Advertisement
০৩ মে ২০২৪
প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা সদস্যদেরই

পদ গেল দীপালি-ঘনিষ্ঠের

বিধানসভা ভোটে তাঁর হারের পিছনে অন্যতম কারণ হিসেবে দলের দ্বন্দ্ব সামনে এসেছিল।এ বার সোনামুখীর সেই প্রাক্তন বিধায়ক দীপালি সাহা-র ঘনিষ্ঠ দলেরই ব্লক সভাপতিকে পঞ্চায়েত প্রধানের পদও খোয়াতে হল। ওই পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনলেন তাঁরই দলের পঞ্চায়েত সদস্যেরা!

নিজস্ব সংবাদদাতা
সোনামুখী শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০১৬ ০২:০৫
Share: Save:

বিধানসভা ভোটে তাঁর হারের পিছনে অন্যতম কারণ হিসেবে দলের দ্বন্দ্ব সামনে এসেছিল।

এ বার সোনামুখীর সেই প্রাক্তন বিধায়ক দীপালি সাহা-র ঘনিষ্ঠ দলেরই ব্লক সভাপতিকে পঞ্চায়েত প্রধানের পদও খোয়াতে হল। ওই পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনলেন তাঁরই দলের পঞ্চায়েত সদস্যেরা! তলবিসভাতে তৃণমূলের ওই সদস্যেরা প্রধানের বিরুদ্ধে ভোটও দিলেন। ওই প্রধান আবার আর পাঁচটা প্রধানের মতো নয়, তিনি শাসকদলের ব্লক সভাপতি নিমাই ঘোষ! আর এই ঘটনায় ফের সামনে এসে গেল দীপালি বনাম সোনামুখীর তৃণমূল পুরপ্রধান সুরজিৎ মুখোপাধ্যায়ের গোষ্ঠীর চিরকালীন দ্বন্দ্বের কথা। দীপালির হারের পিছনে যাঁদের ভূমিকার কথা শোনা গিয়েছে, ধানসিমলা পঞ্চায়েতের প্রধানকে হারাতে এ বারও তাঁদেরই সক্রিয় হতে দেখা গিয়েছে বলে দল সূত্রে জানা যাচ্ছে। শুক্রবার বিডিও-র ডাকা তলবি সভায় অনাস্থা ভোটে ধানসিমলা পঞ্চায়েতের প্রধানের পদ খোয়াতে হল নিমাই ঘোষকে। ধানসিমলা পঞ্চায়েতে মোট ন’টি আসন। সব ক’টিই তৃণমূলের। বিডিও-র ডাকা তলবি সভায় দেখা যায় প্রধানের বিরুদ্ধে ভোট পড়েছে ছ’টি। প্রধান-সহ আরও দুই সদস্য গরহাজির ছিলেন। ফলে আস্থা ভোটে হেরে যান নিমাইবাবু।

এই ঘটনার পরে দলের কর্মীরাই বলছেন, একটি পঞ্চায়েতে প্রধানের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব একেবারে কাছাখোলা করে দিয়েছে সোনামুখীতে। কারণ, কোথাও দলের ব্লক সভাপতি প্রধান থাকলেও তাঁর বিরুদ্ধে পঞ্চায়েতে দলের লোকেরাই অনাস্থা এনেছে বলে আগে শোনা যায়নি। এতে তৃণমূলের জেলা নেতৃত্বের বিড়ম্বনা বেড়েছে বই, কমেনি। কোনও কোনও জেলা নেতা তা গোপনও করছেন না। তাঁদেরই একজনের আক্ষেপ, ‘‘সোনামুখীতে দলের নেতা-নেত্রীর এই আকচাআকচির মাশুল দিতে হয়েছে একটি বিধায়ক খুইয়ে। তারপরেও লাগাম টানা যাচ্ছে না।’’

গত ফেব্রুয়ারি মাসে ধানসিমলা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থার চিঠি দেন তৃণমূলের পাঁচ সদস্য। তৃণমূল সূত্রের খবর, দীর্ঘকাল ওই পঞ্চায়েতের প্রধান ছিলেন সোনামুখী ব্লক তৃণমূলের প্রাক্তন সভাপতি, প্রয়াত অনিরুদ্ধ বন্দ্যোপাধ্যায়। গত পঞ্চায়েত ভোটে ওই ধানসিমলা (পূর্ব) সংসদে তৃণমূলের প্রার্থীও ছিলেন তিনি। স্থানীয় রাজনীতিতে অনিরুদ্ধবাবু বরাবর সুরজিৎবাবুর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। সুরজিত্‍বাবুর অনুগামীদের একাংশের অভিযোগ, পঞ্চায়েত ভোটে ওই সংসদে অনিরুদ্ধবাবুর বিরুদ্ধে নিজের অনুগামী শেখ রহমত আলিকে নির্দল হিসাবে দাঁড় করিয়ে তাঁকে জেতান দীপালিদেবী। এর ফলে বোর্ড গঠনের সময় দেখা যায়, দীপালি-শিবিরের দিকেই পাল্লা ভারী। দীপালিদেবী ওই নির্দলের সমর্থন নিয়েই তাঁর অনুগামী নিমাই ঘোষকে প্রধান করেন। পরে তাঁকে ব্লক সভাপতিও করা হয়। এই নিয়ে সুরজিত্‍-দীপালি বিরোধ অনেকদূর গড়িয়েছিল। ধানসিমলা পঞ্চায়েতেও দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব চাপা থাকেনি। ক্ষমতা দখলের বছর খানেকের মাথায় সুরজিত্‍-গোষ্ঠীর পঞ্চায়েত সদস্যেরা নিমাইবাবুর বিরুদ্ধে অনাস্থা আনেন। আইনি জটিলতায় সে বার তলবি সভা না হলেও এ বার হল। সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার, দীপালিদেবী যে রহমত আলিকে নির্দল হিসাবে দাঁড় করিয়েছিলেন, সেই তিনিই এ বার দীপালি-ঘনিষ্ঠ নিমাইবাবুর বিরুদ্ধে আনা অনাস্থায় সই করেছিলেন।

তবে তখন ভোটের আগে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনা করে তলবিসভা ডাকেননি বিডিও। জেলাশাসক ও পুলিশসুপারের তলবিসভা ওই সময়ে ডাকায় সায় ছিল না। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে প্রধানের বিক্ষুদ্ধ ওই সদস্যেরা আদালতে যাওয়ারও হুমকি দিয়েছিলেন। তবে কথামতো বিডিও ভোট-পর্ব মিটতেই তলবি সভা ডাকেন। আর সেখানেই প্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় নিমাইবাবুকে।

প্রধানের বিরুদ্ধে কেন অনাস্থা আনা হল? সুরজিৎ অনুগামী বলে পরিচিত ওই পঞ্চায়েতের উপপ্রধান মিনতি বাগদি-সহ ছয় সদস্যের দাবি, ‘‘প্রধান এলাকার উন্নয়নমূলক কোনও কাজই করছিলেন না। তাই আমাদের এই অনাস্থাজ্ঞাপন।’’ যদিও এ নিয়ে সুরজিৎবাবু কোনও মন্তব্য করতে চাননি। দীপালিদেবীকে ফোনে চেষ্টা করা গেলেও তিনি ফোন ধরেননি। কোনও মন্তব্য করতে চাননি নিমাইবাবুও। তাঁর সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া, ‘‘মেয়ের শরীর খারাপ। বাইরে আছি। এ নিয়ে আমার কিছু বলার নেই।’’

অন্যদিকে, শুক্রবারই সোনামুখীরই পিয়ারবেড়া পঞ্চায়েতের সিপিএমের প্রধান শ্যামলী ঘোষের বিরুদ্ধেও অনাস্থা আনার প্রেক্ষিতে তলবিসভা হয়। ১৩ সদস্যের ওই পঞ্চায়েতে তৃণমূলের ছয় সদস্য ও দলত্যাগী দুই সিপিএম সদস্য প্রধানের বিরুদ্ধে ভোট দেন। ফলে প্রধানের পদ থেকে সরে যেতে হল শ্যামলীদেবীকে। সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমাদের সদস্যদের টেনে নিয়ে ওরা অনেক দিন ধরেই পঞ্চায়েত চালাচ্ছিল। এখন সরকারি ভাবে তাতে শীলমোহর পড়ল।’’ অনাস্থায় হারের পর শ্যামলীদেবী দাবি করেছেন, ‘‘নিরাপত্তার কারণে এমনিতেই নিয়মিত পঞ্চায়েতে যেতে পারছিলাম না। এটাই বরং ভাল হল।’’ সোনামুখীর বিডিও রিজওয়ান আহমেদ বলেন, ‘‘দু’টি পঞ্চায়েতেই প্রধানদের বিরুদ্ধে অনাস্থা পাশ হয়েছে। এ বার নিয়ম মেনে নতুন প্রধান ঠিক করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC no confidence
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE