এনআইএ-র পোস্টার। বর্ধমানে উদিত সিংহের তোলা ছবি।
খাগড়াগড় কাণ্ডে অধরা অভিযুক্তদের খোঁজে শেষ পর্যন্ত রাজ্য জুড়ে পোস্টার দিল জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ।
সিবিআই কিংবা রাজ্য গোয়েন্দা সংস্থা সিআইডি-র পথে হেঁটে, ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি জেলায়— স্টেশন থেকে চৌরাস্তার মোড়, ব্যস্ত আদালত চত্বরের দেওয়াল কিংবা গ্রামীণ থানার ফটকে ওই অভিযুক্তদের ছবি-সহ পোস্টার চোখে পড়েছে। পোস্টারে, বাংলাদেশের জামাত উল মুজাহিদিন গোষ্ঠীর সন্ত্রাসবাদী হিসেবে চিহ্নিত ওই অভিযুক্তদের খোঁজ দিতে পারলে এক থেকে দশ লক্ষ টাকা পুরস্কার মূল্যও ঘোষণা করেছে এনআইএ। প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকার বাসিন্দারাও যাতে ‘আপাত নিরীহ’ চেহারার ওই জঙ্গিদের ছবি দেখে তাদের চিহ্নিত করতে পারেন, প্রথা ভেঙে প্রথমবার এ ভাবে পোস্টার দেওয়ার সিদ্ধান্ত সে কারেই বলে জানাচ্ছেন এনআইএ-র কর্তারা।
বিভিন্ন জেলা ছাড়াও কয়েকটি পড়শি রাজ্যের কর্মব্যস্ত এলাকাতেও ওই পোস্টার দেওয়া হয়েছে বলে এনআইএ সূত্রে খবর। ঝাড়খণ্ডের সাহেবগঞ্জ তারই একটি নমুনা।
গত অক্টোবরে, বর্ধমানের খাগড়াগড়ে ওই বিস্ফোরণের পরে তদন্তভার নিয়েই ১৮ জনকে আটক করেছিল এনআইএ। দিন কয়েক পরে ধৃতদের মধ্যে ২ জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে ঘটনার আট মাস পরেও, অভিযুক্ত অন্তত ১২ জনের হদিস মেলেনি। পোস্টারে, অধরা ১১ জনের ছবি-সহ তাদের নাম-পরিচয় এবং শারীরিক গড়নের বিবরণ দেওয়া রয়েছে। তবে মুর্শিদাবাদের ডোমকলের বাসিন্দা, আদতে বাংলাদেশের নাগরিক রফিকের কোনও ছবি পাওয়া যায়নি। পোস্টারে তার চেহারার বিবরণটুকুই দেওয়া হয়েছে শুধু।
গত ছ’বছরে দেশ জুড়ে ১২৫টি ঘটনার তদন্ত করলেও পোস্টার দেওয়ার সিদ্ধান্ত এই প্রথম বলে জানান এনআইএ-র এক শীর্ষ কর্তা। তিনি বলেন, “চার্জশিট পেশের এক মাস পরেও অভিযুক্তেরা পলাতক থাকলে তাদের ছবি দিয়ে পোস্টার দেওয়া হয়। এনআইএ-র ক্ষেত্রে এই প্রথম পোস্টার দেওয়া হল।” গত অক্টোবরে খাগড়াগড়ে ওই বিস্ফোরণের মাসখানেক পরে পলাতক অভিযুক্তদের খোঁজ পেতে নিজেদের ওয়েবসাইটে ছবি-সহ তথ্য দিয়ে পুরস্কার মূল্য ঘোষণা করেছিল এনআইএ। এ বার পোস্টারের পথে হাঁটার কারণ? এনআইএ-র এক কর্তা জানাচ্ছেন, পলাতক জঙ্গিরা পরিচয় গোপন করে, রাজ্যের প্রত্যন্ত কোনও গ্রামা়ঞ্চলে লুকিয়ে থাকতে পারে বলেই তাঁদের সন্দেহ। কম্পিউটার কিংবা ইন্টারনেট যোগাযোগের বাইরে থাকা ওই সব এলাকায় তাই এনআইএ-র ওয়েবসাইট কার্যত অচল।
এক গোয়েন্দা-কর্তা বলছেন, ‘‘ওই সব প্রত্যন্ত গ্রামে হয়তো পরিচয় ভাঁড়িয়ে লুকিয়ে রয়েছে কোনও জঙ্গি। সেই সব প্রান্তিক গ্রামের মানুষ রাস্তার ধারে কিংবা জেলা বা মহকুমা সদরে ওই পোস্টার দেখে তাঁরা ওই জঙ্গিদের শনাক্ত করতে পারবেন।’’ এনআইএ-র ওয়েবসাইটে পলাতক অভিযুক্ত হিসেবে যাদের নাম প্রকাশ করা হয়েছিল, তাদের মধ্যে আমজাদ, সাজিদ শেখ এবং শাহনুর আলম পরে গোয়েন্দাদের জালে ধরা পড়ে। এ বার পোস্টারে নতুন তিন জনের নাম উঠে এসেছে— তারিকুল ইসলাম ওরফে সাদিক ওরফে সুমন, সালাউদ্দিন সালেন ওরফে মহিন হাফিজুর রহমান শেখ ও রফিক।
খাগড়াগড় বিস্ফোরণের পরে ঘটনাস্থল থেকে ধরা হয়েছিল রাজিয়া এবং আলিমা নামে দুই মহিলাকে। এনআইএ-র দীর্ঘ জেরায় তারা আরও ৮ মহিলার নাম কবুল করেছিল বলে এনআইএ সূত্রে জানা গিয়েছে। অধরাদের এই তালিকায় তারা নেই কেন? এনআইএ-র এক কর্তা বলছেন, ‘‘তদন্তের খাতিরে অনেক কিছুই আড়ালে রাখতে হয়। ওয়েবসাইট বা পোস্টারের বাইরেও আরও অনেক মুখ রয়েছে যাদের এখনই সামনে আনা হচ্ছে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy