Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

দেশি গ্রাম্যপ্রিয়া আঠারো মাসে দু’শো ডিম দেয়

বিজ্ঞানসম্মত ভাবে, উন্নত প্রযুক্তির পোলট্রি ফার্মে (বৃত্তাঙ্গন) খরচ অনেক বেশি। গ্রামাঞ্চলে সাধারণ লোকজনের পক্ষে এর পরিকাঠামো গড়ে তোলা কঠিন। আবার গ্রামাঞ্চলে দেশি মুরগিরা ছন্নছাড়া হয়ে যেভাবে মাঠে-ঘাটে ঘুরে-বেড়িয়ে বড় হয় (মুক্তাঙ্গন), তা-ও খুব একটা বিজ্ঞানসম্মত নয়।

সুকান্ত বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০০:৩৫
Share: Save:

বিজ্ঞানসম্মত ভাবে, উন্নত প্রযুক্তির পোলট্রি ফার্মে (বৃত্তাঙ্গন) খরচ অনেক বেশি। গ্রামাঞ্চলে সাধারণ লোকজনের পক্ষে এর পরিকাঠামো গড়ে তোলা কঠিন। আবার গ্রামাঞ্চলে দেশি মুরগিরা ছন্নছাড়া হয়ে যেভাবে মাঠে-ঘাটে ঘুরে-বেড়িয়ে বড় হয় (মুক্তাঙ্গন), তা-ও খুব একটা বিজ্ঞানসম্মত নয়। তাই অর্ধ-বৃত্তাঙ্গন পদ্ধতিতে উন্নত প্রজাতির দেশি মুরগি পালন করে বিকল্প আয়ের সংস্থানে জোর দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

অর্ধ-বৃত্তাঙ্গন মানে একেবারে খোলা হাওয়ায় মাঠে-ঘাটে যেমন বড় হবে না, আবার পোলট্রি-র মতো খুপরিতে নির্দিষ্ট খাবার খেয়েও বড় হবে না। বাড়িরই চৌহদ্দিতে কিছুটা জায়গা জুড়ে একটা ঘেরাটোপের মধ্যে থাকবে উন্নত প্রজাতির দেশি মুরগির দল। ঘেরাটোপে ঘুরে বেড়িয়ে এরা বাড়ির চারপাশের বিভিন্ন বর্জ্যপদার্থ যেমন খাবে, তেমনই প্রতিদিন প্রয়োজনমতো চালের খুদ, ধানের কুঁড়ো ও ভিটামিন-খনিজ মিশ্রিত খাবার (বয়স্ক মুরগি প্রতি ৫০-৭০ গ্রাম) সরবরাহ করতে হবে। আবার রোগ সংক্রমণ রুখতে জরুরি পরিচর্যাও করতে হবে। তবে দু’টো জিনিসে নজর দিতে হবে—এক, মুরগির বর্জ্য কৃষি সহায়ক এবং জমিতে উর্বরতা বাড়াতে সাহায্য করে, দুই, মুক্তাঙ্গন পদ্ধতিতে খোলা হওয়ায় ঘুরে-বেড়ানো মুরগির ডিম-মাংসে কম কোলেস্টেরল থাকে, যা স্বাস্থ্যের পক্ষে ভাল।

বনরাজা: শক্তসমর্থ এই দেশি মুরগিতে রোগের সংক্রমণ কম। ডিম আকারে বড়। বছরে ১৫০-১৬০টি ডিম দেয় এরা। মোরগ সাধারণত ২.২-২.৫ কেজি ও মুরগি ২.৫-৩ কেজি হয়। প্রথম ছয় সপ্তাহে দেহ-উষ্ণতা বজায় রাখার জন্য বাচ্চার যত্নের প্রয়োজন। এই সময় ম্যারেক্স ও রানিক্ষেত রোগের টিকা দেওয়া প্রয়োজন। দু’তিন মাস অন্তর কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়াতে হবে।

গ্রাম্যপ্রিয়া: উচ্চ ডিম উৎপাদক। সাদা ও রঙিন—দু’রকমের পাখি রয়েছে। এর মধ্যে সাদা প্রজাতি তুলনায় বেশি ডিম দেয়। ঠিক ভাবে খেতে দিলে মুরগি তিন মাসে দেড় কেজি ওজন হয় এবং ৭২ সপ্তাহে ১৮০-২০০টি ডিম দেয়। রোগ পরিচর্যা বনরাজার মতো।

কৃষি ব্রো: এটি মাংস উৎপাদক। এদের ওজন একটু বেশি হয়। খাদ্য ও রোগ পরিচর্যা বনরাজার মতো হলেও প্রথম চার সপ্তাহে ব্রুডিং পরিচর্যা প্রয়োজন এবং বাজারজাত করার আগে পর্যন্ত আলোর ব্যবস্থা থাকা বাঞ্ছনীয়। উঠোনে ছেড়ে পালন করা গেলেও ওজন বাড়াতে চাইলে যত্ন নিতে হবে।

মাংস উৎপাদক আর একটি উন্নত প্রজাতির দেশি মুরগি হল গিরি-রাজা। আবার ডিম উৎপাদক দেশি মুরগিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল গিরি রানি, কৃষ্ণা জে, গ্রাম্য লক্ষ্মী, কলিঙ্গ বাদামি। তবে, সব দিক দিয়ে বিচার করলে বনরাজা ও গ্রাম্যপ্রিয়াই এগিয়ে। এই প্রজাতির মুরগি পেতে নিকটবর্তী কৃষিবিজ্ঞান কেন্দ্রে যোগাযোগ করুন।

লেখক দক্ষিণ দিনাজপুর কৃষিবিজ্ঞান কেন্দ্রের বিশেষজ্ঞ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE