ছাত্র সংখ্যা কমে যাওয়ায় শিশুশিক্ষা কেন্দ্রগুলি বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দিল রাজ্য সরকার। শুধু তাই নয়, যে সব শিশু শিক্ষাকেন্দ্রগুলির নিজস্ব জমি নেই বন্ধ করে দিতে বলা হয়েছে সেগুলিও। রাজ্য পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের তরফে উপ-সচিবের জারি করা ওই নির্দেশের ফলে মুর্শিদাবাদ জেলায় প্রায় ২০০টি শিশু শিক্ষাকেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
মুর্শিদাবাদ জেলার শিশু শিক্ষা মিশনের নোডাল অফিসার শৌভিক চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ জেলা দফতরগুলিতে রাজ্য সরকারের তরফে এই মর্মে নির্দেশ এসেছে। যেহেতু শিশু শিক্ষাকেন্দ্রগুলি ব্লক স্তরে নিয়ন্ত্রিত হয় তাই রাজ্য সরকারের সেই নির্দেশনামা বিডিওদের কাছে পাঠানো হয়েছে। বিডিওদের কাছ থেকে রিপোর্ট পেয়ে সেই মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
জেলার শিশু শিক্ষা মিশনের কো-অর্ডিনেটর দেবব্রত বিশ্বাস বলেন, “জেলায় বর্তমানে ১৫৮৪টি শিশু শিক্ষাকেন্দ্র রয়েছে। প্রতিটি শিক্ষাকেন্দ্রে প্রাক-প্রাথমিক থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়। পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় ১ লক্ষ ৯০ হাজার। এর মধ্যে প্রায় ৫০টি কেন্দ্রে মোট ছাত্র সংখ্যা ২০রও নীচে। সেই সব কেন্দ্রগুলি বন্ধ করে ছাত্রদের নিকটবর্তী শিশু শিক্ষাকেন্দ্রে বা সরকারি প্রাথমিক স্কুলে ভর্তি করানো হবে। ওই শিক্ষাকেন্দ্রগুলিতে যে সব সহায়িকা শিক্ষিকা রয়েছেন তাদের ওই পঞ্চায়েতেরই পাশের শিক্ষাকেন্দ্রে বদলি করা হবে। উঠে যাওয়া শিক্ষাকেন্দ্রের যদি নিজস্ব জমিতে সরকারি ভবন থাকে তবে সেই ভবন স্থানীয় আইসিডিএস কেন্দ্র বা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রয়োজনে সাধারণের কাজে ব্যবহৃত হবে।”
তিনি আরও বলেন, “এ ছাড়াও যে সমস্ত শিশু শিক্ষাকেন্দ্রের নিজস্ব জমি নেই, ফলে সরকারি ভবন তৈরি করা যায়নি ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে সেগুলিও বন্ধ করে দেওয়া হবে। তবে আগামী তিন মাসের মধ্যে এলাকার কারও কাছ থেকে জমি মেলে তবেই রাজ্য সরকার সেখানে ভবন নির্মাণের জন্য অর্থ বরাদ্দ করবে। মুর্শিদাবাদ জেলায় জমিহীন শিশু শিক্ষাকেন্দ্রের সংখ্যা প্রায় ১৫০। সব মিলিয়ে প্রায় ২০০টি শিশু শিক্ষাকেন্দ্র বন্ধ হচ্ছে জেলায়।”
১৯৯৭ সাল থেকে প্রাথমিক শিক্ষার পাশাপাশি স্কুলছুট ছাত্রছাত্রীদের স্কুলমুখো করার জন্য শিশু শিক্ষাকেন্দ্র চালু হয় রাজ্যে। পরে প্রাথমিক স্কুলগুলির মতোই শিক্ষাক্রম চালু করা হয় সেগুলিতে। রাজ্যে বর্তমানে ১৬১০৩টি শিশু শিক্ষাকেন্দ্রে ১২৩৮৪৬৯ জন ছাত্রছাত্রী রয়েছে।
রাজ্যের শিশু শিক্ষা দফতরের এক কর্তা জানান, শিশু শিক্ষাকেন্দ্রে পড়তে আসা শিশুদের সংখ্যা সব চেয়ে বেশি মুর্শিদাবাদ জেলাতেই। গড়ে ১২০। সেই জেলাতেই যখন ছাত্র ও জমির অভাবে ২০০টি শিক্ষাকেন্দ্র উঠে যাওয়ার অবস্থায় তখন দার্জিলিং, বাঁকুড়া, পুরুলিয়ায় মতো জেলায় শিশু শিক্ষাকেন্দ্রগুলির অবস্থা সহজেই অনুমেয়। বাঁকুড়ায় গড়ে ছাত্র রয়েছে ৪০.৫ শতাংশ, দার্জিলিংয়ে ৩০ শতাংশ এবং পুরুলিয়ায় ৪৭ শতাংশ পড়ুয়া। তাতে দৈনিক হাজিরা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে।
তা সত্বেও রাজ্যে অন্তত হাজার তিনেকের বেশি শিশু শিক্ষাকেন্দ্র বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি বলেন, “আশা করছি নভেম্বর মাসের মধ্যেই সব জেলা থেকে রিপোর্ট চলে আসবে। সেই রিপোর্ট মতোই ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানুয়ারি মাসে শুরু হওয়া নতুন শিক্ষাবর্ষ থেকে। তবে শিশু শিক্ষাকেন্দ্র বন্ধ হলেও কোনও সহায়িকারই চাকরি যাওয়ার প্রশ্ন নেই।” সরকারের এই সিদ্ধান্তে উঠে আসছে একটি প্রশ্ন। যদি দেখা যায় নির্দেশিকা অনুসারে পড়ুয়া বা জমি না থাকার জন্য পাশাপাশি দু’টো শিশু শিক্ষাকেন্দ্র উঠে গেল সে ক্ষেত্রে পড়ুয়ারা কোথায় যাবে। উত্তর জানা নেই প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদেরও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy