Advertisement
১৭ মে ২০২৪
নেই জিআরপি, দেখা মেলে না আরপিএফের

হাওড়া-আমতা রেলে আতঙ্কের পাড়ি যাত্রীদের

সাধারণ প্ল্যাটফর্মগুলো আধুনিক করে তোলা হচ্ছে। রোদ-বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচতে যাত্রীদের জন্য বাড়ানো হচ্ছে শেড। ব্যবস্থা হচ্ছে পানীয় জল, শৌচালয়ের। যাত্রী পরিষেবার উন্নতিতে রেলের এমন কর্মযজ্ঞের ফাঁক গলে যে প্রশ্ন উঠে এসেছে তা হল যাত্রীদের নিরাপত্তা।

সন্ধের পর সুনসান স্টেশন ঘিরে ছড়ায় আতঙ্ক। ছবি: সুব্রত জানা।

সন্ধের পর সুনসান স্টেশন ঘিরে ছড়ায় আতঙ্ক। ছবি: সুব্রত জানা।

মনিরুল ইসলাম
শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০২:২৭
Share: Save:

সাধারণ প্ল্যাটফর্মগুলো আধুনিক করে তোলা হচ্ছে। রোদ-বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচতে যাত্রীদের জন্য বাড়ানো হচ্ছে শেড। ব্যবস্থা হচ্ছে পানীয় জল, শৌচালয়ের। যাত্রী পরিষেবার উন্নতিতে রেলের এমন কর্মযজ্ঞের ফাঁক গলে যে প্রশ্ন উঠে এসেছে তা হল যাত্রীদের নিরাপত্তা।

দক্ষিণ-পূব রেলের হাওড়া-আমতা শাখায় সমস্ত সমস্ত স্টেশনকে আধুনিক করে তোলা কাজ শুরু হলেও স্টেসন দিয়ে যাঁদের নিত্য যাতায়াত করতে হয় সেই যাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়টি এখনও কার্যত দুয়োরানিই থেকে গিয়েছে। রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, সাঁতরাগাছি থেকে প্রথমে বড়গাছিয়া পর্যন্ত রেল চালু হয় প্রয়াত গনিখান চৌধুরির সময়। ২০১০ সালের গোড়ায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকার সময় তা আমতা পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়। আমতা থেকে সাঁতরাগাছির আগে নয়াবাজ পযন্ত ১৫টি স্টেশন রয়েছে। কোনও স্টেশনেই জিআরপি-র ব্যবস্থা নেই। মাত্র একটি স্টেশনে আরপিএফের অফিস থাকলেও সেখানে কর্মীর সংখ্যা খুবই কম। ফলে তাদের পক্ষে স্টেশনে স্টেশনে নজরদারি চালানো সম্ভব হয় না। এই অবস্থায় দক্ষিণ-পূর্ব রেলের এই শাখায় যাত্রীদের নিরাপত্তার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট স্টেশন এলাকার থানাগপসের উপরেই।

আমতা, জগৎবল্লভপুর ও ডোমজুড় এলাকায় কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে তা দেখে এই তিন থানার পুলিশ। স্বাভাবিক ভাবেই সংশ্লিষ্ট থানা এলাকার আইন-শৃঙ্খলা দেখার পর ফের স্টেশনের নিরাপত্তা সামলানো তাদের পক্ষে প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে বলে তিনটি থানারই পুলিশের বক্তব্য। ফলে আমতা থেকে নয়াবাজ পর্যন্ত স্টেশনের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় যথেষ্টই ফাঁক থেকে যায় বলে অভিযোগ। পুলিশের দাবি থানায় পুলিশকমীর সংখ্যা কম, ফলে তাদের পক্ষে স্টেশনে স্টেশনে পুলিশকর্মী রাখা সম্ভব নয়। শুধু স্টেশনেই নয়, ট্রেনের মহিলা কামরাগুলিতেও কোনও নিরাপত্তারক্ষী থাকে না। চারপাশে নারী নির্যাতনের নানা ঘটনা ঘটলেও নিরুপায় হয়ে আতঙ্ক নিয়েই প্রতিদিন যাতায়াত করতে হচ্ছে মহিলাদের। জিআরপি, রেল পুলিশের নজরদারি না থাকায় ছোটখাটো অপরাধের ঘটনাও ঘটে। যা দিন দিন যাত্রীদের আতঙ্ক আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।

কলকাতায় একটি বেসরকার অফিসের রিসেপশনিস্ট জাহ্নবী পোল্লে। হরিশদাদপুর স্টেশন থেকে রোজ যাতায়াত করা জাহ্নবীদেবীর কথায়, ‘‘কাজের চাপে প্রায়ই সন্ধে হয়ে যায়। মহিলা কামরায় কোনও রেলপুলিশ দেখা যায় না। চারপাশে যে ধরনের ঘটনা ঘটছে। তাতে ভয় হয়। বাড়ির লোকজনও চিন্তা করে।’’ কেবল জাহ্নবীদেবীই নন, মাজু, মুন্সিরহাট স্টেশন থেকে করবী ধর, কাজল জানার মতো নিত্যযাত্রীদের অনেকে আতঙ্ক নিয়েই যাতায়াত করেন। শিল্পী মালিক নামে এক কলেজ ছাত্রী বলেন, ‘‘রেলের এই শাখায় ট্রেনে বা প্ল্যাটফর্মে কোনও নিরাপত্তারক্ষী না থাকায় আমরা রীতিমত আতঙ্কে থাকি। ট্রেনে কোনও রেলপুলিশ না থাকায় মহিলা কামরায় পুরুষরা উঠে পড়ে। নামতে বললেও শোনে না। উল্টে মহিলাদের প্রতি অভব্য আচরণ করে। আমরা চাই রেল ও রাজ্য প্রশাসন অবিলম্বে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা করুক।’’

কিন্তু এমন অবস্থা কেন? কেনই বা দেখা মেলে না জিআরপি, আরপিএফের?

রেল কর্তাদের দাবি, কোনও জায়গায় রেল লাইন চালু হওয়ার পর রেল কর্তৃপক্ষ রাজ্যকে জিআরপির বিষয়ে বলে এবং জিআরপি যেহেতু রাজ্য পুলিশের অধীন তাই রাজ্যকেই বিজ্ঞপ্তি দিতে হয় জিআরপি ব্যাপারে। এর পর স্টেশনে স্টেশনে জিআরপি মোতায়েনের ব্যবস্থা হয়। কিন্তু রাজ্য সরকার জিআরপি মোতায়েনের ব্যাপারে বিজ্ঞপ্তি না দেওয়ায় এখানে জিআরপি-র ব্যবস্থা করা যায়নি। আরপিএফের অবস্থাও তথৈবচ। আরপিএফের অফিস রয়েছে কেবলমাত্র বড়গাছিয়া স্টেশনে। কিন্তু সেখানে আরপিএফের সংখ্যা খুবই কম। ফলে স্রেফ ওই স্টেশনে কিছু আরপিএফ কমীর দেখা মিললেও বাকি কোথাও তাদের দেখা মেলে না বলেই যাত্রীদের দাবি।

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মাত্র দিন কয়েক আগেই ট্রেনের মধ্যে এবং ডাঁসি স্টেশনে এক যুবক এক তরুণীর মুখে থুতু ছিটিয়ে দেয় ও মারধর করে ট্রেনে করে পালায়। ওই তরুণী সাঁতরাগাছি স্টশনে জিআরপি-র কাছে অভিযোগ জানাতে গেলে তারা অভিযোগ না নিয়ে তাঁকে ডোমজুড় থানায় পাঠিয়ে দেয়। সেখানে তিনি অভিযোগ দায়ের করেন। কয়েক বছর আগে পাতিহাল স্টেশনের কাছে এক মহিলাকে খুনের ঘটনা ঘটে।

দক্ষিণ-পূর্ব রেলের খড়গপুর শাখার ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজার আর কে মঙ্গলার অবশ্য দাবি, ‘‘যাত্রীদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা যথাযথ রয়েছে। কোনও সমস্যা রয়েছে কিনা খোঁজ নেব।’’ হাওড়ার পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) সুকেশ জৈন বলেন, ‘‘জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ওই সব স্টেশনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখভাল করা হয়। কোনও সমস্যা নেই।’’

কিন্তু যাত্রীদের বাস্তব অভিজ্ঞতা অবশ্য অন্য ছবি তুলে ধরেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আমতা থেকে রোজ ব্যবসার কাজে কলকাতার বড়বাজারে আসা যাওয়া করেন এমন এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘ব্যবসার কাজ সেরে শেষ ট্রেন ধরে বাড়ি ফিরতে হয়। সঙ্গে টাকাকড়ি থাকে। কিছু ঘটলে যে পুলিশ ডাকব তার উপায় নেই। কারণ কোনও স্টেশনেই পুলিশ থাকে না। কামরাতেও আরপিএফের দেখা মেলে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

rail passenger GRP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE