Advertisement
০৩ মে ২০২৪

বদনামি ছেড়ে মহব্বতে শোনা গেল না সারদা-সুর

কলকাতার সৌজন্য বজায় রইল বার্নপুরেও। কলকাতার নজরুল মঞ্চের পর এ বার আসানসোলের পোলো গ্রাউন্ডও দেখল, মোদী-মমতা এখন কাছাকাছি। লোকসভা ভোটের আগে নরেন্দ্র মোদীর কোমরে দড়ি পরানোর কথা বলেছিলেন যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তিনিই এ দিন বললেন, ‘‘পেয়ার মহব্বত সে কাম হোতা হ্যায়, বদনামি সে নেহি।’’ আর মোদী বললেন, ‘‘ভোটের আগে আমিও অনেককে আক্রমণ করেছি। অনেকে আমাকে আক্রমণ করেছেন। কিন্তু এখন সে সব মনে রাখলে চলবে না।’’

কলকাতার নজরুল মঞ্চ, রাজভবনের পর বার্নপুরের ইস্কো কারখানা। এক ফ্রেমে মোদী-মমতা। বহাল রইল সেই সৌজন্যই। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

কলকাতার নজরুল মঞ্চ, রাজভবনের পর বার্নপুরের ইস্কো কারখানা। এক ফ্রেমে মোদী-মমতা। বহাল রইল সেই সৌজন্যই। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

নিজস্ব সংবাদদাতা
বার্নপুর শেষ আপডেট: ১১ মে ২০১৫ ০৪:০৯
Share: Save:

কলকাতার সৌজন্য বজায় রইল বার্নপুরেও।

কলকাতার নজরুল মঞ্চের পর এ বার আসানসোলের পোলো গ্রাউন্ডও দেখল, মোদী-মমতা এখন কাছাকাছি।

লোকসভা ভোটের আগে নরেন্দ্র মোদীর কোমরে দড়ি পরানোর কথা বলেছিলেন যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তিনিই এ দিন বললেন, ‘‘পেয়ার মহব্বত সে কাম হোতা হ্যায়, বদনামি সে নেহি।’’ আর মোদী বললেন, ‘‘ভোটের আগে আমিও অনেককে আক্রমণ করেছি। অনেকে আমাকে আক্রমণ করেছেন। কিন্তু এখন সে সব মনে রাখলে চলবে না।’’

অতীতের তিক্ততা ভুলে মোদী-মমতা কি এখন সমঝোতার পথে? গত দু’দিনের ছবি এই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। প্রশ্ন তৈরি হয়েছে সারদা তদন্তের ভবিষ্যত্ নিয়েও। এ দিন মোদী সুযোগ পেয়েও সারদা কেলেঙ্কারি নিয়ে একটিও শব্দ উচ্চারণ না-করায় আরও জোরদার হয়েছে সেই জল্পনা।

এ দিন বক্তৃতায় কয়লা কেলঙ্কারি থেকে শুরু করে স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারি, সাবমেরিন কেলেঙ্কারি নিয়ে ইউপিএ সরকারের তীব্র সমালোচনা করেন মোদী। কিন্তু সারদা কেলেঙ্কারির কথা তোলেননি। যা দেখে রাজনীতিকদের একাংশের মত, এটা বদলে যাওয়া পরিস্থিতিরই প্রতিফলন।

বিজেপি রাজ্য নেতৃত্ব অবশ্য এই মত মানতে নারাজ। পশ্চিমবঙ্গে দলের সভাপতি রাহুল সিংহের ব্যাখ্যা, ‘‘প্রধানমন্ত্রী দিল্লির কেলেঙ্কারির কথা বলছিলেন। সেখানে রাজ্যের প্রসঙ্গ আনার অবকাশ নেই। সারদায় যুক্ত কেউই যে ছাড় পাবেন না, তা তিনি আমাদের জানিয়েছেন।’’

কিন্তু এই দাবি খারিজ করে অনেকেরই পর্যবেক্ষণ, গত ২৯ জানুয়ারি মুকুল রায়ের জেরা-পর্বের পর থেকে সিবিআই যে ভাবে সারদা-তদন্তে রাশ টেনেছে, তাতে প্রধানমন্ত্রীর মুখে এই প্রসঙ্গ না-থাকাটাই স্বাভাবিক বলে মনে হচ্ছে। ইতিমধ্যে বিমা, পেনশন, স্থলসীমান্ত ইত্যাদি একাধিক বিল নিয়ে রাজ্যসভায় সংখ্যালঘু মোদী সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছে তৃণমূল। এই পরিস্থিতিতে সারদা প্রসঙ্গ খুঁচিয়ে মমতাকে বৈরী করতে চান না বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের একটি অংশ। যদিও সরকারি ভাবে তাদের বক্তব্য, সিবিআই-কে নিয়ন্ত্রণ করার প্রশ্নই নেই। আর সরকার পরিচালনার সঙ্গে সম্পর্ক নেই পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল-বিরোধী রাজনীতিরও।

নজরুল মঞ্চের পরে এ দিনেরও অনুষ্ঠানও অবশ্য মোদী ও মমতার মধ্যে সম্পর্ক সহজ হয়ে আসার বার্তাই দিয়েছে। মঞ্চে দুজনে পাশাপাশিই বসেছিলেন। অন্তত বার চারেক মুখ্যমন্ত্রীকে প্রধানমন্ত্রীর দিকে ঝুঁকে কথা বলতে দেখা যায়। এক বার শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটককে ডেকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপও করিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। আর এক বার কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় এসে মুখ্যমন্ত্রী-প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে যান। চলে হাসি-ঠাট্টাও।

মমতা তাঁর বক্তৃতায় বলেন, ‘‘যখনই আমরা একসঙ্গে কাজ করি, তখনই সাফল্য আসে। বিভাজন করলে আখেরে সব কিছু নষ্ট হয়ে যায়।’’ মুখ্যমন্ত্রী যখন এ কথা বলছেন, তখন মন দিয়ে শুনছিলেন প্রধানমন্ত্রী। পরে নিজে বলতে উঠে বুঝিয়ে দেন, কেন্দ্র-রাজ্য যে সুসম্পর্কের কথা তিনি গোড়ার দিন থেকে বলে আসছেন, সেটা মুখ্যমন্ত্রী এত দিনে উপলব্ধি করেছেন! তাতে তিনি খুশি। মোদী বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী সুন্দর বলেছেন। ঠিকই বলেছেন। কেন্দ্র-রাজ্য একসঙ্গে মিলে কাজ করলে তবেই দেশের উন্নয়ন গতি পাবে।’’ মোদীর বক্তব্য, এত দিন দিল্লি থেকে দেশ চলেছে। মুখ্যমন্ত্রীদের গুরুত্ব ছিল না। কিন্তু এখন? তাঁর কথায়, ‘‘একা প্রধানমন্ত্রী দেশ চালাতে পারেন না। তাঁর সঙ্গে থাকবে ৩০টি স্তম্ভ। প্রতিটি রাজ্যই এক একটি স্তম্ভ। প্রধানমন্ত্রী-মুখ্যমন্ত্রীর এই জুটিই দেশ গড়বে।’’

তবে সৌজন্য এবং রাজ্যের সঙ্গে সহযোগিতার কথা বললেও নিজের অবস্থানে তিনি যে অনড় সেটা এ দিনও বুঝিয়ে দিয়েছেন মোদী। শনিবার রাজভবনে রাজ্যের আর্থিক পরিস্থিতি উন্নয়নে মমতার দাবিদাওয়া মন দিয়ে শুনেছিলেন। কোনও মন্তব্য করেননি। এ দিন তিনি বুঝিয়ে দিলেন, পশ্চিমবঙ্গের জন্য আলাদা করে আর্থিক সুবিধা দেওয়ার ভাবনা এই মুহূর্তে অন্তত তাঁর নেই। গোটা দেশের জন্যই নীতিতে যে বদল তিনি এনেছেন, তার সুফলই এ রাজ্য পাবে।

মোদীর ব্যাখ্যা, চতুর্দশ অর্থ কমিশনের পর দেশের মোট আয়ের ৬২% রাজ্যগুলির কাছে চলে যাচ্ছে। এর লাভ রাজ্যই পাবে। পূর্বাঞ্চলের দ্বিতীয় সবুজ বিপ্লব, কয়লার নিলাম, অ্যাক্ট-ইস্ট নীতির কথা তুলে ধরে তাঁর আশ্বাস, ‘‘কেন্দ্রের বিশেষ নজর সব সময়ই থাকবে এই তল্লাটের দিকে।’’ আবার রাজ্যগুলির মধ্যে উন্নয়নের প্রতিযোগিতা বাড়াতেই যে যোজনা কমিশন ভেঙে নীতি আয়োগ গড়া হয়েছে, উঠে এসেছে সে প্রসঙ্গও। নীতি আয়োগের কোনও বৈঠকে যে যাননি মমতা— তা নিয়ে কিন্তু খোঁচা দিতে ছাড়েননি মোদী।

তবে রাজ্যে বিধানসভা ভোটের এক বছর আগে প্রতিপক্ষকে আক্রমণে তীব্রতা নয়, এমন অল্প খোঁচা দিয়েই কাজ সারলেন মোদী। আর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বার্তা দিলেন সহযোগিতার। বললেন, ‘‘দলের আগে দেশ বড়।’’ আর দিদি বললেন, ‘‘রোশনি সিতারো সে নেহি, চাঁদ সে হোতি হ্যায়।’’

প্রধানমন্ত্রী মোদীর প্রথম রাজ্য সফরে তৃণমূল নেত্রী হাতে চাঁদ পেলেন কি না, প্রশ্ন সেটাই!

কেএমডিএ-তে মোদীর হস্তক্ষেপ দাবি

কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (কেএমডিএ)-র হাল ফেরাতে প্রধানমন্ত্রীর দ্বারস্থ হল ওই সংস্থার কর্মীদের সংগঠন ডেভেলপমেন্ট এমপ্লয়িজ জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক প্রাণবন্ধু নাগ বিজেপির সরকারি কর্মচারী পরিষদেরও নেতা। শনিবার তিনি মোদীর সচিবের হাতে দাবিপত্র দেন। তাঁদের অভিযোগ, স্বার্থান্বেষীদের আখড়া হয়ে উঠেছে কেএমডিএ। পর্যবেক্ষক নিয়োগ করে দুর্নীতি বন্ধে প্রধানমন্ত্রী ক়়ড়া নজরদারি চালান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE