Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

সৈকতকে ধরার জন্য পুলিশ চাইল গ্রেফতারি পরোয়ানা

তৃণমূল নেতার দাবি, তিনি কলকাতা হাইকোর্টে আগাম জামিন পেয়েছেন। তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও দাবি করেছেন, ‘সৈকত জামিন পেয়েছে’। কিন্তু পুলিশকর্মীকে মারধরের মামলায় অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা সৈকত চট্টোপাধ্যায়ের জামিন পাওয়া সংক্রান্ত কোনও তথ্য পাচ্ছে না জলপাইগুড়ি জেলা পুলিশ।

সোমবার ছিলেন পাশাপাশি। মঙ্গলবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভায় অবশ্য পিছনের সারিতে দেখা গেল সৈকত চট্টোপাধ্যায়কে। আলিপুরদুয়ারে নারায়ণ দে-র তোলা ছবি।

সোমবার ছিলেন পাশাপাশি। মঙ্গলবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভায় অবশ্য পিছনের সারিতে দেখা গেল সৈকত চট্টোপাধ্যায়কে। আলিপুরদুয়ারে নারায়ণ দে-র তোলা ছবি।

কিশোর সাহা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০১৪ ০২:৩০
Share: Save:

তৃণমূল নেতার দাবি, তিনি কলকাতা হাইকোর্টে আগাম জামিন পেয়েছেন। তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও দাবি করেছেন, ‘সৈকত জামিন পেয়েছে’। কিন্তু পুলিশকর্মীকে মারধরের মামলায় অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা সৈকত চট্টোপাধ্যায়ের জামিন পাওয়া সংক্রান্ত কোনও তথ্য পাচ্ছে না জলপাইগুড়ি জেলা পুলিশ। তারা সৈকতকে ধরার জন্য আদালতের কাছে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করার আবেদন জানিয়েছে। জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল বলেন, “ওই মামলায় সৈকতবাবু জামিন পেয়েছেন বলে আমাদের জানা নেই।”

জলপাইগুড়ি কোতোয়ালি থানার নথি বলছে, পুলিশকর্মীকে চড় মারার মামলায় তৃণমূল যুবর জেলা সভাপতি সৈকত চট্টোপাধ্যায় ‘ফেরার।’ অথচ, সোমবার জলপাইগুড়ির পরে, মঙ্গলবারও সৈকতকে মঞ্চে নিয়ে আলিপুরদুয়ারে সভা করেছেন অভিষেক। তবে সোমবার যুবর শীর্ষ নেতা অভিষেককে জলপাইগুড়ির সভা-মঞ্চে অভ্যর্থনা জানাতে দেখা গিয়েছিল সৈকতকে। দু’জন মঞ্চে কথাও বলেন। আলিপুরদুয়ারের মঞ্চে এ দিন অভিষেক সৈকতের সঙ্গে কথা বলেননি। মঞ্চে হাজির অন্যদের কথা বললেও সৈকতের নামোল্লেখও করতে শোনা যায়নি তাঁকে।

সৈকত এ দিনও দাবি করেছেন, তিনি কলকাতা হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন পেয়েছেন। তবে কবে জামিন পেয়েছেন বা তাঁর আইনজীবী কে সে প্রশ্নের জবাব দেননি। অভিষেকের বক্তব্য, “এ প্রসঙ্গে যা বলার আগেই বলেছি।”

বিধি বলছে, নিম্ন আদালতে বিচারাধীন মামলায় অভিযুক্ত উচ্চ আদালতে আগাম জামিনের আবেদন করলে উচ্চ আদালত ‘কেস ডায়েরি’ তলব করে পুলিশের থেকে। শুধু তা-ই নয়, জামিনের আবেদন করা হয়েছে, এই মর্মে অভিযুক্তের পক্ষ থেকে নিম্ন আদালতে জানানোটাই প্রথা। অথচ, সৈকত জামিনের আবেদন করেছেন বলে জেলা পুলিশ আদালতে মামলার নথিতে কোনও উল্লেখ পায়নি।

তা হলে ঠিক কী হয়েছে? পুলিশ-কর্তারা নিরুত্তর। তবে জলপাইগুড়ির পুরপ্রধান তথা তৃণমূল নেতা মোহন বসু বলেছেন, “যত দূর জানি, সৈকত জামিন পাননি।”

রাজ্য পুলিশের একাধিক কর্তা ঘনিষ্ঠ মহলে মানছেন, সৈকত-প্রশ্নে তাঁরা পড়েছেন উভয়সঙ্কটে। তাঁদের দাবি, অভিষেক যাঁকে মঞ্চে নিয়ে সভা করছেন, সেই সৈকতকে গ্রেফতার করার কথা ভেবে এক পা এগিয়ে দু’পা পিছিয়ে যাচ্ছেন অফিসারদের অনেকে। আবার এক পুলিশকর্মীকে প্রকাশ্যে চড় মারার মামলায় অভিযুক্ত নেতাকে হাতের কাছে পেয়েও কেন গ্রেফতার করা যাবে না তা নিয়ে পুলিশের অন্দরেও ক্ষোভ দানা বেঁধেছে। ব্যাপারটা ধামাচাপা দিলে পুলিশের নিচুতলার একাংশে ‘বিদ্রোহের’ আশঙ্কা পুরোপুরি উড়িয়ে দিচ্ছেন না পুলিশ-কর্তারা।

এই পরিস্থিতিতে জলপাইগুড়ি জেলা পুলিশ ‘ফেরার’ সৈকতবাবুকে ধরার জন্য আদালতের কাছে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আর্জি জানিয়েছে। হাতের কাছে পেয়েও কেন জামিন অযোগ্য ধারার মামলায় ‘ফেরার’ সৈকতবাবুকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না? পুলিশ সুপারের মন্তব্য, “বিচারাধীন বিষয়। আদালতে সব জানানো হয়েছে। ফেরারকে ধরতে আদালতের মাধ্যমে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়ে থাকে। সেই প্রক্রিয়া চলছে।”

গত ১৭ জুলাই জলপাইগুড়ি শহরে রাস্তায় গাড়ি দাঁড় করানো নিয়ে গোলমালের সময়ে ট্রাফিক কনস্টেবল নৃপেন পালচৌধুরীকে চড় মারার অভিযোগ ওঠে সৈকতবাবুর বিরুদ্ধে। পেশায় আইনজীবী সৈকতবাবু তৃণমূল যুব কংগ্রেসের জলপাইগুড়ি জেলা সভাপতি। তিনি পুলিশের বিরুদ্ধে ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ করেন। কনস্টেবলের অভিযোগের ভিত্তিতে জামিন অযোগ্য ধারায় (আইপিসি ৩৫৩ ধারা) মামলা রুজু হয়।

তার পরেও পুলিশ সৈকতকে গ্রেফতার না করায় সিপিএম নেতা তথা প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যের টিপ্পনী, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা তাঁর ভাইপোর আশেপাশে কারা থাকেন তা ভাল জানে পুলিশই। চড় খেয়েও পুলিশ হাতের কাছে থাকা অভিযুক্তকে ধরতে পারছে না। কোথাও টেবিলের তলায় লুকোচ্ছে। কোথাও গুলি খেয়ে মরছে। পুলিশের জন্য খুব মায়া হচ্ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE