Advertisement
০৩ মে ২০২৪

জয়েন্টে ভূত তাড়াতে ওঝা জনতাই

বাংলার ভোটে ভূতেদের বোতলবন্দি করে দেদার প্রশংসা কুড়োচ্ছে নির্বাচন কমি‌শন। এ বার জয়েন্ট এন্ট্রান্সে ভূতের কেত্তন থামাতে পাঁচ দাওয়াই বেছে নিচ্ছে ওই প্রবেশিকা নিয়ন্ত্রক বোর্ড। ওঝার খোঁজে সাধারণ মানুষের দ্বারস্থ হয়েছিল তারা।

সুপ্রিয় তরফদার
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০১৬ ০৩:৫৯
Share: Save:

বাংলার ভোটে ভূতেদের বোতলবন্দি করে দেদার প্রশংসা কুড়োচ্ছে নির্বাচন কমি‌শন। এ বার জয়েন্ট এন্ট্রান্সে ভূতের কেত্তন থামাতে পাঁচ দাওয়াই বেছে নিচ্ছে ওই প্রবেশিকা নিয়ন্ত্রক বোর্ড। ওঝার খোঁজে সাধারণ মানুষের দ্বারস্থ হয়েছিল তারা। রাজ্য জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ড রীতিমতো কমিটি গড়ে জনতার পরামর্শ-উপদেশ থেকে ঝাড়াইবাছাই করে দাওয়াই চূড়ান্ত করেছে।

বোর্ড-কর্তারা মেনে নিচ্ছেন, প্রতি বছরই নানা ধরনের আঁটোসাঁটো ব্যবস্থা সত্ত্বেও জয়েন্ট এন্ট্রান্সে ভূত-পরীক্ষার্থী ঠেকানো যাচ্ছে না। বন্ধ করা যাচ্ছে না টোকাটুকিও। এ বার রাজ্যের জয়েন্ট এন্ট্রান্স ১৭ মে। সুপ্রিম কোর্ট রাজ্য মেডিক্যাল জয়েন্ট বাতিল করে দিলেও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তির জন্য ওই প্রবেশিকা হবে নির্ধারিত দিনেই। আজ, বৃহস্পতিবার শুনানির পরে শীর্ষ আদালত যদি এ বারের মতো ডাক্তারি জয়েন্ট নেওয়ার অনুমতি দেয়, সে-ক্ষেত্রে মেডিক্যাল প্রবেশিকাও হবে একই দিনে।

প্রবেশিকায় ভূত-পরীক্ষার্থী রুখতে ওঝার হালহদিস চেয়ে গত মাসের শেষে নিজেদের ওয়েবসাইটে একটি বিজ্ঞপ্তি দেয় রাজ্য জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ড। সেখানে একটি ‘সাজেশন বক্স’-এর ব্যবস্থা করা হয়েছিল। আমজনতার কাছে বোর্ডের আবেদন ছিল, ভুয়ো পরীক্ষার্থী ও নকলবাজি কী ভাবে বন্ধ করা যায়, সাধারণ মানুষই তার পথ বাতলে দিন। যাঁদের পরামর্শে কাজ হবে, তাঁদের পুরস্কার দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেয় বোর্ড।

জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ডের চেয়ারম্যান সজল দাশগুপ্ত জানান, ওই সাজেশন বক্সে প্রায় ৩৬টি পরামর্শ-উপদেশ জমা পড়েছে। তার মধ্যে কোনটি কতটা গ্রহণযোগ্য, তা খতিয়ে দেখার জন্য চার সদস্যের একটি কমিটি গড়া হয়। সেই কমিটি সেগুলি বিচার-বিবেচনা করে পাঁচটি দাওয়াই চূড়ান্ত করেছে। এ বারের প্রবেশিকাতেই সেগুলি প্রয়োগ করা হবে। আগেও কয়েকটি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। সেগুলি তো থাকছেই। আরও কড়া নজরদারিতে নতুন পাঁচ হাতিয়ার সহায়ক হবে বলে বোর্ডের আশা।

চেয়ারম্যান জানান, এ বার মোট পরীক্ষার্থী এক লক্ষ ৫৮ হাজার। সকলের জন্যই নতুন পাঁচ দাওয়াই হল: l সব পরীক্ষার্থীকেই পরীক্ষার দিন আধার কার্ড, প্যান কার্ড, পাসপোর্ট বা স্কুলের সচিত্র পরিচয়পত্রের মধ্যে যে-কোনও একটি সঙ্গে আনতে হবে। l পরীক্ষার হলে নেওয়া হবে পরীক্ষার্থীর সই এবং বাঁ হাতের বুড়ো আঙুলের ছাপ। সেগুলো মিলিয়ে দেখা হবে আবেদনপত্রে থাকা সই ও আঙুলের ছাপের সঙ্গে। এ ছাড়া সঙ্গে অবশ্যই রাখতে হবে নিজের রঙিন ছবি, যেটি জয়েন্টের আবেদনপত্রে দেওয়া হয়েছে। মিলিয়ে দেখা হবে সেই ছবিও। l পরীক্ষার হলে ঢোকার আগে রীতিমতো দেহ-তল্লাশি হবে। l নজরদারির দায়িত্বে থাকা শিক্ষকদের কাছে সব পরীক্ষার্থীর বিবরণ-সহ সিডি থাকবে। কোনও রকম সন্দেহ হলেই তাঁরা সেগুলি কম্পিউটার বা ল্যাপটপে ফেরে পরীক্ষা করে নিতে পারবেন। l পরীক্ষা কেন্দ্রে মোবাইল তো আগে থেকেই নিষিদ্ধ। এ বার থেকে হাতঘড়ি নিয়েও হলে ঢোকা যাবে না। সময় দেখার জন্য থাকবে দেওয়াল ঘড়ি। আগে অনেকে হাতঘড়িতে ‘চিপ’ লাগিয়ে নকল করতেন। সেটা পথ বন্ধ করার জন্যই এ বার থেকে হাতঘড়ি বারণ।

বোর্ড-প্রধান সজলবাবু বলেন, ‘‘কেউ যাতে অন্য কারও হয়ে পরীক্ষা দিতে না-পারেন, সেটা নিশ্চিত করতে এবং টোকাটুকি ঠেকাতে জনগণের পরামর্শ অনুযায়ী নতুন কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’’ সঙ্গে আগেকার সব বন্দোবস্তও থাকছে।

এই সব ব্যবস্থা নিতে এত দেরি হল কেন? কেনই বা নিতে হল জনতার সাহায্য? এই সব দাওয়াইয়ের কথা বোর্ড-কর্তারা কি আগে ভেবে উঠতেই পারেননি?

বোর্ডের চেয়ারম্যান সজলবাবু জানান, প্রতি বারেই নতুন কিছু না কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কিন্তু ভূত-পরীক্ষার্থীরা ঠিক ফাঁক খুঁজে নিয়ে দুষ্কর্ম চালিয়ে যেত। সেই জন্যই জনগণেশের পরামর্শ নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছে। কার মাথায় কখন কোনটা আসছে, সেটা বড় ব্যাপার নয়। আসল কথা, অন্যের হয়ে পরীক্ষা দেওয়া, টোকাটুকির মতো দুষ্কর্মের মোকাবিলা করা। তার জন্য পরের বছর হয়তো নতুন কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ‘‘তাই সাজেশন বক্স খোলাই থাকবে,’’ বললেন সজলবাবু।

এত আট ঘাট বেঁধে নামা সত্ত্বেও কেউ অসৎ উপায়ে পরীক্ষা দিতে গিয়ে ধরা পড়লে কী করবে বোর্ড?

‘‘ভুয়ো পরীক্ষার্থী ধরা পড়লে সঙ্গে সঙ্গে এফআইআর করে তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হবে। আর টোকাটুকি করতে গিয়ে ধরা পড়লে খাতা বাতিল হবে বা আরএ (রিপোর্টেড এগেনস্ট) করা হবে,’’ বললেন বোর্ডের চেয়ারম্যান।

১৭ মে-র প্রবেশিকা নিয়ে বোর্ডের এই উদ্যোগের মধ্যে উদ্বেগে রয়েছেন মেডিক্যাল জয়েন্টের ৮৫ হাজার পরীক্ষার্থী। সুপ্রিম কোর্ট সব রাজ্যের মেডিক্যাল প্রবেশিকা বাতিল করে বলে দিয়েছে, এ বার থেকে সরকারি ও বেসরকারি সব মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির জন্য কেন্দ্রীয় ভাবে একটিই পরীক্ষা নেওয়া হবে। এ বারের মতো রাজ্য মেডিক্যাল জয়েন্টের জীবনদান চেয়ে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। আশ্বাস সত্ত্বেও মঙ্গলবার সেই আবেদনের শুনানি হয়নি। আজ, বৃহস্পতিবার সর্বোচ্চ আদালত ওই আর্জি শুনবে বলে জানানো হয়েছে। আশায় আশায় সে-দিকেই তাকিয়ে আছেন ডাক্তারি মেডিক্যাল জয়েন্ট পরীক্ষার্থীরা। শীর্ষ আদালতের রায় অনুকূলে গেলে ১৭ মে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সঙ্গে যথারীতি মেডিক্যাল জয়েন্টও নিতে হবে রাজ্য জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ডকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE