ইউরোপ এবং এশিয়ার একাধিক দেশের সামনে পর্যটন মেলার মঞ্চে সুযোগ পেতে চলেছে উত্তরবঙ্গও। ২০১৫ সালে উত্তর পূবার্ঞ্চলের সবচেয়ে বড় পর্যটন মেলা, ‘ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেল মার্ট’ হতে চলেছে সিকিমের গ্যাংটকে। আর এতেই উত্সাহিত উত্তরবঙ্গের পর্যটন ব্যবসায়ীরা।
উত্তরবঙ্গের পর্যটন শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা জানান, কেন্দ্রীয় সরকার শুধুমাত্র উত্তর পূর্বাঞ্চলের জন্য ভেবে ওই ট্রাভেল মার্ট শুরু করলেও তাতে পশ্চিমবঙ্গ পর্যটনকে জোড়া হয়। কারণ উত্তরবঙ্গ উত্তর পূর্বাঞ্চলের ‘গেটওয়ে’। সেখানে সিকিমে ওই পর্যটন উত্সব হলে তাতে অবধারিতভাবে উত্তরবঙ্গ আলাদা গুরুত্ব পাবে। চলতি মাসে সিকিমের পর্যটন দফতর এবং বিভিন্ন দফতরের অফিসারেরা বিষয়টি নিয়ে একটি বৈঠকও করেছেন।
কেন্দ্রীয় পর্যটন মন্ত্রকের উদ্যোগে গত অক্টোবরে মেঘালয়ের শিলং-এ হয়েছিল ‘ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেল মার্ট’। ১৬টি দেশের পর্যটন শিল্পের সঙ্গে জড়িত প্রতিনিধিরা তৃতীয়বারে’র ওই ট্রাভেল মার্টে উপস্থিত ছিলেন। তার পরেই কেন্দ্রীয় সরকার সিদ্ধান্ত নেয় ২০১৫-র অক্টোবর মাসে চতুর্থ মার্ট হবে গ্যাংটকে। সিকিম সরকারের প্রধান পরামর্শদাতা (পর্যটন) রাজ বসু বলেন, “সিকিমে এই মার্ট হওয়াটা এই অঞ্চলের জন্য বড় বিষয়। সিকিম, দার্জিলিং এবং ডুয়ার্স নিয়েই এই অঞ্চলের পর্যটন সার্কিট। দেশি-বিদেশি যে কোনও পর্যটক এই সার্কিট ধরেই এই এলাকায় ঘুরতে আসেন। তাই কেন্দ্রের ওই সিদ্ধান্ত উত্তরবঙ্গের কাছেও বিরাট পাওনা।” রাজবাবু জানান, প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে। বিভিন্ন দেশের সেরা পর্যটন সংস্থাগুলির প্রতিনিধিদের নিয়ে আসাই এ বার আমাদের লক্ষ্য। এবার আমেরিকা, জার্মান, ফ্রান্স, ইটালি, সুইত্জারল্যান্ড দেশগুলির মত ১৬টি দেশ মার্টে যোগ দিয়েছিল।
ইস্টার্ন হিমালয়া ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশনের কার্যকরী সভাপতি সম্রাট সান্যাল বলেন, “ট্রাভেল মার্টে আসা বিদেশি প্রতিনিধিরা দেশে ফিরে সে দেশের পর্যটকদের ভারতে এই অঞ্চলে আসতে উত্সাহিত করেন। সেই দিক এবার উত্তরবঙ্গের সামনে বড় সুযোগ এসেছে।”
সরকারি সূত্রের খবর, উত্তরবঙ্গের পাহাড় ছাড়াও গোটা ডুয়ার্সকে নতুন করে সাজানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। গরুমারা, জলদাপাড়া এবং বক্সাকে কেন্দ্র করে নতুন নতুন পর্যটন কেন্দ্র, ওয়েসাইড ইন, মিউজিয়াম তৈরি শুরু হয়েছে। সরকারিভাবে হোমস্টে’র তথ্য ভাণ্ডার তৈরি করে পর্যটকদের সামনে তুলে ধরার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। পাহাড় ও ডুয়ার্সে চা বাগানগুলিকে ঘিরে বেসরকারি উদ্যোগে চালু হয়েছে চা পর্যটনও। ইতিমধ্যে এলাকাগুলিতে বিদেশি পর্যটকদের সংখ্যাও বেড়েছে। রাজ্য পর্যটন দফতরের যুগ্ম অধিকর্তা (উত্তর) সুনীল অগ্রবাল বলেন, “আমরা প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছি। মার্টে পুরানোর সঙ্গে নতুন গন্তব্যকে তুলে ধরাই আমাদের মূল লক্ষ্য থাকবে।”
দেশের শুধুমাত্র সিকিম, অরুণাচল, মিজোরাম, মণিপুর, ত্রিপুরা’র-মত আটটি রাজ্যের পর্যটন বিকাশের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের পর্যটন মন্ত্রক ২০১২ সালে ট্রাভেল মার্টটি শুরু করে। তাতে পশ্চিমবঙ্গকে জোড়া হয়। প্রথম অসমের গুয়াহাটি, দ্বিতীবার অরুণাচলের তাওয়াং এবং তৃতীয়বার, গতমাসে মেঘালয়ের শিলং-এ মার্টটি হয়েছে। সরকারি সূত্রের খবর, মার্টে প্রতিটি রাজ্য তাঁদের নিজেদের বিশেষত্ব, সার্কিটগুলি তুলে ধরে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন রাজ্যের ট্রাভেল এজেন্ট’রা বিদেশি প্রতিনিধিদের সঙ্গে সরাসরি বৈঠক করার সুযোগ পান। বিভিন্ন এলাকার পরিকাঠামোগত দিকগুলি নিয়েও আলোচনা হয়। বিভিন্ন বিদেশি দল রাজ্যগুলির বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখেন। এবারও শিলং থেকে একটি বিদেশি প্রতিনিধি দল উত্তরবঙ্গের পাহাড়, ডুয়ার্স ও শিলিগুড়িও ঘুরে গিয়েছেন।
এ ছাড়াও সম্প্রতি দেশের ৫০টি পর্যটন সার্কিট চিহ্নিত করেছে কেন্দ্রীয় পর্যটন মন্ত্রক। সরকারি সূত্রের খবর, ওই সার্কিটগুলির মধ্যে রাজ্যের উত্তরবঙ্গ এবং দক্ষিণবঙ্গের বিরাট এলাকা রয়েছে। আগামী কয়েক বছর ধরে নানা কেন্দ্রীয় প্রকল্পে এলাকাগুলির পরিকঠামোর কাজ হবে। এরমধ্যে প্রাকৃতিক ট্যুরিজম সার্কিট হিসাবে জলদাপাড়া, গরুমারা, বক্সা, চাপরামারি, নেওরাভ্যালি, জয়ন্তী, বিন্দু, রাজাভাতখাওয়া, জলঢাকা, সামসিং, রসিকবিল, সুনতালাখোলা, টোটোপাড়া, ভুটানঘাট, ধূপঝোড়ার, টাইগারহিল, বাতাসিয়া, চৌরাস্তা-সহ একাধিক এলাকা রয়েছে। আর দক্ষিণবঙ্গে সুন্দরবন, দিঘা, ঝাড়গ্রাম, মকুটমণিপুর, অযোধ্যা পাহাড়ের মত এলাকাগুলি রয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy