হরিণঘাটা, চাকদহ, কল্যাণীর মতো এলাকা তাঁর খাসতালুক। নদিয়ার প্রত্যন্ত গাঁ-গঞ্জও তাঁর হাতের তালুর মতো চেনা। একেবারে তৃণমূল স্তরের কর্মীদেরও তিনি নামে চেনেন। কারণে অকারণে তাঁকে ফোন করলে তিনি হাসিমুখে আগে কুশল জানতে চান। তারপর যান অন্য কথায়। অথচ তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সেই মুকুল রায়ের একবারের জন্যও পা পড়ল না নদিয়ায়।
দলের একাংশের কথায়, এমনটা তো কথা ছিল না। গত পুরভোটেও দাদা এখানে পড়ে থেকে ভোট করিয়ে গিয়েছেন। কর্মীরাও তখন ফুটছিল। অথচ এত গুরুত্বপূর্ণ একটি নির্বাচনে তিনি না আসায় দলের কর্মীরা হতাশ। প্রশ্ন উঠছে দলেও। নদিয়া জেলার নির্বাচনে এর আগে এমন পরিস্থিতিও কখনও তৈরি হয়নি।
যদিও দলের জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত বলছেন, “মুকুল রায় আমাদের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। দলের তিনি সাংগঠনিক পর্যবেক্ষকও। তিনি প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন ও প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়েছেন।” আর প্রচারে না যাওয়া নিয়ে মুকুল রায় অবশ্য কিছু বলতে চাননি।
বনগাঁয় নিয়মরক্ষার প্রচারে গেলেও নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জে প্রচারে যাননি মুকুল রায়। দু’টি নির্বাচনের প্রেক্ষাপট আলাদা হলেও কৃষ্ণগঞ্জে মুকুলবাবু আসবেন কি আসবেন না, তা নিয়ে বুধবার বিকেল পর্যন্ত দোলাচল ছিল। বনগাঁর প্রচারে গেলেও কৃষ্ণগঞ্জে কেন তিনি গেলেন না তা নিয়ে দলের কর্মীদের মধ্যে বিস্তর প্রশ্ন রয়েছে। মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত দলের স্থানীয় নেতাদের কাছে খবর ছিল মুকুলবাবু একবারের জন্যও আসতে পারেন। কোনও প্রকাশ্য সভা না করলেও স্থানীয় কর্মীদের সঙ্গে সভা করবেন। প্রয়োজনীয় ‘টিপস’ দেবেন। তবে কখন তিনি আসবেন তা কেউই জানতেন না। কৃষ্ণগঞ্জ থেকে মুকুলবাবুর বাড়িও খুব দূরে নয়।
সপ্তাহখানেক আগে দলের জেলা নেতারা জানতেন, দিল্লি থেকে ফিরে কৃষ্ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় প্রার্থী সত্যজিৎ বিশ্বাসকে নিয়ে মিছিল করবেন তিনি। সে সময়ে দলের তরফে স্থানীয় নেতৃত্বকে জানানো হয়েছিল, মুকুলবাবু দিল্লিতে। ফিরলে জানানো যাবে, কখন কৃষ্ণগঞ্জে যাবেন তিনি। কিন্তু মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত হয় মোবাইল ফোন স্যুইচড্ অফ থেকেছে মুকুলবাবুর অথবা নদিয়ার নেতাদের কোনও ফোনই তিনি ধরেননি। যা সচরাচর ঘটে না বলেই জানাচ্ছেন মুকুল-ঘনিষ্ঠেরা। বুধবার সকাল থেকেই দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা ধরে নেন, আর আসার সম্ভাবনা নেই দাদার। অনেককে বলতে শোনা গিয়েছে, সিবিআই ওঁকে চাপ দিয়েছে, ভোটের প্রচার করা যাবে না। সে কারণেই আসতে পারছেন না দাদা। তৃণমূলের জেলা যুব নেতার কথায়, “এই পরিস্থিতিতে আমাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যত অনিশ্চিত মনে হচ্ছে।”
মুকুলবাবুকে নিয়ে ইদানীং বেশ অস্বস্তিতে পড়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। সিবিআইকে তিনি সহযোগিতা করবেন বলে বার বার আশ্বাস দিচ্ছেন, দরকারে একশো বার ডাকলে একশো বার যাবেন বলছেন। দলনেত্রীকে নানা ভাবে এড়িয়ে চলছেন। সারদা-কাণ্ডে গরিব মানুষের টাকা ফেরত পাওয়া উচিত বলে মনে করছেন। তৃণমূলের অন্য নেতা-নেত্রীদের মতো সারদা-কাণ্ডের তদন্তে সিবিআইয়ের ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছেন না। সব মিলিয়ে দলের অবস্থান থেকে যেন অনেকটাই নিজেকে সরিয়ে রেখেছেন মুকুল। আর তাতেই নদিয়ায় দলের অনুগামীরা চিন্তায় রয়েছেন। কৃষ্ণগঞ্জে ঠিক কী করা উচিত তাঁদের তা নিয়ে কিছু বলতে চাননি এই নেতা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy