Advertisement
E-Paper

নতুন নির্দেশ ঘিরে ভোগান্তি ডাকঘরে

শীর্ষ মহল থেকে তৃণমূল স্তর— অর্থ প্রশাসনের অন্দরে যোগাযোগ ও সমন্বয়ে ঘাটতি। যার আঁচ আম গ্রাহককেই পোহাতে হল বলে অভিযোগ। নোট-দুর্ভোগের বাজারে ডাকঘরের সেই ভোগান্তিকে উপরি পাওনা হিসেবে দেখছেন ভুক্তভোগীরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:০৯

শীর্ষ মহল থেকে তৃণমূল স্তর— অর্থ প্রশাসনের অন্দরে যোগাযোগ ও সমন্বয়ে ঘাটতি। যার আঁচ আম গ্রাহককেই পোহাতে হল বলে অভিযোগ। নোট-দুর্ভোগের বাজারে ডাকঘরের সেই ভোগান্তিকে উপরি পাওনা হিসেবে দেখছেন ভুক্তভোগীরা।

বিভ্রাটের মূলে অর্থমন্ত্রকের একটি নতুন নির্দেশ। যার বক্তব্য— বাতিল হয়ে যাওয়া পাঁচশো-হাজারি নোট স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পে জমা দেওয়া যাবে না। নির্দেশটি ঘিরে বুধবার রাজ্য জুড়ে নানা ডাকঘরে বিভ্রান্তি চরমে ওঠে। অভিযোগ: কোথাও কোথাও পিপিএফ বা সুকন্যা সমৃদ্ধির মতো কেন্দ্রীয় স্বল্প সঞ্চয়ের পাশাপাশি সেভিংস অ্যাকাউন্টেও বাতিল নোট নেওয়া হয়নি। ফলে বহু মানুষকে বিস্তর দুর্ভোগে পড়তে হয়।

কেন এই পরিস্থিতি?

ঘটনাক্রম যাচাই করে কেন্দ্রীয় অর্থ প্রশাসনের বিভিন্ন ধাপে সমন্বয়ের অভাবের দিকেই আঙুল তুলছেন প্রশাসনের একাংশ। মঙ্গলবার রাতে দিল্লির জারি নির্দেশিকায় বলা হয়, স্বল্প সঞ্চয়ে বাতিল নোট জমার প্রশ্নে ব্যাঙ্কগুলো মন্ত্রকের মত চেয়েছিল। সব কিছু খতিয়ে দেখে মন্ত্রক সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ওই সব
প্রকল্পে তা জমা দেওয়া যাবে না। প্রসঙ্গত, নোট বাতিলের ঘোষণাকালেই জানানো হয়েছিল, ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাঙ্ক ও ডাকঘরে বাতিল নোট জমা দেওয়া যাবে।

এমতাবস্থায় অর্থ মন্ত্রকের নতুন নির্দেশটি রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, কেন্দ্রীয় ডাক বিভাগ ও ন্যাশনাল স্মল সেভিংস ইনস্টিটিউট-কে পাঠানো হয়। যাতে কোনও বিভ্রান্তি না-থাকে, সে জন্য বুধবার দুপুরে মন্ত্রক ফের নয়া নির্দেশিকা মারফত স্পষ্ট করে দেয়, ডাকঘরের সেভিংস অ্যাকাউন্ট নিষেধাজ্ঞা থেকে বাদ থাকছে। তবে তার আগেই বিভ্রান্তি ছড়িয়ে গিয়েছে। নতুন বিজ্ঞপ্তির কথা শুনে অনেক ডাকঘর সেভিংস ও স্বল্প সঞ্চয়ের সমস্ত প্রকল্পেই বাতিল নোট নেওয়া বন্ধ করে দেয়।

কেন দিল?

বিকেলে চিফ পোস্ট মাস্টার জেনারেল (ওয়েস্ট বেঙ্গল সার্কেল) অরুন্ধতী ঘোষ দাবি করেন, কোনও পোস্ট অফিসকে এমন নির্দেশ দেওয়া হয়নি। যারা এটা করেছে, ঠিক করেনি। ‘‘কারণ, স্বল্প সঞ্চয়ে বাতিল নোট না-নেওয়ার কোনও নির্দেশ আমরা কেন্দ্রীয় ডাক বিভাগ থেকে পাইনি।’’— বলেন সিপিএমজি। সন্ধ্যায় অবশ্য তিনি বলেন, ‘‘নির্দেশ এসেছে। কাল (বৃহস্পতিবার)
থেকে ডাকঘরের সেভিংস অ্যাকাউন্ট ছাড়া অন্য কোনও অ্যাকাউন্টে বাতিল নোট জমা দেওয়া যাবে না। আজ রাতেই আমরা সব পোস্ট অফিসে নির্দেশটি পাঠিয়ে দিচ্ছি।’’

পাশাপাশি ব্যাঙ্কগুলোও জানিয়েছে, ওই নির্দেশের আওতায় পড়ে, তাদের নিজস্ব এমন কোনও স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্প নেই। তবে যে সমস্ত কেন্দ্রীয় স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্প ব্যাঙ্ক মারফতও পরিচালিত হয়, সেগুলো এর মধ্যে পড়বে। অর্থাৎ ব্যাঙ্কেও পিপিএফ, সুকন্যা সমৃদ্ধি বা প্রবীণ নাগরিক সঞ্চয় প্রকল্পে বাতিল নোট আর জমা দেওয়া যাবে না।

বস্তুত আরবিআই এ দিনই এই মর্মে সব ব্যাঙ্ককে নির্দেশ দিয়ে দিয়েছে। ইউকো ব্যাঙ্কের পরিচালন পর্ষদের প্রাক্তন ডিরেক্টর পার্থ চন্দ্র জানান, ব্যাঙ্কগুলির নিজস্ব সব প্রকল্প অর্থ মন্ত্রকের নতুন নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকছে। স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া-র তরফেও জানানো হয়েছে, পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড, সুকন্যা সমৃদ্ধি ও প্রবীণ নাগরিক প্রকল্পে বাতিল নোট জমা দেওয়া যাবে না।

কিন্তু এ দিন নয়া নিষেধাজ্ঞার গোড়াতেই বিভ্রান্তির চোট। মূলত গ্রামীণ অঞ্চলে যার ধাক্কা এ দিন বেশি মালুম হয়েছে। বর্ধমান ও বাঁকুড়ার বহু ডাকঘরে কোনও অ্যাকাউন্টেই বাতিল নোট জমা হয়নি। জলপাইগুড়ি, মালদহ, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরের নানা এলাকায় টাকা জমা দিতে গিয়ে হয়রানির মুখে পড়তে হয়েছে। এমনকী, উত্তর কলকাতা ও উত্তর শহরতলির কিছু জায়গা থেকেও সেভিংসে বাতিল নোট না নেওয়ার অভিযোগ মিলেছে।

অন্য দিকে নয়া নির্দেশের যৌক্তিকতা নিয়েও সন্দিহান গ্রাহকদের একাংশ। তাঁদের প্রশ্ন— এক বার ৩০ ডিসেম্বর সময়সীমা ঘোষণা করেও স্বল্প সঞ্চয়ে বাতিল নোট জমা এ ভাবে আচমকা বন্ধ করার কারণ কী? এতে দুর্ভোগ ছাড়া কিছুই হবে না বলে এই মহলের দাবি। সরকারি ভাবে সিদ্ধান্তের কোনও ব্যাখ্যা এ দিন পাওয়া যায়নি।

তবে সরকারি মহলের একাংশের পর্যবেক্ষণ: জন-ধনের মতো ওই সব অ্যাকাউন্টের মাধ্যমেও কালো টাকা সাদা করার চেষ্টা চলছে। তা রুখতেই এই পদক্ষেপ।

distress Post office
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy