Advertisement
০৫ মে ২০২৪

১০ ঘণ্টা জলহীন হাসপাতাল

ভোরে শৌচালয়ে গিয়েছিলেন মন্টু সাহা, দীপেনচন্দ্র রায়ের মতো রোগীরা। মাঝপথে কল খুলে দেখেন জল নেই। শৌচালয় থেকেই হাঁকডাক করে জল দেওয়ার ব্যবস্থা করতে বলেন। কিন্তু জল কোথায়?

ট্যাপ বন্ধ করে জল নেওয়া হচ্ছে মেরামতির কাজের জন্য। —নিজস্ব চিত্র।

ট্যাপ বন্ধ করে জল নেওয়া হচ্ছে মেরামতির কাজের জন্য। —নিজস্ব চিত্র।

সৌমিত্র কুণ্ডু
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৬ ০১:৪৩
Share: Save:

ভোরে শৌচালয়ে গিয়েছিলেন মন্টু সাহা, দীপেনচন্দ্র রায়ের মতো রোগীরা। মাঝপথে কল খুলে দেখেন জল নেই। শৌচালয় থেকেই হাঁকডাক করে জল দেওয়ার ব্যবস্থা করতে বলেন। কিন্তু জল কোথায়? শনিবার বিকেলে মেরামতির কাজ করার পর পাম্পের সংযোগ বন্ধ করেই চলে গিয়েছিলেন কর্মীরা। ফলে মাঝ রাত থেকে রবিবার সকাল পর্যন্ত টানা ১০ ঘন্টারও বেশি জল সরবরাহ বন্ধ ছিল শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে। স্বাস্থ্যকর্মীদের বলেও তাই লাভ হয়নি। তা নিয়ে ভোরে মেল মেডিসিন ওয়ার্ডে গোলমাল বাঁধে। অন্য ওয়ার্ডগুলিতেও রোগীদের একই সমস্যা হচ্ছে দেখে হইচই শুরু হয় হাসপাতাল জুড়েই। খবর যায় সুপারের কাছে। পতিতপাবন বিশ্বাস, সঞ্জয় সরকারের মতো রোগী, সুভাষ সাহা, রিনা সাহানির মতো রোগীর আত্মীয়েরা হাসপাতাল সুপারের অফিস তথা কোয়ার্টারের সামনে গিয়ে চিৎকার চেঁচামেচি জুড়ে দেন।

সকালে হাসপাতালে এসেছিলেন দার্জালিং জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অসিত বিশ্বাস। পরিস্থিতি দেখে তিনিও ক্ষুব্ধ। ডেকে পাঠান মেরামতির কাজে যুক্ত পূর্ত বিভাগ এবং জনস্বাস্থ্য কারিগরি বিভাগের দায়িত্বে থাকা বাস্তুকারদের। তাঁরা এসে জল সরবরাহের লাইন ঠিক করে পাম্প চালিয়ে জল তুলে সরবরাহের ব্যবস্থা করলে বেলা সাড়ে ৯ টা নাগাদ পরিস্থিতি শান্ত হয়। হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘বিস্তারিত খোঁজ নিচ্ছি। এ ধরনের সমস্যা যাতে ভবিষ্যতে না হয় তা দেখতে বলছি।’’

মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, ‘‘মেরামতির কাজ চলছে ঠিকই। যারা দায়িত্বে রয়েছেন তাঁদের দেখতে হবে কাজের পর জল সরবরাহ ঠিক মতো হচ্ছে কি না। নিজের বাড়ির মতো ভাবতে হবে। কাজ করে পাম্প বন্ধ করে চলে গেলাম, আর রোগীদের দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে এটা যেন কখনই না হয় তা নজর রাখতে বলেছি।’’

অভিযোগ, গত তিন দিন ধরেই জল সরবরাহ অনিয়মিত হয়ে পড়েছে। এদিন পরিস্থিতি চরমে পৌঁছয়। জ্বরের রোগী মদন সরকারের স্ত্রী সরস্বতী দেবী বলেন, ‘‘সকালে স্বামীকে শৌচাগারে নিয়ে গিয়ে দেখি জল নেই। কী বিপত্তি!’’ হাসপাতালের সুপার অমিতাভ মণ্ডল জানান, সমস্যা কথা জানতে পারার পরেই পূর্ত দফতর এবং জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের দায়িত্বে থাকা বাস্তুকারদের খবর দিয়ে ডেকে পাঠানো হয়। জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়র সুজিত দত্ত জানান, ‘‘পূর্ত দফতরের তরফে নিকাশি, কল মেরামতি-সহ বিভিন্ন সংস্কার কাজ চলছে। সে জন্য তারা পাম্প, ভালবগুলি বন্ধ করেছিলেন। এখন থেকে কাজ শেষের পর আমাদের খবর দিতে বলেছি। আমরা দেখে নেব সব ঠিক মতো রয়েছে কি না?’’

পানীয় জল নিয়ে শৌচালয়ে

পতিতপাবন বিশ্বাস (রোগী)

হাসপাতালের শৌচাগারগুলি এমনিতেই নোংরা হয়ে পড়ে রযেছে। তার উপর জল নেই। দু’দিন ধরে জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি থেকে সেই দুর্ভোগের অভিজ্ঞতা হল। নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীরা সব চুপ চাপ বসে রয়েছেন। জলের জন্যও না কি রোগীদেরকেই সুপারের অফিসে গিয়ে বলতে হবে। শুনে আবাক হই। রবিবার সকালের পরিস্থিতির পর শেষ পর্যন্ত আমাদেরই সুপারের কোয়ার্টারে যেতে হল। এদিন পৌনে সাতটা নাগাদ শৌচালয়ে গিয়ে যখন দেখি কলে জল নেই তখন বিপাকে পড়ি। শৌচালয়ে তখন আরও এক রোগী ছিলেন। তাঁরও একই সমস্যা। শৌচাগারে রাখা একটি বালতিতে শনিবার বিকেলে ভরা কিছু জল পড়েছিল। তাই রক্ষে। অন্য রোগীরা কেউ শৌচালয়ে যেতে পারছেন না, কেউ খাবার জলের বোতল নিয়েই যাচ্ছেন। স্বাস্থ্য কর্মীদের জবাব, গত তাঁরা বারবার বলছেন কিন্তু কেউ ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। রোগীরা বললে যদি কাজ হয়। তাই গেলাম।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

water supply
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE