Advertisement
E-Paper

খালি হাতে লম্বা লাইন, জুটছে দু’হাজারি

পাঁচশো, হাজার টাকার নোট বাতিল হয়ে যাওয়ার পরে, অনেকেই হাতে যা নোট ছিল, ব্যাঙ্কে জমা দিয়ে দিয়েছেন। এ বার হাত খালি। ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলতে আবার লম্বা লাইন দিতে হচ্ছে।

শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০১৬ ০২:২৯
রোজই দাঁড়াতে হচ্ছে লাইনে। সেখানেই বিক্রি হচ্ছে চা, গরম গরম বাদাম ভাজা। শিলিগুড়িতে ছবিটি তুলেছেন বিশ্বরূপ বসাক।

রোজই দাঁড়াতে হচ্ছে লাইনে। সেখানেই বিক্রি হচ্ছে চা, গরম গরম বাদাম ভাজা। শিলিগুড়িতে ছবিটি তুলেছেন বিশ্বরূপ বসাক।

পাঁচশো, হাজার টাকার নোট বাতিল হয়ে যাওয়ার পরে, অনেকেই হাতে যা নোট ছিল, ব্যাঙ্কে জমা দিয়ে দিয়েছেন। এ বার হাত খালি। ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলতে আবার লম্বা লাইন দিতে হচ্ছে। কিন্তু এ বার, আর পুরো টাকা পাওয়া যাচ্ছে না। খুচরোর আকাল। তাই ব্যাঙ্ক থেকে কম করে টাকা দেওয়া হচ্ছে। সে টাকা ফুরিয়ে যাচ্ছে তাড়াতাড়ি। তাই এটিএম হোক বা ব্যাঙ্ক, লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে বারবার। দিনের পর দিন এই একই ভোগান্তিতে মাথায় হাত মানুষের। বিপন্ন স্বাভাবিক জীবন।

বারবার লাইনে

এটিএম-এ টাকা তোলার জন্য বিন্নাগুড়ি থেকে শিলিগুড়িতে বেলা ১০ টা থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে জয় বিশ্বকর্মা। বিন্নাগুড়িতে ব্যাঙ্ক থেকে দুই হাজার টাকার বেশি পাচ্ছেন না। শিলিগুড়িতে এ দিন ব্যাঙ্ক থেকে ১০ হাজার টাকা তুলেছেন। তাতেও সমস্যা কেন না। ২৯ ডিসেম্বর তার বিয়ে। কেনা কাটা সবই বাকি। কার্ড ছাপাতে দিয়েছেন। দুই এক দিনে কার্ড হাতে পেলে তা ব্যাঙ্কে দেখিয়ে টাকা হয়তো পাবেন। কিন্তু কার্ড না থাকাতে এখন এভাবেই পরিস্থিতি সামলাতে হচ্ছে তাঁকে। প্রবীণ নাগরিক বাদল চন্দ্র দে গত কয়েকদিনে তিনবার লাইনে দাঁড়িয়েও টাকা পাননি। এ দিন শিলিগুড়ি পুরসভার কাছে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে লাইনে দাঁড়ান। তিনি বলেন, ‘‘দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতেও সমস্যা হচ্ছে।’’

২০৫ এর মধ্যে ২২

সব এটিএম চালু না হওয়ায় মালদহ জেলা জুড়ে মানুষের দুর্ভোগ চলছেই। জেলায় ২০৫টি এটিএম রয়েছে। তার মধ্যে এ দিন সাকুল্যে ২০-২২টি এটিএম চালু ছিল। সেগুলিতে ভিড় ছিল মারাত্মক। কিন্তু এটিএমগুলিতে টাকা কম পরিমাণে ঢোকানোয় কিছু ক্ষণের মধ্যেই টাকা শেষ হয়ে যায়। ফলে লাইনে দাঁড়িয়েও অনেক মানুষ টাকা পাননি। ফের ছুটেছেন অন্য এটিএমে. কিন্তু সেখান থেকেও অনেককে বিফল মনোরথে ফিরতে হয়েছে। মালদহের ব্যাঙ্কগুলোর লিড ডিস্ট্রিক্ট ম্যানেজার রবীন্দ্রনাথ শর্মা বলেন, ‘‘খুচরো টাকা নেই। তাই এমন সমস্যা হচ্ছে। আমরা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছি।’’ আরও বেশি করে এটিএম খোলার উদ্যোগ হয়েছে। ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই অসংখ্য মানুষ এসে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। এদিন কোনও ব্যাঙ্কে সর্বোচ্চ ১০ হাজার, কোথাও আবার সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা তোলার বিধি করা হয়েছে।

পাত্রীকে ছাড়

ব্যাঙ্ক ও এটিএম পরিষেবা নিয়ে ভোগান্তি অব্যাহত কোচবিহারে। কোচবিহারের খাগরাবাড়ি এলাকায় একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সামনে চড়া রোদে প্রায় এক কিমি দীর্ঘ লাইন পড়েছিল। এক পাত্রীও লাইনে থাকায় তাঁকে আগেভাগে ব্যাঙ্কের ভিতরে ঢোকার সুযোগও দেওয়া হয়। ওই ব্যাঙ্কেই অন্তত চার জন পাত্র-পাত্রী নিজেদের অভিভাবকদের সঙ্গে টাকা তোলার ব্যাপারে খোঁজ নিতে আসেন। এক পাত্রী বলেন, “জীবনের সেরা দিনটার জন্য বিউটি পার্লারের খোঁজ ছেড়ে ব্যাঙ্কে ছুটছি।” এক পাত্র জানিয়েছেন, আগাম ছুটি না নিলে বিয়ের দিনটাই পিছিয়ে দিতেন।

হঠাৎ লাখ টাকা

চাঁচলে বেশ কিছু অ্যাকাউন্টে অন্যের টাকা জমা হচ্ছে বলে ব্যাঙ্ক সূত্রে জানা গিয়েছে। কেননা, এমন একাধিক অ্যাকাউন্ট রয়েছে, যেগুলিতে গত দু’বছর ধরে কোনও লেনদেন হয়নি। অথচ এখন সেই একাউন্টে ৫০ হাজার বা এক লক্ষ টাকা জমা হয়েছে। তবে এখানে আগের তুলনায় ব্যাঙ্ক ও এটিএমগুলিতে ভিড়ের চাপ অনেকটাই কমেছে। এটিএম-ও ২৪ ঘন্টা খোলা থাকায় সুবিধে হয়েছে। তবে এটিএম বিহীন এলাকাগুলিতে অবশ্য এ দিনও কমবেশি ভোগান্তি অব্যাহত। কেননা বঙ্গীয় গ্রামীণ ব্যাঙ্কের শাখাগুলিতে কোথাও টাকা মেলেনি আবার কোথাও সামান্য টাকা দেওয়া হয়েছে।

কালি নেই, টাকাও নেই

ইসলামপুরের একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের ম্যানেজার প্রদীপ দাসের দাবি, টাকা বদল করতে এখন হাতে কালি লাগাতে হচ্ছে। সেই কালি না আসায় এখন টাকা বদল করা যাচ্ছে না। সেই ব্যাঙ্কে গিয়ে মানুষ হয়রানির শিকার হয়েছেন। আবার ইসলামপুরের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক ও বেসরকারি ব্যাঙ্ক সর্বত্রই এটিএম ছিল বন্ধ। বাসিন্দাদের দাবি, সন্ধ্যায় কিছু ব্যাঙ্কের এটিএম খোলা হলেও ঘণ্টা খানেক চলার পরই এটিএমের টাকা শেষ হয়ে যায়।

নতুন নোটের আকাল

জলপাইগুড়িতে স্টেট ব্যাঙ্কের পর সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের মূল শাখাতেও এ দিন পুরানো নোট বদল বন্ধ থাকে৷ ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের দাবি, নতুন নোট ঢুকতে শুরু করলেও তার পরিমাণ যথেষ্ট না থাকাতেই এ দিন পুরানো নোট বদল বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন তাঁরা৷ এর জেরে অনেক গ্রাহকই এদিন সমস্যায় পড়েন৷ তবে জলপাইগুড়ি মূল ডাকঘরে অবশ্য এদিনও পুরানো নোট পরিবর্তন করেছেন গ্রাহকরা৷ ব্যাঙ্কে ভিড় কমলেও, এটিএমের লাইনে তা বেড়েই চলছে৷ নোট বাতিলের জেরে জলপাইগুড়ির পরিস্থিতি এই মুহুর্তে এমনই৷ গত কয়েকদিন ধরে জলপাইগুড়ির বিভিন্ন ব্যাঙ্কে গ্রাহকদের ভিড় উপচে পড়েছিল৷ কিন্তু এ দিন সেই ভিড় অনেকটাই কম ছিল৷ ব্যাঙ্ক কর্তাদের কথায়, অনেক এটিএম চালু হয়ে যাওয়াতেই ব্যাঙ্কে গ্রাহকদের ভিড় খানিকটা কমেছে৷

২০০০ পেয়ে সমস্যা

দক্ষিণ দিনাজপুরের নতুন ২০০০ টাকার নোট মিললেও তা নিয়ে বাজারে জিনিস কিনতে গিয়ে নতুন করে খুচরো সমস্যায় পড়ছেন বাসিন্দারা। শুক্রবার বালুরঘাট এবং গঙ্গারামপুর শহরে ব্যাঙ্কগুলিতে কোনও ভিড়ই ছিল না। বালুরঘাটে এটিএম থেকেও টাকা মিলছে। তবে গ্রামীণ এলাকার ব্যাঙ্ক এবং ডাকঘরগুলিতে এ দিন দুপুর ১টার পর থেকে টাকা ফুরিয়ে যাওয়ায় বাসিন্দারা সমস্যায় পড়েন। বালুরঘাটে কেবল নতুন ২০০০ টাকার নোট সরবরাহ পেয়েছে ব্যাঙ্ক ও প্রধান ডাকঘরগুলি। তাই গ্রাহকদেরও ২০০০ টাকার নোটই দেওয়া হচ্ছে। শহরের তেঁতুলতলার বাসিন্দা বেসরকারী সংস্থার কর্মী মিঠু সরকার, সরকারী কর্মী সীমান্ত সরকারেরা জানান, ২০০০ টাকার নোট সব্জি ও মাছের বাজারে গিয়ে খুচরো সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। দোকানিদের বক্তব্য, অত টাকা খুচরো নেই। ক্রেতারা ১০০-১৫০ টাকার জিনিস কিনছেন। বাকি ঊনিশশো টাকা খুচরো কোথায় পাবেন তাঁরা? স্টেটব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, খুব শীঘ্রই জেলায় নতুন ৫০০ টাকার নোট এবং খুচরো টাকা ঢুকে যাবে।

ব্যাঙ্কেও নেই একশো

শুক্রবার রায়গঞ্জের সুদর্শনপুর থেকে কসবা পর্যন্ত বেশিরভাগ এটিএমের পরিষেবা স্বাভাবিক ছিল। এ দিন সকালে মোহনবাটী, সুদর্শনপুর, কলেজপাড়া, দেবীনগর, নেতাজিসুভাষ রোড, মহাত্মা গাঁধী রোড, হাসপাতাল রোড, উকিলপাড়া সহ বিভিন্ন এলাকার বেশিরভাগ এটিএমের সামনে টাকা তোলার জন্য বাসিন্দাদের ভিড় দেখা গেলেও দুপুরের পরে ভিড় অনেকটাই কমে যায়। তবে এ দিনও শহরের বিভিন্ন ব্যাঙ্কে ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বদল করার জন্য বাসিন্দাদের ভিড় উপচে পড়েছিল। তবে বেশিরভাগ ব্যাঙ্কেই এদিন ১০০ টাকার নোট ছিল না। তবে ব্যাঙ্কগুলিতে ২০০০ টাকার নোট পর্যাপ্ত ছিল। ফলে এ দিন বহু বাসিন্দা বিভিন্ন ব্যাঙ্কে ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বদল করতে না পেরে সমস্যায় পড়েন। রায়গঞ্জের সেন্ট্রাল কো অপারেটিভ ব্যাঙ্কের বিভিন্ন শাখায় এ দিনও ৫০০ ও ১০০০ টাকা জমা নেওয়া হয়নি। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের দাবি, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নির্দেশে গত ১৫ নভেম্বর থেকে ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট জমা নেওয়া হচ্ছে না। এ দিন দুপুরে ওই ব্যাঙ্কেই ১০০০ টাকার দুটি নোট বদল করতে গিয়েছিলেন স্থানীয় তুলসীতলা এলাকার বাসিন্দা গ্যারেজকর্মী বাবলু রায়। তিনি বলেন, ‘‘ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ একটাই ২০০০ টাকার নোট দিলেন। যেখানে ব্যাঙ্কেই ১০০ টাকার নোটের অভাব, সেখানে বাজারে এতবড় নোট ভাঙাতে পারব কি না,স তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছি।’’ ওই ব্যাঙ্কের রায়গঞ্জ শাখার সিনিয়র ম্যানেজার (অপারেশন) পল্লব বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, চাহিদার তুলনায় ১০০ টাকার নোট কম।

ATM money
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy