—ফাইল চিত্র।
সারদা-মামলার চক্করে একটা পুজো কেটেছে তাঁর বন্দিদশায়। তবে গারদের আড়ালে নয়। অসুস্থতার জেরে ওই সময় তিনি ছিলেন হাসপাতালে। এ বার পুজোয় মদন মিত্র থাকছেন খোলা আকাশের নীচেই, আত্মীয়বন্ধু ও অনুগামী পরিবৃত হয়ে। কলকাতা হাইকোর্ট বৃহস্পতিবার জানিয়ে দিয়েছে, এখন তাদের পক্ষে সারদা কেলেঙ্কারিতে ওই অভিযুক্তের জামিন খারিজের আর্জি শোনা সম্ভব নয়।
মদনবাবুকে পুজোর আগেই আবার জেলে ফেরত পাঠানোর জন্য সিবিআইয়ের তরফে অবশ্য চেষ্টার কমতি ছিল না। বুধবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন গিরীশ গুপ্ত। সেই সন্ধ্যাতেই তিনি মদনবাবুর জামিন খারিজের ব্যাপারে সিবিআইয়ের আবেদনটি বিচারপতি নিশীথা মাত্রের এজলাসে পাঠিয়ে দেন। তাতে কিছুটা আশান্বিত হয়েছিল ওই কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। কারণ, এর আগে ২০১৫ সালের ৩১ অক্টোবর নিম্ন আদালত থেকে মদনবাবু যখন জামিন পেয়েছিলেন, সিবিআইয়ের আর্জির ভিত্তিতে বিচারপতি মাত্রেই সেই জামিন বাতিল করে দেন। ফলে ওই বছরের ১৯ নভেম্বর জেলে ফিরে যেতে হয় মদনবাবুকে। সে-বার পুজো ছিল ২০-২৩ অক্টোবর। সেই পুজোটা বন্দি হিসেবে হাসপাতালেই কাটাতে হয়েছিল তখনকার মন্ত্রী মদনবাবুকে।
দ্বিতীয় দফায় গত ৯ সেপ্টেম্বর নিম্ন আদালত থেকে জামিন পান ওই প্রাক্তন মন্ত্রী। সেই জামিন বাতিল করার জন্য সিবিআই আবার আবেদন করে হাইকোর্টে। বৃহস্পতিবারেই যাতে সেই আবেদন শোনা হয়, তার জন্য হায়দরাবাদ থেকে ভোরের বিমানে কলকাতায় চলে আসেন সিবিআইয়ের প্রধান আইনজীবী কে রাঘবচারিলু। কিন্তু বিচারপতি মাত্রে ও বিচারপতি তাপস মুখোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ এ দিন জানিয়ে দেয়, পুজোর ছুটির আগে এই আবেদনের শুনানি সম্ভব নয়। অর্থাৎ জামিন খারিজের মামলার ভবিষ্যৎ শেষ পর্যন্ত যা-ই হোক, মদনবাবু অন্তত পুজো পর্যন্ত নিজের অন্তরঙ্গ মহলেই থাকতে পারছেন।
সেটা যাতে না-হয়, তার জন্য রাঘবচারিলু এ দিন জামিন খারিজের দ্রুত শুনানি চেয়ে ডিভিশন বেঞ্চে মৌখিক আবেদন করেন। কিন্তু বিচারপতি মাত্রে জানিয়ে দেন, তাঁদের আদালতে শুনানির জন্য বেশ কিছু মামলা জমে গিয়েছে। পুজোর আগে সেগুলোর নিষ্পত্তি করতেই হবে। এই অবস্থায় কবে সিবিআইয়ের ওই আবেদনের শুনানি হবে, সেটা ঠিক করা হবে ৫ অক্টোবর। মদনবাবুর ঘনিষ্ঠদের আশা, যত তাড়াতাড়িই হোক না কেন, ডিভিশন বেঞ্চ নিশ্চয়ই পুজোর আগে সিবিআইয়ের ওই আর্জি শোনার দিন ফেলবে না।
মদনবাবু এ বার জামিন পাওয়ার দিন তিনেকের মধ্যেই সিবিআই তাঁর জামিন বাতিলের আবেদন জানায় হাইকোর্টে। তবে ১৯ সেপ্টেম্বর বিচারপতি অসীম রায়ের ডিভিশন বেঞ্চও তাদের জানিয়ে দেয়, জরুরি ভিত্তিতে ওই মামলা শোনা যাবে না। তাতে সন্তুষ্ট হতে না-পেরে সিবিআই দ্রুত শুনানির জন্য লিখিত আবেদন করে প্রধান বিচারপতি গিরীশ গুপ্তের ডিভিশন বেঞ্চে। প্রধান বিচারপতি মামলাটি যাঁর এজলাসে পাঠান, সেই বিচারপতি মাত্রেও এ দিন কার্যত একই কথা জানিয়ে দিয়েছেন।
সিবিআইয়ের তরফে এ দিন বিচারপতির কাছে অভিযোগ জানানো হয়, কয়েক দিন আগে জামিন খারিজের আবেদন সংক্রান্ত মামলার নথিপত্র মদনবাবুকে দিতে গিয়েছিলেন তদন্তকারী অফিসার। কিন্তু হাইকোর্টের নির্দেশ ছাড়া সেই নথি গ্রহণ করা হবে না বলে জানিয়ে দেন মদনবাবুর লোকজন। ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, ওই নথিপত্রের বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে ৫ অক্টোবর। পুজো কার্যত শুরু ৭ অক্টোবর। তাই মদন-শিবিরের আশা, মহোৎসবে নেতাকে তারা নিজেদের মধ্যে পাবে।
জামিনে মুক্তির পরে মন্দিরে পুজো দিয়ে প্রাক্তন মন্ত্রীর প্রার্থনা ছিল, ‘‘প্রভু, এ বার আমি বাড়ি ফিরতে চাই।’’ এ দিন যোগাযোগ করা হলে মদনবাবু বলেন, ‘‘পুজোয় পরিবারের সঙ্গে কাটাতে পারব, এটা তো আমার কাছে সব সময়েই খুশির খবর।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy