মানিক ভট্টাচার্যের সঙ্গে অর্পিতা ঘোষ। বালুরঘাটে শনিবার।—নিজস্ব চিত্র
প্রাথমিক শিক্ষক পদে তৃণমূলের ছেলেমেয়েদের চাকরি হবে। তার জন্য দরকার হলে তিনি জেলে যাবেন। প্রকাশ্য সভায় এমনই ঘোষণা করলেন রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষক পর্ষদের সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য। তাঁর পাশে তখন বসে বালুরঘাট লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী অর্পিতা ঘোষ। মানিকবাবু সব প্রাথমিক শিক্ষককে অর্পিতাদেবীর হয়ে প্রচারে নামতেও আহ্বান করেন।
শুক্রবার সন্ধ্যায় তৃণমূলের প্রাথমিক শিক্ষকদের একটি সভায় পর্ষদ সভাপতির ওই বক্তব্যের জেরে শনিবার সকাল থেকে হইচই পড়ে যায়। তৃণমূল প্রার্থীর পাশে বসে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি কী করে চাকরির প্রতিশ্রুতি দিতে পারেন, সে প্রশ্ন তুলে বিরোধীরা নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হচ্ছেন। সংবাদমাধ্যমে বিষয়টি জেনে জেলাশাসকের কাছে রিপোর্টও চেয়েছে কমিশন। তবে কমিশন সূত্রে খবর, মানিকবাবু প্রার্থী নন, তাই ‘অফিস অফ প্রফিট’-এর মধ্যে পড়ছেন না। আর পর্ষদ সভাপতি হিসাবে উনি ওই অনুষ্ঠানে হাজির থাকতে পারেন কি না, তা দেখা কমিশনের এক্তিয়ারে পড়ে না। উপযুক্ত আইন থাকলে রাজ্য প্রশাসন ব্যবস্থা নিতে পারে।
মানিকবাবুর দাবি, তিনি অন্যায় কিছু বলেননি। পর্ষদ সভাপতি নয়, তিনি ওই সভায় গিয়েছিলেন শিক্ষক হিসেবে। কিন্তু কাদের চাকরি হবে, কখন হবে, তা নিয়ে মন্তব্য করলেন কেন? মানিকবাবুর জবাব, “ওটাকে ঘোষণা হিসাবে না দেখে দাবি হিসাবে দেখাই উচিত হবে।”
শুক্রবার ঠিক কী বলেছেন মানিকবাবু? এ দিন বালুরঘাটের নাট্যতীর্থ মঞ্চে ‘দক্ষিণ দিনাজপুর তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি’-র ‘কর্মিসভায়’ আমন্ত্রিত ছিলেন তিনি। সভায় তিনি বলেন, “বাম আমলে তৃণমূলের কারও চাকরি হত না।
রাজ্যে পরিবর্তনের সরকার আসার পর আমরা ওই নিয়ম ভেঙ্গে দিয়েছি। প্রাথমিক শিক্ষক পদে আজ, আগামীকাল, পরশুও তৃণমূলের ছেলেমেয়েদের চাকরি হবে। তার সঙ্গে অন্যদেরও চাকরি হবে। এর জন্য দরকার হলে জেলে যেতে হয় যাব।” সেই সময়ে মানিকবাবুর সঙ্গে মঞ্চে অর্পিতা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন পূর্তমন্ত্রী শঙ্কর চক্রবর্তী, জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্র-সহ জেলার তৃণমূল বিধায়কেরা।
বিরোধীদের দাবি, সাম্প্রতিক টেট পরীক্ষায় তৃণমূল সরকারের স্বজনপোষণ নিয়ে তাঁদের তোলা অভিযোগই প্রকাশ্যে স্বীকার করে নিলেন মানিকবাবু। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য শ্যামল চক্রবর্তীর কথায়, “আমরা বলেছিলাম, শিক্ষক নিয়োগের তালিকা তৃণমূল কার্যালয়ে তৈরি হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি নিজেই বুঝিয়ে দিলেন, অভিযোগ ঠিক।”
তবে প্রধান প্রশ্ন উঠেছে এ দিনের সভায় মানিকবাবুর উপস্থিতিকে ঘিরেই। জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক মানবেশ চৌধুরী বলেন, “পর্ষদ সভাপতি হয়ে ওই সভায় গিয়েই অন্যায় করেছেন মানিকবাবু।” শ্যামলবাবুও বলেন, “প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি পদে থেকে উনি (মানিক) নির্বাচনী প্রচারে যেতে পারেন না। যেতে হলে ওঁকে ইস্তফা দিয়ে যেতে হবে।”
প্রদেশ কংগ্রেস নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, “প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতির কাজ অনেকটাই প্রশাসনিক (এগ্জিকিউটিভ)। তিনি দলীয় কর্মিসভায় এমন কথা বলতে পারেন না। এটা অনৈতিক, বেআইনি।”
তবে তৃণমূলের জেলা সভাপতি বিপ্লববাবু বলেন, “পর্ষদ সভাপতি হিসাবে নন, মানিকবাবু শিক্ষক হিসাবে ওই সভায় বক্তব্য রাখেন।” তাঁর দাবি, বিরোধীরাই এ নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি করছেন। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এ নিয়ে কোনও কথা বলতে চাননি। তিনি বলেন, “্আমি নির্বাচনী বিধির আওতায় আছি। এ নিয়ে কিছু বলব না।”
বালুরঘাটের ওই সভায় তাঁর উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে শনিবার মানিকবাবু বলেন, “আমি কোনও প্রার্থীর প্রচার সভায় যাইনি। আমন্ত্রিত হয়ে গিয়েছিলাম একটি শিক্ষক সংগঠনের বার্ষিক সম্মেলনে। সেখানে তৃণমূলের অন্যতম প্রার্থী অর্পিতা ঘোষ ছিলেন। উদ্যোক্তারা তাঁকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, এতে আমার কিছু করার নেই।”
শুক্রবারের ওই সভায় মানিকবাবু অবশ্য প্রকাশ্যে অর্পিতাকে সমর্থন করার আবেদন করেছিলেন। তিনি বলেন, রাজ্যে প্রশিক্ষণহীন ৩৩,৫৫০ জন প্রার্থী যাতে আবার টেট পরীক্ষায় বসতে পারে, তার জন্য বিহার, ত্রিপুরার মতো পশ্চিমবঙ্গকেও কেন্দ্রের ‘ন্যাশনাল কাউন্সিল অব টিচার এডুকেশন’-এর নিয়ম থেকে ছাড় দিতে হবে। ওই দাবিকে সংসদে জোরদার করতে তৃণমূল প্রার্থী অর্পিতা ঘোষের হয়ে সমস্ত প্রাথমিক শিক্ষককে প্রচারে নামতে আহ্বান করেন মানিকবাবু।
রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের ব্যাখ্যা, শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা নিয়ে নানা আইনি জটিলতায় জেরবার হয়েছে রাজ্য সরকার। তাতে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়াও হয়েছে। ভোটের মুখে তাদের মন পাওয়ার চেষ্টা করেছেন মানিকবাবু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy