ভট্টাচার্যপাড়ায় প্রস্তুতি এখন তুঙ্গে। ছবি: গৌতম প্রামাণিক
বহরমপুর শহরের গোরাবাজার বাগানপাড়ার পুজোকর্র্তারা অন্যদের টেক্কা দিতে চান আন্তরিকতার সওগাত বিলিয়ে। উদ্যোক্তাদের দাবি এমনটাই। পুজো কমিটির অন্যতম কর্তা দীপঙ্কর নাগ বলেন, “পঞ্চমী থেকে দ্বাদশী পযর্ন্ত চলবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। নবমীতে পাড়া-প্রতিবেশী মিলিয়ে প্রায় দু’ হাজার আবালবৃদ্ধবনিতা পাত পেড়ে নবমীর মধ্যাহ্ন ভোজ সারবে। জজকোর্টের মোড় থেকে নিমতলা মোড় পর্যন্ত প্রায় আধ কিলোমিটার দীর্ঘ রাজপথ সেজে উঠবে আলোর রোশানাইয়ে।” তাঁদের সাবেকি ঘরানার প্রতিমা বনকাপাসির সাজে সজ্জিতা। পাশেই ‘অজানা সঙ্ঘের’ ৩৫ ফুট উঁচু মণ্ডপের ভিতরে অধিষ্ঠান করবে ডাকের সাজের সাবেকি দেবীমূর্তি।
এ বার পুজোয় গোরাবাজারকে গুনে গুনে গোল দেওয়ার বাসনায় আবেগে ফুটছে মধ্য বহরমপুরের বিটি কলেজ ভট্টাচার্য পাড়া, ‘নতুনবাজার মিলন সঙ্ঘ’ ও ‘সেবা মিলনী’। সেবা মিলনীর কণর্ধার শুভদ্বীপ বিশ্বাসের দাবি, “আমাদের মণ্ডপ চত্বরে মিশরের শহর গিজানেক্রিপোলিক্স থেকে ‘তুলে আনা হয়েছে’ গ্রেট পিরামিড চত্বরের ৩০ থেকে ২২ ফুট উচ্চতার ৬টি মমি। অপূব সেই শিল্প নিদর্শনের প্রতিরূপগুলি মাটির তৈরি। থার্মোকল ও রঙের সাহায্যে ৭ ফুট বাই ৩ ফুট আয়তনের কয়েকটি ক্যানভাসে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এখনও পাঠোদ্ধার না হওয়া মিশরের প্রাচীন লিপি হেরিওগ্লিফিক্স। আর থাকছে পৃথিবীর অষ্টম আশ্চযের্র অন্যতম মিশরের ফোয়োনিক্স-এর ৮ ফুট দৈর্ঘ্যের মাটির মডেল।”
ইজ্জতের লড়াই বলে কথা! তার উপরে এ বার ৭৫ বছর পূর্তি। ফলে বিটি কলেজ ভট্টাচার্য পাড়া পুজো কমিটির সম্পাদক সুজয় সরকারের প্রত্যয়ী ঘোষণা, “মণ্ডপ ও মণ্ডপের বাইরে, এমনকি দেবীর বেদীতেও লুপ্তপ্রায় লোকশিল্প পুতুলনাচের নানা আঙ্গিক ব্যবহার করা হয়েছে। বিভিন্ন বিভঙ্গে পুতুলনাচ দিয়ে এ বার দর্শকদের মন কেড়ে নেওয়ার জোরদার আয়োজন রয়েছে। আর তার জন্য রয়েছে প্রায় ৪০০ পুতুল। আলোআঁধারি খেলার মধ্যে এ বার দর্শনার্থীরা থ্রি ডি ডাইমেনসনে দেবীদশর্ন করবেন। অন্যদের তাক লাগাতে ওই শিল্পকর্ম স্রষ্টাদের কলকাতা থেকে ‘হায়ার’ করে আনা হয়েছে।” অষ্টাদশ শতাব্দীতে বহরমপুর শহরের উত্তর প্রান্তের সৈয়দাবাদ এলাকা ছিল আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকেন্দ্র। সে সব এখন ইতিহাস। এ বার পুজোর লড়াইয়ে হৃতগৌরব সৈয়দাবাদের বনেদিয়ানা ধরে রাখার চেষ্টায় কসুর করেনি ‘নবরূপ সঙ্ঘ’। এ বার তাদের পুজোর থিম জেলা, রাজ্য, বা দেশের বাইরে থেকে আমদানি করতে হয়নি। সৈয়দাবাদের ‘নবরূপ সঙ্ঘ’ পুজো কমিটির কর্মকর্তা অঞ্জন ঘোষ বলেন, “আজিমগঞ্জের বড়নগরে রয়েছে রানি ভবানী প্রতিষ্ঠিত চার বাংলার মন্দির। বাংলার সেই টেরাকোটার শিল্পে সমৃদ্ধ প্রাচীন মন্দিরের আদলে তৈরি হয়েছে আমাদের এ বারের পুজো মণ্ডপ। সেই মণ্ডপে থাকছে রাজস্থানি ঘরানার দেবীপ্রতিমা। মণ্ডপের সামনে থাকছে ৩টি শিব মন্দির আর মধ্যিখানে নাটমন্দির। নাটমন্দিরে পুজোর ক’দিন বসবে বাউল ও কবিগানের আসর।”
খাগড়া স্বর্গধাম ও খাগড়া শ্মশানঘাটের পুজো কমিটির কর্তারা প্রতিবারের মতো এ বারেও প্রতিমার শৈলী দিয়েই ভক্তদের মন জয়ের আপ্রাণ চেষ্টা জারি রেখেছেন। একদা বিশ্বজোড়া খ্যাতি ছিল বন্দরনগর কাশিমবাজারের। বর্তমানে কাশিমবাজারের সেই খ্যাতির জৌলুস আর নেই। ফলে বার্ধক্যের মর্মবেদনা হাড়ে হাড়ে টের পায় কাশিমবাজার। বার্ধক্যের সেই জীবনবোধই এ বার কাশিমবাজার ভাটপাড়া মিলনী ক্লাবের পুজোর থিম ‘বৃদ্ধাশ্রম’। মণ্ডপের তিন দিকে সাজানো থাকবে মৃন্ময়ী মূর্তির বৃদ্ধবৃদ্ধা ও তাঁদের জীবন যন্ত্রণার প্রতিচ্ছবি। ভাটপাড়ার বীররসের মহিষাসুরমর্দিনীর আরাধনা এ বার জারিত বৃদ্ধাশ্রমের করুণরসে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy