দায়িত্বে: ভদ্রেশ্বরে পুরপ্রধান খুনের তদন্তে গেটবাজারে চন্দননগরের নয়া পুলিশ কমিশনার অজয় কুমার (মাঝে)। ছবি: তাপস ঘোষ।
গেলেন পীযূষ পাণ্ডে। এলেন অজয় কুমার। পাঁচ মাসেই চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার পদে নতুন মুখ!
এটা হওয়ারই ছিল বলে মনে করছেন কমিশনারেটের অনেক কর্তা। কিন্তু কেন?
চলতি বছরে বেলাগাম দুষ্কৃতী-তাণ্ডবে দক্ষিণবঙ্গের ‘চম্বল’ হয়ে ওঠা হুগলিতে পুলিশের উপর সাধারণ মানুষের ভরসা তলানিতে ঠেকেছে। খুনখারাপি, বোমাবাজি, চুরি, ডাকাতি— কিছুই বাদ নেই। গুলি-বোমায় পথেঘাটে সাধারণ মানুষও জখম হয়েছেন। বছরের মাঝামাঝি শিল্পাঞ্চলের ন’টি থানাকে নিয়ে পুলিশ কমিশনারেট গড়ে লাভ কী হল, এই প্রশ্নও উঠছিল। গত মঙ্গলবার ভদ্রেশ্বরের পুরপ্রধান মনোজ উপাধ্যায় খুনের পরে সেই প্রশ্নই আরও জোরালো হয়।
আগে সাধারণ মানুষ পুলিশের ভূমিকার নিন্দা করছিলেন। মনোজ খুনের পরে জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা মন্ত্রী তপন দাশগুপ্ত থেকে অনেক নেতাও পুলিশের বিরুদ্ধে অপদার্থতার অভিযোগ তোলেন। তা নবান্ন পর্যন্ত পৌঁছেছিল। গত বুধবার ভদ্রেশ্বরে এসে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে মানুষের ক্ষোভ আঁচ করে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দুষ্কৃতীদের ধরার নির্দেশ দিয়েছিলেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু একজন বাদে এ পর্যন্ত আর কেউ ধরা পড়েনি। কেন খুন, সে ব্যাপারেও কোনও নিশ্চিত দিশা মেলেনি।
কমিশনারেটের কর্তাদের একাংশ মানছেন, অক্টোবরে ব্যান্ডেলের বৃদ্ধা সুলেখা মুখোপাধ্যায় খুনের কিনারা ছাড়া বেশির ভাগ অপরাধেরই কিনারা হয়নি। এই ‘ব্যর্থতা’তেই সরতে হল কমিশনারেটের ‘মাথা’কে। শাসকদলের নেতাদেরও অনেকে মানছেন, একের পর এক ঘটনায় সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছিল। সবশেষে মনোজ-হত্যাকাণ্ড। দুর্নীতির বিরুদ্ধে ভদ্রেশ্বরের পুরপ্রধান যে কঠোর অবস্থান নিয়েছিলেন, তাতে যে তাঁর নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে, সে কথা একাধিক কাউন্সিলর থানায় জানালেও পুলিশ গা করেনি বলে অভিযোগ। ফলে, মনোজ খুনের পরে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ মাত্রাছাড়া হয়।
এই পরিস্থিতিতেই একজন শক্তপোক্ত পুলিশ কমিশনারের খোঁজে ছিল নবান্ন। শেষ পর্যন্ত শুক্রবার রাতে পীযূষবাবুকে সরিয়ে দেওয়া হয়। সরানো হয় তেলেনিপাড়া ফাঁড়ির দায়িত্বে থাকা সাব-ইন্সপেক্টর প্রদীপ দাসকেও। রেল পুলিশের আইজি পদে থাকা অজয় কুমার আগে এই জেলার পুলিশ সুপার হিসেবে কাজ করেছেন। শিল্পাঞ্চল তাঁর চেনা মাটি।
দায়িত্ব নিয়েই শনিবার ভদ্রেশ্বরের গেটবাজারে বাড়ির কাছে যেখানে মনোজ খুন হন, সেই ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেন অজয় কুমার। তিনি বলেন, ‘‘আমি সদ্য দায়িত্ব নিলাম। এটুকু বলতে পারি, ওই ঘটনায় যুক্ত দুষ্কৃতীদের দ্রুত ধরা হবে।”
এই আশ্বাসবাণীর মাধ্যমে একই সঙ্গে পুলিশ কমিশনার সাধারণ মানুষের আস্থা বাড়ানোর কাজও শুরু করলেন বলে মনে করছেন পুলিশকর্তাদের একাংশ। জেলা তৃণমূল সভাপতি তপনবাবু অবশ্য বলেন, “যিনিই দায়িত্বে আসুন, তাঁর কাছে আমাদের প্রথম দাবি, মনোজ-খুনে দোষীদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব গ্রেফতার করা। দলের ছেলেরা পুলিশকে জানিয়েছিল, মনোজের নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কা রয়েছে। কিন্তু পুলিশ ব্যবস্থা নেয়নি। এই আফসোস চিরকাল থাকবে।”
তদন্তকারীদের একাংশ মনে করছেন, মনোজ খুনের পিছনে জেলবন্দি এক দুষ্কৃতীর হাত থাকতে পারে। তদন্তে তাঁরা জেনেছেন, আবাসন ব্যবসার জন্য ওই দুষ্কৃতীর এক শাগরেদ ভদ্রেশ্বরের কয়েকটি পুকুর এবং পুরনো বাড়ি কিনেছে। কিন্তু পুকুর বোজানোতে সায় দিচ্ছিলেন না মনোজ। বিষয়টি চ্যালেঞ্জের পর্যায়ে নেয় ওই শাগরেদ। তাই ‘গুরু’র পরামর্শ মতো সে ‘পথের কাঁটা’ সরালো কিনা, খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy