Advertisement
E-Paper

আজ মহাসপ্তমী, পুজো-ম্যাচ বাঁচাতে লড়াই বৃষ্টির সঙ্গেই

মহিষাসুরকে দেবী বধ করেছিলেন ঠিকই। কিন্তু ‘ঘূর্ণাসুর’কে শায়েস্তা করবে কে? যা ইঙ্গিত, এ বছরের পুজোয় বাদ সাধতে রীতিমতো আটঘাট বেঁধেই নেমেছে সে। ‘ঘূর্ণাসুর’, অর্থাৎ বঙ্গোপসাগর এবং লাগোয়া ওড়িশা-বাংলার উপরে হাজির হওয়া একটি বেয়াড়া ঘূর্ণাবর্ত।

শিবাজী দে সরকার ও কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:২৩
বাড়ির পুজোয় কোয়েল মল্লিক। শুক্রবার ভবানীপুরে। ছবি: রণজিৎ নন্দী।

বাড়ির পুজোয় কোয়েল মল্লিক। শুক্রবার ভবানীপুরে। ছবি: রণজিৎ নন্দী।

মহিষাসুরকে দেবী বধ করেছিলেন ঠিকই। কিন্তু ‘ঘূর্ণাসুর’কে শায়েস্তা করবে কে? যা ইঙ্গিত, এ বছরের পুজোয় বাদ সাধতে রীতিমতো আটঘাট বেঁধেই নেমেছে সে।

‘ঘূর্ণাসুর’, অর্থাৎ বঙ্গোপসাগর এবং লাগোয়া ওড়িশা-বাংলার উপরে হাজির হওয়া একটি বেয়াড়া ঘূর্ণাবর্ত। বৃহস্পতিবারই উপগ্রহ চিত্রে তার দেখা পেয়েছিলেন আবহবিদেরা। শুক্রবার, বোধনের দিনে মালুম হয়েছে এই অসুরের দাপট। সেই দাপটে সকালে মণ্ডপ ভিজেছে বৃষ্টিতে, সন্ধেয় জনতা ভিজেছে ঘামে। কোথায় গেল সুনীল আকাশ? এ তো মেঘলা দিন, দফায় দফায় বৃষ্টি আর গুমোট গরম!

বেলা গড়াতে বৃষ্টি থেমেছে ঠিকই। কিন্তু আবহবিদেরা জানিয়ে দিয়েছেন, এ বারের পুজোয় ঘূর্ণাসুরের হাত থেকে রেহাই নেই রাজ্যের। আপাতত স্বস্তি এটুকুই যে, সপ্তমী-অষ্টমীতে বিকেলের পরে বৃষ্টির সম্ভাবনা কম। কিন্তু নবমী? নাহ্, নবমীর আকাশে কিন্তু আক্ষরিক অর্থেই দুর্যোগের মেঘ।

আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গণেশকুমার দাসের ব্যাখ্যা, ঘূর্ণাবর্তটি এখনই দুর্বল হবে না। প্রথমে সে ওড়িশার দিকে সরে যাবে। নবমীতে ফিরে আসবে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের উপরে। তার জেরে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টি বাড়তে পারে নবমী থেকে।

মৌসম ভবনের নির্ঘণ্ট মানলে আজ, ৮ অক্টোবরই দক্ষিণবঙ্গ থেকে বর্ষার বিদায় নেওয়ার কথা। কিন্তু এখন ঘূর্ণাসুরের আগমনে পুজোয় যেমন বৃষ্টি হবে, তেমনই দীর্ঘায়িত হবে বর্ষার ইনিংস।

হঠাৎ কেন হানা দিল ঘূর্ণাবর্ত?

বিজ্ঞানীরা বলছেন, বর্ষার বিদায়বেলায় সাগরের আবহাওয়া অস্থির থাকে। ফলে আচমকা এই ধরনের অনেক উপদ্রব হাজির হয়। একটি ঘূর্ণাবর্ত ছিল বাংলাদেশের কাছে সমুদ্রের উপরে। আর একটি দুর্বল ঘূর্ণাবর্ত ছিল অন্ধ্রপ্রদেশের কাছে। এই দু’টি পরস্পরের সঙ্গে মিশে গিয়ে সরতে শুরু করেছে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের দিকে। এই ‘ঘূর্ণাসুর’ কি শক্তিশালী নিম্নচাপের চেহারাও নিতে পারে? এ দিন পর্যন্ত তেমন আশঙ্কার কথা শোনাননি আবহবিদেরা। তবে তাঁরা বলছেন, বর্ষা-বিদায়ের এই সন্ধিক্ষণে আবহাওয়ার আচমকা কোনও পরিবর্তন হতেই পারে। তাই নিশ্চিত কোনও মত দেওয়া সম্ভব নয়। ঠিক যেমন নবমীর দিন জোরালো বৃষ্টির আশঙ্কা থাকলেও ‘ঘূর্ণাসুর’ যে অষ্টমী থেকেই রাজ্যে পাকাপাকি থানা গাড়বে না— এমন কথাও নিশ্চিত করে বলছেন না কেউ।

আরতির আলোয়। বাগবাজার সর্বজনীনের প্রতিমা।

শুক্রবার সুমন বল্লভের তোলা ছবি।

অতএব উপায়? ‘‘বৃষ্টির সঙ্গে লড়াই করে পুজো উপভোগ করতে হবে। এ ছাড়া উপায় কী?’’— বললেন এক আবহবিদ। অবশ্য শুক্রবার দিনভর পুজো-পাগল বাঙালি বুঝিয়ে দিয়েছে, তারাও জমি ছাড়তে নারাজ। দুপুরের পর বৃষ্টি থামতেই তাই মণ্ডপে মণ্ডপে তুমুল ভিড়। চ্যালেঞ্জ কি আর একটা? আকাশে ‘ঘূর্ণাসুর’ তো পথে ‘যানজটাসুর’। চ্যালেঞ্জ নিয়েই বেরিয়ে পড়েছে পুজো দেখার ভিড়। ভুগেছে, কিন্তু হাল ছাড়েনি।

দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত দেশপ্রিয় পার্ক, শরৎ বসু রোড, শিয়ালদহ, মানিকতলা, কলেজ স্ট্রিট— সর্বত্র ছিল গাড়ির লাইন। বিকেল থেকে পথের রাশ হাতে নেয় লালবাজার। ফলে যানজট ছাড়তে থাকে উত্তর ও মধ্য কলকাতায়। তবে রাসবিহারী অ্যাভিনিউ, নিউ আলিপুর, হাতিবাগান-সহ কিছু এলাকায় রাত পর্যন্ত গাড়ির গতি মসৃণ হয়নি। ভুগিয়েছে রেলও। মেন লাইনে অবরোধে আটকেছে ট্রেন। পাতালেও ঠেলাঠেলি ভিড়। এসি মেট্রোয় গরম হাওয়া। রাত সাড়ে আটটায় বেলগাছিয়া স্টেশনে দশ মিনিটেরও বেশি সময় ধরে থাকে একটি ট্রেন। ও দিকে, অ্যাপ-নির্ভর ট্যাক্সি ভাড়া হেঁকেছে প্রায় তিন গুণ!

তবু দমেনি জনতা। দক্ষিণে নিউ আলিপুর সুরুচি সঙ্ঘ, চেতলা অগ্রণী, অবসর, শিবমন্দিরের মতো পুজোগুলিতে লম্বা লাইন। উত্তরে বাগবাজারের পর এ বার ভিড়ের মুখ কাশী বোস লেনের দিকে। বেলেঘাটা ৩৩ পল্লি, কাঁকুড়গাছি মিতালি, উল্টোডাঙা পল্লিশ্রীর মতো পূর্ব কলকাতার ক্লাবগুলিও ভিড় টানছে। সেখান থেকে ভিড়ের একটা অংশ চলে গিয়েছে সল্টলেক, লেকটাউন, দমদম পার্কের পুজোগুলিতে।

‘ঘূর্ণি পিচে’ চার দিনের ম্যাচে কে কাকে টক্কর দেবে? দেখা যাক!

Rain Durga puja Pressure of clouds
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy