E-Paper

ভোটে ঘরে ফিরতে অনীহা পরিযায়ীদের

মাইলের পর মাইল হাঁটা। খাবার নেই, জল নেই। দু’পা ক্লান্তিতে অবশ হয়ে আসত। তবুও হাঁটতেন। হাঁটতেন আরও অনেকের সঙ্গে। সকলেরই একটাই লক্ষ্য, বাড়ি ফিরতে হবে।

নিজস্ব প্রতিবেদন

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০২৪ ০৮:১৩
—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

লকডাউনের সময় হেঁটে বাড়ির ফেরার দুঃসহ অভিজ্ঞতা স্মৃতিতে এখনও তাজা কালীগঞ্জের বাসিন্দা মিন্টু মল্লিকের। আগাম সতর্কতা ছাড়াই ঘোষণা হয়েছিল লকডাউন। আচমকা কাজ বন্ধ, আয় বন্ধ, দোকান বন্ধ। বাস, ট্রেনও সব বন্ধ। দিশেহারা হয়ে পড়ে গিয়েছিলেন তিনি। স্ত্রী, সন্তান, বাবা-মায়ের কথা খুব মনে পড়ছিল। কেবলই তাঁর মনে হচ্ছিল, না খেয়ে যদি মরতেই হয় তা হলে বাড়িতে গিয়ে মরবেন। তাই অন্য পরিযায়ী শ্রমিকদের সঙ্গে গুরুগ্রাম থেকে এক দিন মিন্টু মল্লিক বেরিয়ে পড়েছিলেন বাড়ির উদ্দেশে।

মাইলের পর মাইল হাঁটা। খাবার নেই, জল নেই। দু’পা ক্লান্তিতে অবশ হয়ে আসত। তবুও হাঁটতেন। হাঁটতেন আরও অনেকের সঙ্গে। সকলেরই একটাই লক্ষ্য, বাড়ি ফিরতে হবে। যেমন করেই হোক। কখনও ফাঁকা পণ্যবাহী গাড়ির চালক সাহায্য করতেন। ডালায় গাদাগাদি হয়ে বসে কিছুটা পথ এগোতেন। তবে বেশির ভাগ পথই পেরিয়েছেন হেঁটেই।

করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর মিন্টু ফের ফিরে গিয়েছেন কর্মক্ষেত্রে। গুরুগ্রাম থেকে মোবাইল ফোনে জানালেন, “সেই স্মৃতি কি ভোলা যায়? আজও ঘুমের মধ্যে তাড়া করে বেড়ায়।” ভোট দিতে আসবেন কি না সেই প্রশ্ন করতে মিন্টু বলেন, “শুধু ভোট দেওয়ার জন্য বাড়ি ফিরব না। ভোটের আগে ইদুজ্জোহা আছে। ইচ্ছে আছে তখন বাড়ি ফেরার। যদি যাই তা হলে ভোট দিয়ে ফিরব।’’

দিনটা ছিল ২০২০ সালের ২৪ মার্চ। পরিযায়ী শ্রমিকদের জীবনে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দিন। ওই দিনই লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছিল। আগাম কোনও সতর্কতা ছাড়াই। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা লক্ষ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়ি ফেরার সুযোগ না-দিয়ে গোটা দেশ স্তব্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। কার্যত অথৈ জলে পড়েন তাঁরা। গোটা দেশের মতো নদিয়া জেলার হাজার হাজার শ্রমিক চরম দুর্ভোগ আর প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করে বাড়ি ফিরেছিলেন। ফিরে এসেও তাঁদের চরম সঙ্কটের মধ্যে পড়তে হয়। খাবার নেই। প্রশাসনের দেখা নেই। রাতারাতি যেন উবে গিয়েছিলেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। জনা কয়েক কিছু যুবক-যুবতী নিজেদের জীবন বিপন্ন করে খাবার, অক্সিজেন আর ওষুধ নিয়ে এগিয়ে এসেছিলেন। তাঁদের কেউ স্বেচ্ছাসেবী, কেউ পড়ুয়া, কেউ আবার রেড ভলান্টিয়ার।

পানিঘাটার এক পরিযায়ী শ্রমিক সেলিম মণ্ডলের কথায়, “মাইলের পর মাইল হেঁটেছি। পেটে খিদে আর মাথার উপর গনগনে সূর্য। কখনও গরু-ছাগলের মতো পুলিশের তাড়া খেয়েছি, আবার কখনও এক হাতা খিচুড়ির জন্য কার্যত ভিখারির মতো দাঁড়িয়েছি।” তাঁর ক্ষোভ, “এত কষ্ট করে বাড়ি ফিরেও কোনও লাভ হল না। গ্রামের স্কুলে কোনও মতে থাকার জায়গা পেলেও, তেমন কোনও পরিষেবা পাইনি পঞ্চায়েত, প্রশাসনের থেকে। রাজনৈতিক দলের নেতাদের দেখা মেলেনি।তবে কিছু যুবক এগিয়ে এসেছিলেন।” কেরলে কাঠের মিস্ত্রির কাজ করেন পলাশির বাসিন্দা নজরুল শেখ। তাঁর কথায়, “গ্রামে ফিরে দুঃসহ অভিজ্ঞতা হয়েছিল। সে দিন কাউকে পাশে পাইনি। স্কুলে থাকার ব্যবস্থা হলেও জল বা খাবারের কোনও ব্যবস্থা ছিল না।”

পরিযায়ী শ্রমিকদের অনেকেই জানান, সেদিন নিঃশর্তে যাঁরা এগিয়ে এসেছিলেন তাঁদের অনেকেই ছিলেন বামেদের রেড ভলান্টিয়ার্স। বাম নেতাদের দাবি, তাঁরা ছাড়া অন্য কোনও রাজনৈতিক দল পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্দশার কথা ভাবেনি। কেউ তাঁদের মতো পরিযায়ী শ্রমিকদের পাশে এসে দাঁড়ায়নি। তাই ভোট দিতে কোনও পরিযায়ী শ্রমিক বাড়ি ফিরলে বামদেরই ভোট দেবেন। পরিযায়ী শ্রমিকদের কথায় তার খানিক আভাসও পাওয়া গিয়েছে। শ্রমিক সেলিম মণ্ডলের কথায়, “সে দিন যাঁদের পাশে পেয়েছি, তাঁদের কথাই ভাবব।’’ (চলবে)

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Lok Sabha Election 2024 migrant labour

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy