সর্ষের মধ্যেই ভুত!
মালখানায় রাখা লক্ষাধিক টাকার ‘বাজেয়াপ্ত’ মালপত্র গোপনে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগে বহরমপুরের জেলা আবগারি দফতরের সতীশ সিংহ নামে এক সাব-ইন্সপেক্টরকে রবিবার রাতে গ্রেফতার করল রঘুনাথগঞ্জ থানার পুলিশ। সেই সঙ্গে জঙ্গিপুর শহরের মহাবীরতলা পাড়া থেকে দেবব্রত দাস নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দু’জনকেই সোমবার জঙ্গিপুর মহকুমা আদালতে হাজির করা হলে ৪ দিনের জন্য পুলিশ হেফাজতে পাঠান বিচারক।
আবগারি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জঙ্গিপুর রেঞ্জের ডেপুটি এক্সাইজ কালেক্টর আলি ইমরান শনিবার দুপুরে রঘুনাথগঞ্জ থানায় সতীশ সিংহের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেন। তার ভিত্তিতে রবিবার রাতে রঘুনাথগঞ্জের বাড়ি থেকে সতীশবাবুকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আলি ইমরান বলেন, “বিভাগীয় পর্যায়ে তদন্তের পর মুর্শিদাবাদের অতিরিক্ত জেলাশাসকের নির্দেশে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি। তবে এই নিয়ে আমি কোনও মন্তব্য করব না।” মন্তব্য করতে চাননি মুর্শিদাবাদের আবগারি দফতরের জেলা কালেক্টর দেবাশিস রায়ও।
জেলা প্রশাসনের কর্তা হিসেবে আবগারি দফতরের নজরদারির ভার অতিরিক্ত জেলাশাসক (এলআর) অরবিন্দ কুমার মিনার। তিনি জানান, ধৃত ওই এসআই সতীশ সিংহ গত সেপ্টেম্বর মাসে রঘুনাথগঞ্জে জঙ্গিপুর রেঞ্জে ওসি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ১৯ ও ২০ সেপ্টেম্বর অফিসে তাঁর হেফাজতে থাকা মালখানায় জমা ছিল কয়েকশো মদ ও স্পিরিট ভর্তি বোতল, সাইকেল, অ্যালুমিনিয়ামের হাঁড়ি, জ্যারিকেন ইত্যাদি। এর সবটাই অভিযুক্ত সতীশ সিংহ রাতারাতি গায়েব করে বিক্রি করে দেন বলে অভিযোগ। তৎকালীন জঙ্গিপুর রেঞ্জের ডেপুটি এক্সাইজ কালেকটর বিভাগীয় তদন্ত করে একটি রিপোর্ট দেন। সেই তদন্ত রিপোর্ট পাঠানো হয় কলকাতায় রাজ্যের এক্সাইজ দফতরের কমিশনারের কাছে। তাঁরই নির্দেশে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করা হয় আবগারি দফতরের জঙ্গিপুর রেঞ্জের ওই ওসি-র বিরুদ্ধে। রবিবার তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
জানা গিয়েছে, ধৃত ওসি সতীশ সিংহের বাড়ি বিহারের পটনায়। আর চার বছর পর তাঁর চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার কথা। গত ১১অক্টোবর তিনি জঙ্গিপুর রেঞ্জ অফিস থেকে বহরমপুরে আবগারি বিভাগের জেলা দফতরে বদলি হন। তবে অন্যত্র বদলি হলেও রঘুনাথগঞ্জের বাসাতেই থাকছিলেন তিনি। গ্রেফতারের পর সতীশবাবু বলেন, ‘‘মালখানায় রাখা বহু মালপত্র নিলামে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া আমি বদলি হয়ে যাওয়ার সময় অন্য অফিসারকে চার্জও বুঝিয়ে দিয়ে গিয়েছি। এতদিন পর আমাকে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানো হচ্ছে।”
ধৃত ওসিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে রাতেই জঙ্গিপুর থেকে ধরা হয় দেবব্রতবাবুকে। মালখানা থেকে খোওয়া যাওয়া মালপত্র পাচারে সহযোগিতার অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। সোমবার দু’জনকে জঙ্গিপুর মহকুমা আদালতে হাজির করা হয়। বিচারক শুভ্রকান্তি ধর পুলিশের আর্জি মেনে তাঁদের দু’জনকেই ৪ এপ্রিল পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। সরকারি আইনজীবী সোমনাথ চৌধুরী বলেন, “অভিযুক্ত দু’জনের বিরুদ্ধেই ফৌজদারি কার্যবিধির জামিন অযোগ্য ৪০৯ ধারায় মামলা রুজু করেছে পুলিশ। বহরমপুরে বিশেষ আদালতে কেবলমাত্র এই ধারার মামলা বিচার হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy