, কল্যাণী, গাড়াপোঁতা, বানপুর, হরিণঘাটা-সহ বেশ কিছু এলাকা রীতিমতো চষে বেরিয়েছেন বিজেপির নেতারা। সুরেন্দ্রসিংহ ওহালুওয়ালিয়া, সিদ্ধার্থনাথ সিংহ, রাহুল সিংহ, শমীক ভট্টাচার্য কে নেই সেই তালিকায়! পাশাপাশি কৃষ্ণগঞ্জ বিধানসভা ও বনগাঁ লোকসভার অর্ন্তগত বিভিন্ন এলাকায় সভা-সমিতি তো রয়েছেই।

নিজস্ব মেজাজে কৃষ্ণগঞ্জের সভায় বিজেপি বিধায়ক। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব মেজাজে কৃষ্ণগঞ্জের সভায় বিজেপি বিধায়ক। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কৃষ্ণগঞ্জ শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০১:৩৯
Share: Save:

ভোটের এখনও বেশ কয়েক দিন দেরি। কিন্তু প্রচারে ইতিমধ্যেই অন্য দলগুলোকে পিছনে ফেলে দিয়েছে বলে দাবি বিজেপির। গত কয়েক দিনে নদিয়ায় হাঁসখালি, কৃষ্ণগঞ্জ, গয়েশপুর, কল্যাণী, গাড়াপোঁতা, বানপুর, হরিণঘাটা-সহ বেশ কিছু এলাকা রীতিমতো চষে বেরিয়েছেন বিজেপির নেতারা। সুরেন্দ্রসিংহ ওহালুওয়ালিয়া, সিদ্ধার্থনাথ সিংহ, রাহুল সিংহ, শমীক ভট্টাচার্য কে নেই সেই তালিকায়! পাশাপাশি কৃষ্ণগঞ্জ বিধানসভা ও বনগাঁ লোকসভার অর্ন্তগত বিভিন্ন এলাকায় সভা-সমিতি তো রয়েছেই।

বিজেপি নেতাদের দাবি এ বারের এই উপনির্বাচনে তাঁরা শাসক দলকে বিনা যুদ্ধে এক ইঞ্চি জমিও ছেড়ে দিতে রাজি নন। বিজেপির ‘হেভিওয়েট’ নেতাদের কৃষ্ণগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রে প্রচারের বহর দেখে স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই প্রশ্ন, অন্য দলগুলো কি অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসে ভুগছে?

প্রশ্নটা কিন্তু একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক নয়। এখন পর্যন্ত তৃণমূলের রাজ্য স্তরের কোনও নেতাকে ওই বিধানসভা এলাকায় নির্বাচনী প্রচারে দেখতে পাওয়া যায়নি। জেলা নেতারাও তেমন প্রকাশে প্রচার করছেন না। তৃণমূলের জেলা নেতৃত্বের দাবি, কৃষ্ণগঞ্জ বিধানসভা এলাকায় তাঁদের অবস্থা এতটাই ভাল যে, রাজ্যের নেতাদের নিয়ে এসে সভা সমিতি করার কোনও প্রয়োজনই নেই। তাছাড়া দলীয় প্রার্থী সত্যজিৎ বিশ্বাস ওই এলাকারই বাসিন্দা। এলাকার সংগঠনটাও তিনি সবথেকে ভাল বোঝেন। গোটা বিধানসভা এলাকাও নাকি তাঁর নখদর্পণে। যদিও দলের একাংশেরই আবার আশঙ্কা, এই অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসই আবার শেষ পর্যন্ত কাল না হয়!

সোমবার কৃষ্ণগঞ্জে জনসভা করে গিয়েছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ। বৃহস্পতিবার ফের তিনি হাঁসখালি বাজার ও গাড়াপোঁতায় সভা করলেন। এই বিধানসভায় প্রায় ৮০ শতাংশ ভোটারই উদ্বাস্তু। ফলে এই নির্বাচনে যে এই উদ্বাস্তু ভোট খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে তা বিলক্ষণই জানেন যুযুধান রাজনৈতিক দলগুলি। আর সে কথা মাথায় রেখেই এ দিনও আগামী পাঁচ মাসের মধ্যে উদ্বাস্তু সমস্যার পাকাপাকি সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেলেন রাহুল। কৃষ্ণগঞ্জেও তিনি একই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সেখানে একই দাবি করেছিলেন সিদ্ধার্থনাথও। বিরাট সংখ্যক উদ্বাস্তু ভোটারকে নিজেদের দিকে টানার মরিয়া চেষ্টায় ফাঁক না রাখতে একই সঙ্গে উপনির্বাচনে বিজেপির সফল মুখ হিসেবে শমীক ভট্টাচার্য ও বাবুল সুপ্রিয়কে দিয়েও একাধিক সভা করানো হবে বলে বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে। প্রচার করবেন অভিনেতা-অভিনেত্রীরাও। অন্য দিকে, তৃণমূলের পক্ষে কৃষ্ণগঞ্জে পার্থ চট্টোপাধ্যয় ও সুব্রত বক্সি একই দিনে সভা করবেন। তৃণমূলের ‘হেভিওয়েট’ নেতাদের মধ্যে হাঁসখালিতে সভা করবেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সিপিএমের কৃষ্ণগঞ্জের সভায় হাজির থাকার কথা গৌতম দেবের। প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি অধীর চৌধুরী সভা করবেন কৃষ্ণগঞ্জ ও হাঁসখালিতে।

জেলা বিজেপির মুখপাত্র সৈকত সরকার বলেন, “কৃষ্ণগঞ্জে আমাদের জয় এক প্রকার নিশ্চিত। বসিরহাটের উপনির্বাচন থেকে একটা বিষয় পরিষ্কার যে, পশ্চিমবঙ্গে পরিবর্তনের পালা শুরু হয়ে গিয়েছে। মানুষ আমাদের চাইছেন। আমাদের নেতারাও সভা সমিতি করে দলের কথা মানুষের সামনে তুলে ধরছেন।” দলেরই এক জেলা নেতার কথায়, “আমরা গোটা বিধানসভা এলাকা জুড়েই প্রচারের ঝড় তুলতে চাই। যাতে সেই ঝড়ে খড়কুটোর মতো উড়ে যায় শাসক দল। দলের সর্বভারতীয় স্তরের নেতারাও এই বিধানসভা এলাকায় এসে সভা করছেন। রোড-শো করছেন।”

তবে তৃণমূলের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় পোস্টার-ব্যানার ছিঁড়ে দেওয়ার পাশাপাশি নীরব সন্ত্রাসের অভিযোগ আনতে শুরু করেছে বিরোধীরা। এলাকার মানুষের দাবি, এ বার যেহেতু প্রচুর পরিমাণে কেন্দ্রীয় বাহিনী ভোটের দিন মজুত থাকবে, তাই বুথে বুথে সন্ত্রাস করে রিগিং করা কঠিন হয়ে পড়বে। সেই কারণে তৃণমূল অনেক আগে থেকেই নানা ভাবে সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করতে চাইছে।

তৃণমূল অবশ্য সে সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। তাদের জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত বরং বিজেপির এই প্রচার অভিযানকেই কটাক্ষ করে বলেন, “ফাঁকা কলসি বাজে বেশি। বিজেপির জনসমর্থন নেই। তাই প্রতি দিন ফাঁকা মাঠে আওয়াজ দিয়ে বেড়াচ্ছেন তাদের নেতারা।” কিন্তু আপনাদের কেন সে ভাবে সভা সমিতি করতে দেখা যাচ্ছে না? গৌরীবাবুর প্রতিক্রিয়া, “তেমন প্রতিদ্বন্দ্বী কই যে, রাজ্যের নেতাদের দিয়ে প্রচার করতে হবে। আমাদের জন সমর্থন আছে। হাজার অপপ্রচার সত্ত্বেও মানুষ আমাদের সঙ্গে আছেন। তাই আমরা জয় নিয়ে চিন্তা করছি না।”

যদিও দলের অনেকেই মনে করছেন, তৃণমূলের এই অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসই না তাদের বিপদ ডেকে আনে। আর সেটা বুঝতে পেরেই যেন বিজেপি আরও বেশি করে ঝাঁপিয়ে পড়ছে মাঠে ময়দানে। মাটি কামড়ে পড়ে থাকছেন একাধিক রাজ্য নেতৃত্বও। তৃণমূলের একাংশ মনে করছে, টিকিট না পেয়ে সুশীল বিশ্বাসের মেয়ে বিজেপিতে যোগ দিয়ে যে ভাবে তৃণমূলের কঠোর সমালোচনা করতে শুরু করেছেন কিংবা বিধান পোদ্দারের মতো নেতা টিকিট না পেয়ে যে ভাবে প্রকাশ্যে বিদ্রোহ করতে শুরু করেছেন তাতে একটা সংশয় তো রয়েছেই। অন্য দিকে বড় সভা না করলেও এলাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে নীরবে প্রচার চালাচ্ছে সিপিএম। কংগ্রেসও তার সাধ্যমতো প্রচার চালাচ্ছে।

মগরাহাটে ধৃত সশস্ত্র দুষ্কৃতী। ৭ দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করল পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাতে মগরাহাট-জয়নগর রোডে গরুহাটা মোড় থেকে কাসেমউদ্দিন শাহ, পীযূষ প্রামাণিক, মাহিবুল শাহ, রফিক শেখ, জাহির শেখ, আবদুল্লা শেখ ও মসিউর রহমান নামে ওই সাত জনকে ধরা হয়েছে বলে জানায় পুলিশ। প্রথম চার জনের বাড়ি পূর্ব মেদিনীপুরের মহিশাদলে। বাকিদের বাড়ি ডায়মন্ড হারবারের বাসুলডাঙা এলাকায়। সকলেরই বয়স ১৮-২০ বছর। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে ছুরি, তরোয়াল-সহ কিছু যন্ত্রপাতি। ধৃতদের শুক্রবার ডায়মন্ড হারবার আদালতে তোলা হলে বিচারক তিন জনকে পুলিশি হেফাজতে এবং বাকিদের ১৪ দিন জেলহাজতে রাখার নির্দেশ দেন। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই দিন রাত আড়াইটে নাগাদ একটি গাড়ি মগরাহাট থেকে জয়নগরের দিকে যাচ্ছিল। সে সময় রাস্তায় থাকা টহলদারি পুলিশ ওই গাড়িটি থামতে বলে। কিন্তু গাড়ি না দাঁড়িয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ ধাওয়া করে ওই সাত জনকে ধরে ফেলে। পুলিশের অনুমান, ওই দুষ্কৃতীরা ঘোরাঘুরির পরে সুযোগ পেলেই দুষ্কর্ম করার মতলবে ছিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

krishnaganj by-election
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE