Advertisement
E-Paper

পার্থেনিয়াম রুখতে প্রশাসনকে ডাক

কয়েক বছর আগে রাস্তা বা রেললাইনের ধারেই দেখা মিলত। কিন্তু রাস্তার ধার ছাড়িয়ে চাঁচলে এ বার খেলার মাঠ, কৃষিজমি থেকে শুরু করে যত্রতত্র থাবা বসাতে শুরু করেছে বিষাক্ত পার্থেনিয়াম।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০১৬ ০২:৩৯
পড়ুয়াদের উচ্ছেদ অভিযান। — নিজস্ব চিত্র

পড়ুয়াদের উচ্ছেদ অভিযান। — নিজস্ব চিত্র

কয়েক বছর আগে রাস্তা বা রেললাইনের ধারেই দেখা মিলত। কিন্তু রাস্তার ধার ছাড়িয়ে চাঁচলে এ বার খেলার মাঠ, কৃষিজমি থেকে শুরু করে যত্রতত্র থাবা বসাতে শুরু করেছে বিষাক্ত পার্থেনিয়াম। কৃষিক্ষেত্রের পাশাপাশি স্বাস্থ্যের পক্ষেও অত্যন্ত দূষক ওই উদ্ভিদ উচ্ছেদে উদ্যোগ নেওয়ার কথা প্রশাসনের। কিন্তু প্রশাসনের হেলদোলের অভাবের অভিযোগে পরিবেশ আন্দোলনকারীদের কেউ কেউ একক ভাবেই পার্থেনিয়াম উচ্ছেদ অভিযান চালাচ্ছেন। কিন্তু তাতেও পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাচ্ছে না।

রবিবার ছিল বিশ্ব পরিবেশ দিবস। এই পরিস্থিতিতে পার্থেনিয়ামের বাড়বাড়ন্ত রুখতে প্রশাসন এগিয়ে আসুক বলে এ দিন সরব হয়েছেন পরিবেশপ্রেমীরা।

চাঁচল মহকুমাজুড়ে পার্থেনিয়ামের বাড়বাড়ন্তের কথা প্রশাসনেরও অজানা নয়। কিন্তু পার্থেনিয়াম উচ্ছেদে সরকারি কোনও প্রকল্প না থাকায় তাদের হাত গুটিয়েই থাকতে হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘ওই বিষাক্ত উদ্ভিদ উচ্ছেদে কোনও প্রকল্প আছে কি না তা দেখছি।’’

চাঁচল-১ ব্লকের বিডিও সুব্রত বর্মন বলেন, ‘‘১০০ দিনের প্রকল্পে ওই বিষাক্ত উদ্ভিদ উচ্ছেদ করা যেতে পারে। কিন্তু অনুমতি ছাড়া তা করা সম্ভব নয়। সমস্যার কথা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে ১০০ দিনের প্রকল্পে পার্থেনিয়াম উচ্ছেদের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। দেখি কী হয়।’’

পরিবেশ ও কৃষিজমির পক্ষে কতটা ভয়াবহ পার্থেনিয়াম? পরিবেশ আন্দোলনকারীরাই জানাচ্ছেন, পার্থেনিয়ামের রেণু অতি সূক্ষ্ম ও হালকা হওয়ায় তা সহজেই বায়ুমণ্ডলে ভেসে থাকতে পারে। হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস তো বটেই, এমনকী এই উদ্ভিদের উপক্ষার পার্থেনিন ক্যান্সারেরও সহায়ক। পার্থেনিয়ামের নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাসিয়ামের সংযোজন ক্ষমতা বেশি হওয়ায় এরা দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। পার্থেনিয়াম যে স্বাস্থ্যের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকারক তা জানিয়েছেন চাঁচলের প্রাক্তন এসিএমওএইচ চিকিত্সক স্বপন বিশ্বাসও। আগাছা হিসেবে বেড়ে উঠে পার্থেনিয়াম ধান, গমের বৃদ্ধিকেও ব্যাহত করে বলে জানিয়েছেন কৃষি দফতরের এক আধিকারিক। ফলে এ নিয়ে প্রশাসন কেন সক্রিয় নয় সেই প্রশ্ন তুলেছেন পরিবেশবিদরা।

চাঁচলে কয়েক বছর আগে থেকেই সড়কের দু’পাশে পার্থেনিয়ামের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছিল। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পাশাপাশি জীববিদ্যার শিক্ষক তথা পরিবেশ আন্দোলনকারী কমলকৃষ্ণ দাস নিজের উদ্যোগেই পড়ুয়াদের নিয়ে পার্থেনিয়াম উচ্ছেদ শুরু করেন। একেকটি স্কুলের পড়ুয়াদের প্রশিক্ষণ দিয়ে অভিযান চালিয়ে এর মধ্যে তাঁরা লক্ষাধিক পার্থেনিয়াম গাছ নষ্ট করেছেন। কিন্তু পার্থেনিয়াম যে ভাবে বিস্তীর্ণ এলাকায় থাবা বসিয়েছে তাতে প্রশাসন ছাড়া কারও একক উদ্যোগে তা নির্মূল করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন তাঁরা।

পরিবেশ আন্দোলনকারীরাই জানাচ্ছেন, প্রতিরোধক ব্যবস্থা ছাড়া পার্থেনিয়াম তুললে হিতে বিপরীত হবে। কিন্তু সচেতনতা না থাকায় অন্যদের মতো চাষিরাও আগাছার মতো ওই উদ্ভিদ উপড়ে ফেলছেন। তাতে অন্য জমিও আক্রান্ত হচ্ছে। নিয়ম হল, গাছ তুলে সেখানে নুন গোলা জল দিতে হয়। আবার কালকাসুন্দা ও গাঁদা ফুলের গাছ লাগালেও আর পার্থেনিয়াম হয় না। এ ছাড়া পার্থেনিয়াম গর্তে পুঁতে বা পুড়িয়ে ফেলতে হয়।

কমলকৃষ্ণবাবু বলেন, ‘‘পার্থেনিয়াম তুলে ফেলে প্রায় তিরিশ হাজার কালকাসুন্দা গাছও আমরা লাগিয়েছি। তাতে কিছু এলাকায় পার্থেনিয়াম নির্মূল সম্ভব হয়েছে। কিন্তু পার্থেনিয়ামের বাড়বাড়ন্ত রুখতে প্রশাসনের কর্তাদের দ্রুত ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছি।’’

চাঁচলের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সম্পাদক তথা পরিবেশ আন্দোলনকারী আব্দুর রশিদও বলেন, ‘‘প্রশাসন উদ্যোগ না নিলে পরিস্থিতি অচিরেই ভয়াবহ হয়ে উঠবে।’’

parthenium
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy