Advertisement
০৫ ডিসেম্বর ২০২৪
আঁতুড়ঘর গার্ডেনরিচ

সমুদ্রে প্রহরী বোল্ট-গতির ছোট্ট জাহাজ

সাগর-মহাসাগরের তাবৎ জাহাজ-সংসারে গতির নিরিখে তাকে বলা যেতে পারে ‘উসেইন বোল্ট’। উত্তাল সাগরেও ঘণ্টায় ৩৪ নটিক্যাল মাইল বেগে ছুটতে পারে সে! আর ক্ষমতা? তা-ও নেহাত কম নয়। ছোটখাটো চেহারা নিয়েও সাগরে জঙ্গি হানার মোকাবিলা করতে পারঙ্গম সে। সেই ক্ষমতার উৎস তার উপরে বসানো মেশিনগান।

জাহাজ নির্মাণের কাজ শুরু। হাজির জিআরএসই ও উপকূলরক্ষী বাহিনীর কর্তারা। গার্ডেনরিচে। — নিজস্ব চিত্র

জাহাজ নির্মাণের কাজ শুরু। হাজির জিআরএসই ও উপকূলরক্ষী বাহিনীর কর্তারা। গার্ডেনরিচে। — নিজস্ব চিত্র

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০১৬ ০৩:২৮
Share: Save:

সাগর-মহাসাগরের তাবৎ জাহাজ-সংসারে গতির নিরিখে তাকে বলা যেতে পারে ‘উসেইন বোল্ট’। উত্তাল সাগরেও ঘণ্টায় ৩৪ নটিক্যাল মাইল বেগে ছুটতে পারে সে!

আর ক্ষমতা? তা-ও নেহাত কম নয়। ছোটখাটো চেহারা নিয়েও সাগরে জঙ্গি হানার মোকাবিলা করতে পারঙ্গম সে। সেই ক্ষমতার উৎস তার উপরে বসানো মেশিনগান। যে-আগ্নেয়াস্ত্র রাতের আঁধারেও ঝাঁঝরা করে দিতে পারে শত্রুপক্ষকে!

দেশের নিরাপত্তা জোরদার করতে এ বার সমুদ্রে এই ধরনের ছোট জাহাজের উপরেই জোর দিচ্ছেন উপকূলরক্ষী বাহিনীর কর্তারা। ‘‘গতি, ক্ষমতা আর অস্ত্র— তিন দিক থেকেই এই জাহাজের জুড়ি মেলা ভার। আগামী দিনে বাহিনীর প্রধান বাহন হবে এই জাহাজই,’’ বলছেন উপকূলরক্ষী বাহিনীর মুখপাত্র ডেপুটি কম্যান্ড্যান্ট অভিনন্দন মিত্র। দেশের জলসীমা রক্ষায় এ-হেন পরাক্রান্ত প্রহরীর দক্ষতার গর্বের কিছুটা দাবি করতে পারে কলকাতাও। কী ভাবে? উন্নত প্রযুক্তির এই জাহাজ তো তৈরি হচ্ছে কলকাতার গার্ডেনরিচ শিপ বিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স বা জিআরএসই-তেই, জানাচ্ছেন উপকূলরক্ষী বাহিনীর কর্তারা।

বিশাখাপত্তনম ফেল না-করলে অবশ্য কলকাতার ভাগ্যে শিকে ছিঁড়ত কি না সন্দেহ। উপকূলরক্ষী বাহিনী সূত্রের খবর, এই জাহাজ তৈরির বরাত প্রথমে দেওয়া হয়েছিল বিশাখাপত্তনমের হিন্দুস্তান শিপইয়ার্ড লিমিটেডকে। কিন্তু সেখানে কাজ হচ্ছিল ঢিমেতালে। তাই সেই বরাত বাতিল করে গত মার্চে জিআরএসই-কে দায়িত্ব দিয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক।

জিআরএসই-র এক মুখপাত্র জানান, সম্প্রতি সংস্থার চেয়ারম্যান তথা ম্যানেজিং ডিরেক্টর অবসরপ্রাপ্ত রিয়ার অ্যাডমিরাল অনিলকুমার বর্মা-সহ নির্মাতা সংস্থা এবং উপকূলরক্ষী বাহিনীর পদস্থ কর্তাদের উপস্থিতিতে নির্মাণকাজের সূচনা হয়েছে। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রথম জাহাজটি উপকূলরক্ষী বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হবে। জিআরএসই জানাচ্ছে, আপাতত এই ধরনের পাঁচটি জাহাজ তৈরি করা হচ্ছে। তাতে থাকছে বিশ্বের প্রথম সারির একটি সংস্থার তৈরি দ্রুত গতির ইঞ্জিন। তার ফলে ওই জাহাজ ঘণ্টায় ৩৪ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত গতি তুলতে পারবে অনায়াসে। জঙ্গি হানা, চোরাশিকারি ও পাচারকারীদের মোকাবিলায় সিআরএন-৯১ মেশিনগান বসানো থাকবে তাতে। ওই মেশিনগান থেকে রাতের অন্ধকারেও গুলি ছোড়া যায়। রিমোট কন্ট্রোলেও ওই মেশিনগান নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। ফলে দিনে-রাতে নিরাপত্তা জোরদার করতে বা হানাদারি রুখতে এই মেশিনগান হবে মোক্ষম হাতিয়ার, জানাচ্ছেন উপকূলরক্ষী বাহিনীর কর্তারা।

২০০৮-এ মুম্বইয়ের জঙ্গি হামলায় জড়িত আজমল কাসভরা সাগরপথেই এ দেশে ঢুকেছিল। সেই হামলার পর থেকে উপকূলের নিরাপত্তা বাড়ানোর উপর জোর দিয়েছে কেন্দ্র। অনেকের মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে
শুধু আরবসাগর নয়, বঙ্গোপসাগরেও নিরাপত্তা বাড়ানো দরকার। বিশেষ করে সুন্দরবন এবং পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে চোরাশিকারি ও পাচারকারীদের অস্তিত্বও টের পাওয়া যাচ্ছে। সে-দিক থেকে পশ্চিমবঙ্গ এবং ওড়িশা উপকূলেও ছোট অথচ দ্রুত গতির ওই জাহাজ মোতায়েন করা হতে পারে।

উপকূলরক্ষী বাহিনী বলছে, জলসীমান্তে নজরদারি ছাড়াও উদ্ধারকাজে এই ধরনের জাহাজ খুব উপযোগী। চলতি মাসে বঙ্গোপসাগরে একের পর এক নিম্নচাপ তৈরি হয়ে চলেছে। এই পরিস্থিতিতে গভীর সমু্দ্রে গিয়ে অনেক সময়েই বিপদে পড়ছেন মৎস্যজীবীরা। মৃত্যুও হয়েছে বেশ কয়েক জনের। গত কয়েক দিনে ২৬০ জনের বেশি মৎস্যজীবীকে উদ্ধার করেছে উপকূলরক্ষী বাহিনী। আগামী দিনে এমন বিপর্যয় ঘটলে নতুন জাহাজ অনেক বেশি কাজে আসবে।

অন্য বিষয়গুলি:

Garden Reach Ship Builders Coast Guard
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy