Advertisement
১১ মে ২০২৪

‘রাতে যেতে মানা করি, শুনলই না’

রোজকার মতোই কাজে গিয়েছিলেন কনস্টেবল সাবির আলম। শুক্রবার সকাল ৬টা নাগাদ খবর এল তিনি দুষ্কৃতীদের গুলিতে মারা গিয়েছেন।  সাবির চাকুলিয়ার গন্ডাল গ্রামের বাসিন্দা। সাত সকালে এই খবর ছড়িয়ে পড়তে গোটা গ্রাম শোকার্ত হয়ে পড়ে।

হাহাকার: শোকার্ত মৃতের পরিবার। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র

হাহাকার: শোকার্ত মৃতের পরিবার। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
চাকুলিয়া শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০১৯ ০৫:১৬
Share: Save:

রোজকার মতোই কাজে গিয়েছিলেন কনস্টেবল সাবির আলম। শুক্রবার সকাল ৬টা নাগাদ খবর এল তিনি দুষ্কৃতীদের গুলিতে মারা গিয়েছেন। সাবির চাকুলিয়ার গন্ডাল গ্রামের বাসিন্দা। সাত সকালে এই খবর ছড়িয়ে পড়তে গোটা গ্রাম শোকার্ত হয়ে পড়ে। সাবিরের দেহ প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। তারপরে ইসলামপুর মহকুমা হাসপাতালে। সেখানে যান তাঁর পরিজনেরা। পরে সাবিরের দেহ ময়নাতদন্তের জন্য উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়।

সাবিরের পরিজনেরা জানাচ্ছেন, কী ভাবে ওই কনস্টেবলের মৃত্যু হল সেই রহস্য পুলিশকে দ্রুত ভেদ করতে হবে। শোকের সঙ্গে সঙ্গে গন্ডালে ক্ষোভও ছড়িয়েছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০১ সালে পুলিশের কনস্টেবল পদে যোগ দেন সাবির। উত্তর দিনাজপুর জেলার বিভিন্ন থানায় কাজ করেছিলেন। গত পাঁচ মাস ধরে চোপড়া থানার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সাবিরের আত্নীয় তৌফিক আলম বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার সকালে বাড়ি এসেছিলেন। পাড়ায় এক বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল। সেই অনুষ্ঠানে যোগ দেন। সন্ধ্যায় আবার বাড়ি থেকে চোপড়া গিয়ে কাজে যোগ দিয়েছিলেন। চোপড়া পৌঁছে রাতে একবার ফোন করেছিলেন। সেই শেষ কথা। সকালে খবর এল তিনি নেই।’’

সাবিরের মৃত্যুর খবর পেয়ে বার বার কান্নায় ভেঙে পড়েন স্ত্রী রেহেনা খাতুন। ইসলামপুর মহকুমা হাসপাতালের সামনে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘‘বলছিলাম বাড়িতে রাতে থেকে যেতে। কিন্ত কথা রাখল না। বলছিলেন, রাতে মোবাইল ডিউটি রয়েছে। যেতে হবেই।’’ রেহেনা বলেন, ‘‘বাড়িতে বাজার করে দিয়েছিলেন। তারপর বের হন কাজে যোগ দিতে। চোপড়ায় পৌঁছে ফোন করেছিলেনও। আর কোনও দিন সেই ফোন বেজে উঠবে না।’’

সংসারের কী হবে ভেবে পাচ্ছেন না রেহেনা। পরিবার সুত্রের খবর, বাড়িতে একমাত্র উপার্জনশীল ব্যক্তি সাবিরই। তাঁদের দুই ছেলে। বড় ছেলে রেজা আলম ফার্মাসিস্ট হওয়ার পড়াশোনা করেছেন। ছোট ছেলে সাহিন আলম কলকাতার একটি মিশন স্কুল থেকে উচ্চমাধ্যমিকে পড়াশোনা করছেন। আজ উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা রয়েছে। এই অবস্থায় গোটা পরিবার অসহায় হয়ে পড়ল।

বাড়িতে বৃদ্ধা মা রয়েছেন। মা রফিকুন নেছা বলেন, ‘‘এখন সংসার কিভাবে চলবে? গোটা সংসারে অন্ধকার নেমে এল।’’ সেই সঙ্গেই তঁর বক্তব্য, ‘‘ছেলের খুনিদের শাস্তি চাই।’’

নিহত পুলিশকর্মীর বড় ভাই পেশায় ইসলামপুর কোর্টের টাইপিস্ট আব্দুর রউফ বলেন, ‘‘ভাইকে ষড়যন্ত্র করে খুন করেছে। কেননা ডিউটির সময়ে আরও পুলিশকর্মী ছিলেন। দুষ্কৃতীরা খুব কাছ থেকে গুলি করেছে।’’ তিনি বলেন, তিনি বলেন, ‘‘ভাইয়ের অস্বাভাবিক মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। তাঁর কোনও শত্রু ছিল না। তা হলে কী করে এমন হল, তার জবাব চাই।’’ তিনি ঘটনার উচ্চপর্যায়ের তদন্তের দাবি করেন।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কার্তিকচন্দ্র মণ্ডল বলেন, ‘‘পুরো ঘটনার তদন্ত চলছে। খুব শীঘ্রই দুষ্কৃতীরা ধরা পড়বে।’’ এ দিন সাবিরের সহকর্মীরাও বলছেন, সাবির ছিলেন কাজের প্রতি নিষ্ঠাবান।

স্থানীয় বাসিন্দারা এদিন বলেন, সাবির সহজ সরল মানুষ ছিলেন। বাড়িতে অভাবের সংসারে কষ্ট করে পড়াশোনা করে পুলিশের চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন। কাজ নিষ্ঠার সঙ্গে করতেন। পাড়ার যে কোনও সামাজিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকতেন। পাড়ার বাসিন্দা মুস্তাক আলম বলেন, ‘‘শান্ত স্বভাবের ছিলেন। কোনওদিন কারও সঙ্গে ঝগড়া ঝামেলা নেই। বিপদে পাশে দাঁড়াতেন। একজন সাধারণ পুলিশ কনস্টেবলকে দুষ্কৃতীরা কেন খুন করল তা নিয়ে রহস্য থেকে যাচ্ছে।আমরা গ্রামবাসীরা ঘটনার উচ্চপর্যায়ের তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।’’ এদিকে গোটা গ্রাম শোকার্ত। সকলেই অপেক্ষায় সাব্বিরের দেহ কখন এসে পৌছাবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Police Constable
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE