Advertisement
E-Paper

স্কুলের পথে ভরসা কেবল বাঁশের সাঁকো

এক পাড়ে স্কুল। অন্য পাড়ে পড়ুয়াদের গ্রাম। মাঝে বিল জোড়লদহ। সেতু নেই বলে চারটি গ্রামের কয়েকশো ছাত্রছাত্রীকে লালগোলা থানার প্রত্যন্ত এলাকার লস্করপুর হাইস্কুলে (দেড়-দুই কিলোমিটার) পৌঁছতে ঘুরপথে যেতে হত ৬-৭ কিলোমিটার। অবশেষে ১০০ ফুট চওড়া বিলের উপর শক্তপোক্ত বাঁশের সাঁকো বানানো হয়েছে। সেই সাঁকোই এখন পাইকপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের খোসালপুর, চোঁয়াপুকুর, রাজানগর ও দেওয়ানসরাই গ্রাম পঞ্চায়েতের কালিয়াগাছি মিলে চারটি গ্রামের শিক্ষা প্রসারের সাঁকোও বটে।

অনল আবেদিন

শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:০৪

এক পাড়ে স্কুল। অন্য পাড়ে পড়ুয়াদের গ্রাম। মাঝে বিল জোড়লদহ। সেতু নেই বলে চারটি গ্রামের কয়েকশো ছাত্রছাত্রীকে লালগোলা থানার প্রত্যন্ত এলাকার লস্করপুর হাইস্কুলে (দেড়-দুই কিলোমিটার) পৌঁছতে ঘুরপথে যেতে হত ৬-৭ কিলোমিটার। অবশেষে ১০০ ফুট চওড়া বিলের উপর শক্তপোক্ত বাঁশের সাঁকো বানানো হয়েছে। সেই সাঁকোই এখন পাইকপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের খোসালপুর, চোঁয়াপুকুর, রাজানগর ও দেওয়ানসরাই গ্রাম পঞ্চায়েতের কালিয়াগাছি মিলে চারটি গ্রামের শিক্ষা প্রসারের সাঁকোও বটে।

যে দিক দিয়েই যাওয়া যাক দেওয়ানসরাই গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রত্যন্ত এলাকার লস্করপুর হাইস্কুল থেকে ভগবানগোলা-জঙ্গিপুর ভায়া লালগোলা রাজ্য সড়কের দূরত্ব ৭ কিলোমিটারের কম নয়। ওই তল্লাটের অধিকাংশ পুরুষকেই রাজমিস্ত্রি ও জোগাড়ের কাজে বছরভর জেলা ও রাজ্যের বাইরে কাটাতে হয়। রুটিরুজি জোটাতে বাড়ির দাওয়ায় বসে দিনরাত এক করে মহিলারা বিড়ি বাঁধেন। এমন একটি পিছিয়ে পড়া আর্থিক কাঠামোর গ্রামীণ এলাকায় বছর চারেকের মধ্যে শিক্ষকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় গড়ে উঠেছে সুদৃশ্য চার তলা বিশাল স্কুল ভবন। গ্রামের মাঝের যেন কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবন। তবুও বাড়ির থেকে মাত্র দেড়-দু’ কিলোমিটার দূরের এত সুন্দর স্কুল ভবনে পড়তে যেতে পারে না খোসালপুর, চোঁয়াপুকুর, রাজানগর ও কালিয়াগাছি গ্রামের কয়েক শো ছাত্রছাত্রী। যারা আসে তাদের দেড়-দু’ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয় ঘুরপথে ৬-৭ কিলোমিটার। কারণ, স্কুল ও ওই গ্রামগুলির মাঝে বিল জোড়লদহ। বিলের উপর কোনও সাঁকো নেই।

থাকবেই বা কী করে! সেচ দফতরের জোড়লদহ বিলের দু’পাড়ে রয়েছে ব্যক্তি মালিকানার জমি। লস্করপুর হাইস্কুলের প্রধানশিক্ষক জাহাঙ্গির আলম বলেন, “বিলের উত্তর-পূর্ব দিকে স্কুল। আর দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে খোসালপুর, চোঁয়াপুকুর, রাজানগর ও কালিয়াগাছি মিলে ৪টি গ্রামের অবস্থান। বিলে সাঁকো না থাকায় ওই চারটি গ্রামের ছেলেমেয়েদের লস্করপুর হাইস্কুলে লেখাপড়া করা খুব কষ্টের ব্যাপার বলে অভিভাবকরা আমাদের অনেক বার জানিয়েছেন। বাস্তব সমস্যার কথা জানিয়ে স্থানীয় দুই সমাজসেবী রবিউল ইসলাম ও মতিউর রহমানের দ্বারস্থ হলাম। জমি সঙ্কটের বাধা দূর করতে তাঁরা দু’জনে আন্তরিকতার সঙ্গে আসরে নেমে পড়েন। সফলও হলেন।” জুড়লদহ বিলের ওই জায়গার দু’পাড়ে রয়েছে লালগোলার দানবীর রাজা যোগীন্দ্রনারায়ণ রায়ের উত্তরপুরুষ প্রয়াত ঋষিন্দ্রনারায়ণ রায় ও স্থানীয় আজাদ আলির জমি।

রবিউল ইসলাম ও মতিউর রহমান বলেন, “বিলের উপর সেতু না হয় করা গেল। কিন্তু সেতুতে ওঠা ও সেতু থেকে নামার জন্য ব্যক্তি মালিকানার ওই জমি ছাড়া গত্যন্তর নেই। ফলে প্রয়াত ঋষিন্দ্রনারায়ণ রায়ের বর্তমান বংশধরদের দ্বারস্থ হলাম। ইটভাটার মালিক আজাদ আলির সঙ্গে আলোচনা শুরু হল। তাঁরা সদয় মনোভাব দেখিয়ে এগিয়ে এলেন।’’ ঋষিন্দ্রনারায়ণ রায়ের বংশধর সতীন্দ্রনারায়ণ রায় ওরফে নন্দবাবু ও ইটভাটার মালিক আজাদ আলি দু’জনেই বলেন, “ছোট ছেলেমেয়েদের স্কুলে পৌঁছতে কী রকম কষ্ট হয় তা এক দিন আমরা নিজেরাই প্রত্যক্ষ করি। তারপরই সেতু তৈরির জন্য জমিটা দান করা হয়। বিলে সেতু নির্মাণ হওয়ায় ছাত্রছাত্রী ছাড়াও ওই তল্লাটের বেশ কয়েকটি গ্রামের লোকজনের যাতায়াতের ‘শর্টকাট’ পথ তৈরি হয়েছে। আমাদের সামান্য দানে সমাজের বৃহৎ অংশের মানুষের উপকার হওয়ায় আমরাও খুশি।” নন্দবাবু বলেন, “সেতুর প্রয়োজনে বিঘে খানিক জমি দেওয়া হয়েছে।” বছর তিনেক আগে কেনা জমি থেকে কাঠা পাঁচেক জমি দিয়েছেন আজাদ আলি।

কিন্তু বাঁশ কেনা ও মজুরের পারিশ্রমিকের বাবদ প্রয়োজন লাখ পাঁচেক টাকা। রবিউল ইসলাম ও মতিউর রহমান বলেন, “প্রথমে বিভিন্ন লোকজনের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করা হয়। সেই টাকায় শক্তপোক্ত ভাবে নির্মাণ করা হয় বাঁশের সাঁকো। সেই খরচের অধিকাংশই দেওয়ানসরাই গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে ফেরত দেওয়া হয়েছে। বাকিটাও পঞ্চায়েত থেকে ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি মিলেছে।” গত ১২ ডিসেম্বর সেই সাধের সেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। এখন কিশোর-কিশোরীরা নবনির্মিত সাঁকো দিয়ে সাইকেল চালিয়ে সহজেই বাড়ি থেকে স্কুল ও স্কুল থেকে বাড়ি পৌঁছে যাচ্ছে। সাঁকো নির্মাণ করতে পেরে রবিউল ও মতিউরের আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। অস্থায়ী বাঁশের সাঁকোর বদলে সেখানে মৎস্য দফতর থেকে স্থায়ী কংক্রিটের ঢালাই সেতু কী ভাবে নির্মাণ করা যায়, সেই ভাবনায় আপাতত মগ্ন দুই প্রৌঢ়-- মতিউর ও রবিউল।

bamboo bridge joroldaha laskarpur high school lalgola anal abedin
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy