Advertisement
০৩ মে ২০২৪

অবশেষে এনআইএ-র জালে আমজাদ

প্রথমে তার মাথার দাম ঘোষণা করা হয়েছিল পাঁচ লক্ষ টাকা। পরে এই পুরস্কার মূল্য বাড়িয়ে ১০ লক্ষ টাকা করে এনআইএ। অবশেষে এনআইএ-র জালে ধরা পড়ল খাগড়াগড় কাণ্ডে অভিযুক্ত আমজাদ আলি শেখ ওরফে কাজল। কীর্ণাহারের বাসিন্দা আমজাদকে সোমবার দুপুরে বীরভূম থেকে তাদের একটি দল গ্রেফতার করে বলে এনআইএ সূত্রে দাবি করা হয়েছে। ধৃতের বিরুদ্ধে খাগড়াগড়ের জঙ্গিদের বিস্ফোরক ও অন্যান্য রাসায়নিক সরবরাহ করার অভিযোগ রয়েছে।

খাগড়াগড় বিস্ফোরণ-কাণ্ডে অভিযুক্ত আমজাদ আলি শেখের এবং তার বাবা সুকুর শেখ (বাঁদিকে)।—ফাইল চিত্র

খাগড়াগড় বিস্ফোরণ-কাণ্ডে অভিযুক্ত আমজাদ আলি শেখের এবং তার বাবা সুকুর শেখ (বাঁদিকে)।—ফাইল চিত্র

অর্ঘ্য ঘোষ
কীর্ণাহার (বীরভূম) শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:১৬
Share: Save:

প্রথমে তার মাথার দাম ঘোষণা করা হয়েছিল পাঁচ লক্ষ টাকা। পরে এই পুরস্কার মূল্য বাড়িয়ে ১০ লক্ষ টাকা করে এনআইএ। অবশেষে এনআইএ-র জালে ধরা পড়ল খাগড়াগড় কাণ্ডে অভিযুক্ত আমজাদ আলি শেখ ওরফে কাজল।

কীর্ণাহারের বাসিন্দা আমজাদকে সোমবার দুপুরে বীরভূম থেকে তাদের একটি দল গ্রেফতার করে বলে এনআইএ সূত্রে দাবি করা হয়েছে। ধৃতের বিরুদ্ধে খাগড়াগড়ের জঙ্গিদের বিস্ফোরক ও অন্যান্য রাসায়নিক সরবরাহ করার অভিযোগ রয়েছে। আমজাদকে নিয়ে খাগড়াগড় কাণ্ডে ধৃতের সংখ্যা দাঁড়াল আট। এর মধ্যে এনআইএ গ্রেফতার করেছে দু’জনকে। আজ, মঙ্গলবার আমজাদকে কলকাতায় আদালতে হাজির করানো হবে বলে এনআইএ জানিয়েছে।

তবে আমজাদকে গ্রেফতার করার কৃতিত্ব কার, তা নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। আমজাদের বাবা বছর পঞ্চান্নর সুকুর শেখের দাবি, এ দিন তিনিই ছেলেকে এনআইএ-র হাতে তুলে দিয়েছেন। রবিবার গভীর রাতে আমজাদ বাড়ি ফিরলে তিনিই এনআইএ-র দেওয়া নম্বরে ফোন করে খবর দেন। তাঁর কথায়, “এনআইএ-র কথা মতো সোমবার সকালে নানুর থানার কাছে কাজলকে নিয়ে যাই। সেখানে এনআইএ অফিসারদের হাতে কাজলকে তুলে দিই।”

যদিও সুকুরের এই দাবি মানতে নারাজ এনআইএ। তাদের বক্তব্য, আমদাজকে ধরতে টানা কয়েক দিন ধরে গোয়েন্দাদের একটি দল বীরভূমে পড়ে ছিল এবং শেষমেশ এ দিন দুপুরে তারা সাফল্য পায়। এনআইএ-র এক কর্তার বক্তব্য, “বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বাড়ির লোকজন দাবি করেন, তাঁরা অভিযুক্তকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন। কিন্তু আমজাদকে আমরাই অনেক খেটেখুটে ধরেছি।”

আমদাজকে ধরিয়ে দিতে পারলে ১০ লক্ষ টাকা পুরস্কার মূল্য রয়েছে। সেই পুরস্কার মূল্য কি তিনি দাবি করবেন? ব্যবসায়ী সুকুরের পাল্টা প্রশ্ন, “ছেলেকে ধরিয়ে দিয়ে কোনও বাবা কি পুরস্কার চাইতে পারে?” তাঁর বক্তব্য, “পুরস্কারের কথা কোনও দিন ভাবিনি, ভাববও না। আমি শুধু বার বার জিজ্ঞাসাবাদ, তল্লাশি এই সব থেকে অব্যাহতি চাই।”

দফায় দফায় সুকুরকে জিজ্ঞাসাবাদ তো বটেই, সেই সঙ্গে আমজাদের খোঁজে এনআইএ লাভপুরের রামঘাটিতে তার শ্বশুরবাড়িতে গিয়েও তল্লাশি চালিয়েছে। গোয়েন্দারা আমজাদের শ্বশুর ইমামউদ্দিন মল্লিক ও স্ত্রী নাজেরা বিবিকে বারবার লাভপুর থানায় ডেকে জিজ্ঞাসাবাদও করেন।

যাই হোক না কেন, আমজাদকে গ্রেফতার করা খাগড়াগড় কাণ্ডের তদন্তে তাদের বড় সাফল্য বলে দাবি করেছে এনআইএ। ৩১ অক্টোবর খাগড়াগড় কাণ্ডে ১২ জন পলাতক অভিযুক্তের তালিকা এনআইএ তৈরি করেছিল এবং সেখানে আমজাদকে ধরে দিতে পারলে পাঁচ লক্ষ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। তদন্ত যত এগিয়েছে, এনআইএ ক্রমশ বুঝতে পারে, জঙ্গি কার্যকলাপের ক্ষেত্রে যতটা ভাবা হয়েছিল, বছর তিরিশের আমজাদের ভূমিকা তার চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমজাদের জন্য পুরস্কারের অর্থমূল্য বাড়িয়ে দেওয়া হয়। কী ভাবে গ্রেফতার করা হল আমজাদকে? গোয়েন্দাদের দাবি, ২ অক্টোবর খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণের পর আমজাদ পশ্চিমবঙ্গ ছেড়ে চম্পট দেয় এবং ৮ অক্টোবর পৌঁছয় দিল্লিতে। সেখান থেকে উত্তরপ্রদেশের বস্তি জেলায় এক পুলিশকর্মীর আশ্রয়ে সে কয়েক দিন ছিল। সূত্রের খবর দিল্লি থেকেই গোয়েন্দারা তার পিছু নিয়েছিলেন, যা এ দিন শেষ হয় বীরভূমে। আমজাদকে কেন ও কী সূত্রে বস্তি জেলার ওই পুলিশকর্মী আশ্রয় দিয়েছিলেন, সেটাও খতিয়ে দেখছেন গোয়েন্দারা।

শনিবার বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশ খাগড়াগড় কাণ্ডের প্রধান অভিযুক্ত তথা জেএমবি জঙ্গিদের ‘বর্ধমান মডিউল’-এর প্রধান সাজিদকে গ্রেফতার করে। মূলত সাজিদের সঙ্গে যোগাযোগের সূত্রেই আমজাদ জঙ্গি কার্যকলাপে যুক্ত হয় বলে গোয়েন্দাদের দাবি। তদন্তকারীদের বক্তব্য, আমজাদ জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)-এর এক জন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য এবং খাগড়াগড় বিস্ফোরণের সূত্রে হদিস পাওয়া জঙ্গি মডিউল বা গোষ্ঠীর অন্যতম পাণ্ডা। বর্ধমানের শিমুলিয়া ও মুর্শিদাবাদের মুকিমনগর মাদ্রাসায় জেএমবি-র অন্য যে কম্যান্ডাররা প্রশিক্ষণ দিত, তাদের সঙ্গেও আমজাদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। পশ্চিমবঙ্গে ডেরা বাঁধা জেএমবি-র জঙ্গিদের প্রায় চার বছর ধরে রাসায়নিক-বিস্ফোরক সরবরাহ করছিল বলে জেনেছে এনআইএ।

আমজাদ কলকাতায় শেক্সপিয়র সরণিতে চিকিৎসার সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক একটি সংস্থায় কাজ করত। দক্ষিণ ২৪ পরগনার মহেশতলায় ওই সংস্থার কারখানাতেই বেশির ভাগ সময়ে ডিউটি থাকত তার। মহেশতলায় সংস্থাটির অফিস দেখভাল করা আমজাদের কাজ ছিল। গোয়েন্দারা জানান, চিকিৎসার সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক সংস্থার কর্মী হিসেবে আমজাদের পক্ষে রাসায়নিক সংগ্রহ করা সহজ হয়েছিল। ওই সব রাসায়নিক দিয়েই প্রথমে বিস্ফোরক ও তার পর বোমা তৈরি করা হত। বাগুইআটির কয়েক জন পাইকারি বিক্রেতার কাছ থেকে ওই সব রাসায়নিক কিনে প্রথমে বেলডাঙা ও পরে খাগড়াগড়ে সরবরাহ করত আমজাদ। এমনকী, অসমের একটি পাইকারি বাজার থেকেও রাসায়নিক কিনে আমজাদ জেএমবি-র আইইডি (ইম্প্রোভাইজ্ড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) প্রস্তুতকারকদের সরবরাহ করত বলে তদন্তকারীরা জানিয়েছেন। তাঁদের একাংশের বক্তব্য, আমজাদ নিজেও আইইডি তৈরি করতে পারত। আক্রা-সন্তোষপুরে আমজাদ যে বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকত, সেখানে তল্লাশি চালিয়ে গোয়েন্দারা এমন সব রাসায়নিক কেনার রসিদ পেয়েছেন, যেগুলি আইইডি তৈরিতে কাজে লাগে।

বোমাতঙ্ক

—নিজস্ব চিত্র

জোরালো শব্দ থেকে বোমাতঙ্ক ছড়াল কলকাতার এনআইএ দফতরের সামনে। সোমবার সন্ধ্যা ছ’টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটে। ওই অফিসেই বর্ধমান বিস্ফোরণের ধৃতদের রাখা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে বোমা বিস্ফোরণের প্রমাণ পায়নি পুলিশ। পুলিশ জানায়, সল্টলেকের পাঁচ নম্বর সেক্টরের সিআরপি ক্যাম্পে এনআইএ-র অস্থায়ী অফিস রয়েছে। এ দিন সন্ধ্যা ছ’টা নাগাদ ক্যাম্পের মূল গেটে পাহারারত এক জওয়ান জোরালো শব্দ শুনতে পান। সেই শব্দের সঙ্গে বিস্ফোরণের শব্দের মিল থাকায় সিআরপি থেকে বিধাননগর কমিশনারেটে খবর দেওয়া হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE