ছেলেবেলায় খুব মনে হত ‘বাঁটুল’, ‘হাঁদা-ভোঁদা’, ‘নন্টে-ফন্টে’ কমিকস-এর স্রষ্টা নারায়ণ দেবনাথকে কেমন দেখতে? যাঁর কমিকসে ‘আবার খাবো’, ‘খাই খাই রেস্তঁরা’র ছবি থেকে কেল্টুদার কেক, কাটলেট ছিনিয়ে খাওয়া কিংবা হাঁদাকে লেঙ্গি মেরে ভোঁদার চিকেন রোস্ট নিয়ে পালানোর গল্প থাকে, তিনি নিশ্চয়ই বেজায় খাদ্যরসিক!
নারায়ণী কমিকস প্যানেলে যেসব অদ্ভুত ধ্বন্যাত্মক শব্দ (যেমন ইর্ক!, ইয়াগ্হ! ওফ্স্!, অউফ্!, ইয়েও!, আউল্ফ্!, গুল্ব!, আ্যাওক! ইত্যাদি) দেখতে পাওয়া যেত সেগুলো তাঁর মাথায় আসে কোথা থেকে? আর ছন্দ মেলানো মজার সংলাপ! তারও উদাহরণ ভুরি ভুরি। কয়েকটি নমুনা— ‘মান বাঁচার বদলে এবার আমার জান নিয়ে টানাটানি পড়ে যাবে’, ‘এই দুটোই ছিল নাটের পাণ্ডা, অবশ্য এখন এরা ঠান্ডা’, ‘আমাদের দাবী, সিন্দুকের চাবি’, ‘কি রে দাদা এযে স্রেফ কাদা’, ‘তোমার খেল খতম গুপি গুই, এবার জেলে বসে কুঁই কুঁই করো’, ‘এই আলু দিয়েই ওদের তালু ফুটো করে দেবো’, ‘এই যে পদা! নাও এই গদা! মাথা ঠান্ডা করে, লাগাও কষে জোরে’। আর তার সঙ্গে বিদঘুটে সব নাম দিতেন। যেমন– বিটকেল রাম, গুলে গুন্ডা, খুনে খ্যাদা, পাকাল পেনো, মোক্ষদা মল্লিক, বেঁটে বকেম্বর, নেংলু বাবু ইত্যাদি। সহজে অনুমেয় যে মানুষের মাথা থেকে এ সব বের হয় তিনি নিঃসন্দেহে ভীষণ রসিক মানুষ ।
স্কুলে থাকতেই দেখেছি নারায়ণ দেবনাথের চটি চটি বত্রিশ পাতার সব কমিকস বই পাওয়া যেত। সেগুলোর বাইরে তাঁর আরও অনেক কমিকস যেমন– বাহাদুর বেড়াল, গোয়েন্দা কৌশিক, পটলচাঁদ দ্যম্যাজিশিয়ান, শুটকি মুটকি— সেগুলোকে কোনও দিন বই আকারে পাইনি। কী তার কারণ জানা ছিল না। তখন ইন্টারনেটে এ সব নিয়ে কোনেও চর্চা শুরু হয়নি। যাই হোক, এ রকম অসংখ্য কৌতূহলের উত্তর খুঁজতে হাজির হয়েছিলাম নারায়ণ দেবনাথের বাড়ি। সে প্রায় ১৫ বছর আগের কথা। প্রথম দিনে আড্ডা হয়েছিল ঘণ্টা পাঁচেক! ছেলেবেলা থেকে জমে থাকা অসংখ্য প্রশ্ন করতে করতে কখন যে সময় কেটে গিয়েছিল জানতে পারিনি। মনে মনে যাঁকে ছেলেবেলা থেকে ‘গুরু’ বলে মেনেছি তাঁকে সামনে থেকে পেয়ে গল্প করার আশ কি সহজে মেটে!