Advertisement
০৭ মে ২০২৪

ভাঙড়ের নতুনহাটে সভা করল নকশালরা

ডিবডিবের পরে এ বার নতুনহাট। ভাঙড়ের পাওয়ার গ্রিড এবং আরাবুল-বিরোধী আন্দোলনের শিকড় যেন আরও ছড়াচ্ছে! মাস কয়েক ধরে নকশাল সংগঠনগুলি গোপনে বৈঠক করছিল মূলত ভাঙড়ের পোলেরহাট-২ পঞ্চায়েতের খামারআইট এবং মাছিভাঙা গ্রামে।

ভাঙড়ের সভায় শর্মিষ্ঠা চৌধুরী। সোমবার সামসুল হুদার তোলা ছবি।

ভাঙড়ের সভায় শর্মিষ্ঠা চৌধুরী। সোমবার সামসুল হুদার তোলা ছবি।

শুভাশিস ঘটক
ভাঙড় শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০১৭ ০২:৪৯
Share: Save:

ডিবডিবের পরে এ বার নতুনহাট।

ভাঙড়ের পাওয়ার গ্রিড এবং আরাবুল-বিরোধী আন্দোলনের শিকড় যেন আরও ছড়াচ্ছে!

মাস কয়েক ধরে নকশাল সংগঠনগুলি গোপনে বৈঠক করছিল মূলত ভাঙড়ের পোলেরহাট-২ পঞ্চায়েতের খামারআইট এবং মাছিভাঙা গ্রামে। রবিবারই তাঁরা প্রথম চেনা গণ্ডি ছেড়ে প্রকাশ্যে হাজার খানেক গ্রামবাসীকে নিয়ে ডিবডিবে বাজারে সমাবেশ করেন। সোমবার ফের প্রকাশ্য সমাবেশ হল। এ বার নতুন ঠিকানা— নতুনহাট।

নকশাল নেতাদের দাবি, এ দিন হাজার তিনেক মানুষ এসেছিলেন। যা রবিবারের ভিড়কে ছাপিয়ে গিয়েছে। তার মধ্যে মহিলা ও কমবয়সীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। একাধিক সংগঠনের নেতারাও বক্তব্য পেশ করেন। স্লোগান ওঠে, ‘আরাবুল হটাও, ভাঙড় বাঁচাও’।

এ দিনের ভিড় দেখে প্রত্যাশিত ভাবেই নকশাল নেতারা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তাঁদের দাবি, আন্দোলন ক্রমশ জমাট বাঁধছে। একই সঙ্গে আন্দোলনকারীরা দাবি করেছেন, আরাবুল ইসলাম বা অন্য তৃণমূল নেতাদের এখানে পাঠিয়ে কাজ হবে না। তাঁদের ঢুকতেই দেওয়া হবে না। আলোচনায় বসতে হবে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই। কিন্তু এ নিয়ে প্রস্তাব দেওয়ার পরেও সরকার এখনও সেই রাস্তায় না-হাঁটায় ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন নকশাল নেতারা। আলোচনা নিয়ে সরকারের সদিচ্ছা নিয়েও তাঁদের প্রশ্ন রয়েছে। নেতাদের একাংশের বক্তব্য, এই কারণেই তাঁরা আপাতত অবরোধের রাস্তা থেকে সরছেন না। এ দিনও পোলেরহাটের পাওয়ার গ্রিড সংলগ্ন তিনটি মৌজার বিভিন্ন রাস্তা গাছের গুঁড়ি ও ইট ফেলে অবরোধ করা হয়।

তৃণমূল সূত্রের খবর, নকশাল সংগঠন সিপিআই (এমএল) রেড স্টারের নেতা অলীক এক জনের মাধ্যমে দলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি মুকুল রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মুকুলবাবু কথা বলতে রাজি হননি। অলীক অবশ্য দাবি করেন, ‘‘মুকুলবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টাই করিনি। তবে, আমরা চাই, শান্তিপূর্ণ ভাবে সমস্যার সমাধান।’’

কিন্তু সরকারের আলোচনায় বসার সদিচ্ছা নিয়েই কেন প্রশ্ন তুলছেন নকশাল নেতারা? নকশাল নেতাদের ব্যাখ্যা, গত মঙ্গলবারের তাণ্ডবে যে ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল, তাঁদের জামিন চাওয়া হয়েছিল। তাঁরা ভেবেছিলেন, ধৃতদের জামিনের ব্যবস্থা করে সরকার আলোচনায় আগ্রহের একটা ইঙ্গিত দেবে। এ জন্য ধৃতদের জামিনের বিরোধিতা না করার জন্য জেলাশাসকের কাছে আবেদনও করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু সোমবার বারুইপুর মহকুমা আদালতে ধৃতদের জামিনের বিরোধিতাই করেন সরকারি আইনজীবী। ধৃতদের মধ্যে আট জনকে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত জেল-হাজত এবং দুই নাবালককে জুভেনাইল কোর্টে হাজির করানোর নির্দেশ দেয়।

ভাঙড়কে ‘পাখির চোখ’ করে সরকার বিরোধী আন্দোলনে সুর চড়াচ্ছে বামেরাও। মুর্শিদাবাদের পরে সোমবার পুরুলিয়ায় গিয়েও তিনি ভাঙড়-কাণ্ড নিয়ে সরকারকে আক্রমণ করেন। এ দিন আর এক সিপিএম নেতা বিকাশ ভট্টাচার্য ভাঙড়-কাণ্ডে নিহত মফিজুল আলি খান এবং আলমগির মোল্লার বাড়িতে যান। বিকাশবাবু বলেন, ‘‘আক্রান্তদের সঙ্গে কথা বলেছি। পুলিশ অত্যাচার করেছে বলে অভিযোগও পেয়েছি। এ বিষয়ে বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবিতে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হবো।’’

কী করছে জেলা প্রশাসন?

প্রশাসনের কর্তারা জানিয়েছেন, ২০১৩-য় পাওয়ার গ্রিডের ১৩ একর জমি যে পদ্ধতিতে অধিগ্রহণ হয়েছিল, তার পর্যালোচনার কাজ শুরু হয়েছে। সব নথি খতিয়ে দেখা হবে কোনও ভুলভ্রান্তি হয়েছিল কিনা। আরাবুল প্রচুর টাকা নয়ছয় করেছেন বলে গ্রামবাসীরা যে অভিযোগ তুলেছেন, তা-ও দেখা হচ্ছে। এক পুলিশ কর্তা জানান, আন্দোলনকারীদের গতিবিধি দেখা হচ্ছে। নকশালদের সমাবেশে আর কোনও সংগঠন যোগ দিচ্ছে কিনা, সে ব্যাপারে নজরদারি চালানো হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sharmistha Chowdhury Naxalites meeting Bhangar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE