চলছে মহড়া। থানারপাড়ায় কল্লোল প্রামাণিকের তোলা ছবি।
ঈদের সময়ে বাড়ি ফেরেন ঘরের ছেলেরা। নদিয়া-মুর্শিদাবাদের বহু মানুষ কর্মসূত্রে বাইরে থাকেন। ঈদের সময়ে তাঁরা যখন বাড়ি ফেরেন, গ্রামের অর্থনীতিও তাতে উপকৃত হয়। এই ঘরের ছেলেরা বাড়ি ফেরার সময় সঙ্গে নিয়ে জমিয়ে রাখা টাকা। সেই টাকা খরচ হয় পারিবারিক নানা কাজে। তাই ঘরের ছেলেরা ফেরার সঙ্গে সঙ্গে সেই টাকার জোগানও উৎসবে বাড়তি জোয়ার আনে।
সেই জেয়ারেই ঈদ সামাজিক উৎসবের আকার নেয়। এ বারও উৎসবের দিনে বহরমপুর ও ডোমকলে হবে নাটক। গ্রামের কুসংস্কার থেকে সামাজিক নানা ব্যাধির চিত্র ফুটে উঠবে সে সব নাটকে। তেহট্টের থানারপাড়া এলাকার পন্ডিতপুর, ভিটেপাড়া গ্রামে হবে ক্রিকেট ও ফুটবল প্রতিযোগিতা। সীমান্তের গ্রাম গান্ধিনায় হবে মূকাভিনয়, হরবোলা ক্যুইজ। আর এ সবের জন্য ওই গ্রামগুলিতে চলছে নিয়মিত অনুশীলন। তাই ঈদের প্রায় সপ্তাহ খানেক আগেই ঈদের খুশি গায়ে মাখছে গ্রামের মানুষ। তেহট্টের থানারপাড়ার বাসিন্দা মোক্তার হোসেন বলেন, “একটা সময় মানুষ ঈদের দিন বা কয়েকটা ঘণ্টাই শুধু আনন্দ করে কাটিয়ে দিত।
কিন্তু এখন নতুন প্রজন্ম ওই খুশির দিনটা ছাড়াও উৎসবকে আরও কয়েকটি দিনে ছড়িয়ে দিতে চাইছে। তাতে যেমন থাকছে আনন্দের উপকরণ, তেমনই থাকছে সামাজিক উপকারও।” পণ্ডিতপুরের খুদে ক্রিকেটার অষ্টম শ্রেণির ছাত্র মুকাররাম হোসেনের কথায়, “বড়রা ঈদের আনন্দটাকে তাদের মতো করে উপভোগ করেন। কিন্তু ঈদের নামাজ শেষ হলেই আমাদের আনন্দটা ফুরিয়ে যায়। ফলে এই দিনটাকে আমরাও যাতে উপভোগ করতে পারি তার জন্য ছোটদের ক্রিকেট প্রতিযোগিতার আয়োজন হওয়ায় আমরা খুশি।”
ডোমকল বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক আফাজুদ্দিন বিশ্বাস বলেন, “ঈদ উৎসব আর একদিনে মিটে যাচ্ছে না। বেশ কয়েকদিন ধরে এই উৎসব চলছে। তাই ব্যবসায়ীরা খুশি। কারণ বেশিদিন ধরে উৎসব চললে সব ভাবেই কেনাকেটা বাড়ছে।” ইসলামপুর বাজার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সম্পাদক শঙ্কর মণ্ডল জানান, এই ঈদেই বাড়িতে ফেরার প্রবণতা সব থেকে বেশি থাকে। তিনি বলেন, “ঈদে পরিবারের সঙ্গে আনন্দে যোগ দিতে ভিন রাজ্য থেকে ঘরে ফেরে বাড়ির ছেলেরা। তাঁরা পরিবারকে খুশির দিনে ভার উপহার দিতে চান। সে কারণেই ব্যবসা বাড়ছে। অনেক ব্যবসায়ী এই উৎসবের জন্য অপেক্ষা করে থাকেন।”
তাই কোথাও সাংস্কৃতিক মঞ্চ, কোথাও বাজির রোশনাই। আবার কোথাও তৈরি হচ্ছে ফুড পার্ক। ঈদের অনেক আগেই ঈদকে ঘিরে সাজ সাজ রব ডোমকল মহকুমা জুড়ে। কোথাও চলছে পাড়ায় পাড়ায় জোরকদমে চাঁদা তোলা, কোথাও মঞ্চের ম্যারাপ বাঁধার প্রস্তুতি। সাগরপাড়া ধনিরামপুর বা সেখপাড়ায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং আলোচনা সভা হচ্ছে।
ইসলামপুর নেতাজিপার্ক সেজে উঠবে আলোয়। ঈদের আগের দিন হবে শক্তিপুরের আতশবাজি। ছেলে বুড়োর বিনোদনের নানা আয়োজনের পাশাপাশি থাকবে ফুডপার্ক। রকমারি খাবারের পসরা নিয়ে বসবে সমন্বয় অ্যাথলেটিক ক্লাবের সদস্যরা। থাকবে জমাটি আড্ডার আসরও। ক্লাবের সম্পাদক মিজানুর রহমানের কথায়, “বছর ছ’য়েক আগে ক্লাবের সদস্যরা সকলে মিলে হঠাৎ সিদ্ধান্ত নিই, ঈদের দিনটাকে আরও আনন্দমুখর করে তোলার জন্য। তারপর থেকে শুরু। প্রথমে ছোট আকারে হলেও এখন নেতাজিপার্কের গোটা মাঠ জুড়ে বসবে ঈদ মিলনী উৎসব।”
কেবল কমবয়সীদের জন্য নয়, বয়স্কদের জন্যও থাকবে তাঁদের রুচিমাফিক খাবার ও একটু আড্ডা দেওয়ার জায়গা। কেবল ক্লাবের নাম সমন্বয় নয়, এই আনুষ্ঠানকে ঘিরে ইসলামপুরের সব সম্প্রদায়ের মানুষ মেতে ওঠে ওই দিনগুলিতে। ক্লাবের সদস্য শুভঙ্কর গনাই বলেন, “ঈদ মিলনী ইসলামপুরেরই উৎসব। এখানে সব সম্প্রদায়ের লোকই আসেন। পুজোর আগে আমরা আরও একটা উৎসবে মেতে উঠি।” উৎসবে কেবল পরিচিত লোকজনের সঙ্গে আড্ডা দেওয়াই নয়, খাওয়া-দাওয়ার জন্যও বহু লোকের ভিড় হয় এই উৎসবে।
স্থানীয় বাসিন্দা ধীমান দাস বলেন, “নানা স্বাদের খাবারের টানে কেবল ইসলামপুর নয়, দূর-দুরান্তের গ্রাম থেকেও গাড়ি ভাড়া করে এখানে আসেন বিভিন্ন বয়সের মানুষ।” সাগরপাড়া ঈদ মিলনী উৎসব কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম বলেন, “প্রায় বছর দশেক থেকে আমাদের উৎসব চলছে। দু’দিনে হাজারো মানুষের সমাগম হয় এখানে।”আর এই উৎসবকে ঘিরে মহকুমার রাজপথও সেজে উঠেছে উঁচু তোরণে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy