Advertisement
০১ মে ২০২৪

হুঁশ ফেরাতে পাঠ-শালা উত্তর জুড়ে

উত্তরের প্রকৃতি পাঠ, অ্যাডভেঞ্চারের দুনিয়ায় নর্থ বেঙ্গল এক্সপ্লোরার্স ক্লাবই অন্যতম অগ্রণী সংস্থা। ডুয়ার্সের ক্ষেত্রে রোভার্স অ্যান্ড মাউন্টেনিয়ারিং সংস্থার অবদানও কম নয়।

নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব চিত্র

কিশোর সাহা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৪:৩৮
Share: Save:

বালুরঘাট থেকে ভুটানঘাট, তিস্তা থেকে কালজানি অথবা মহানন্দা থেকে জয়ন্তী— দূষণ বাড়ছে সর্বত্রই। সেই সঙ্গে শীতকালীন প্রকৃতি পাঠ শিবির ও অ্যাডভেঞ্চার ক্যাম্পের সংখ্যাও উত্তরোত্তর বাড়ছে। তাই পরিবেশপ্রেমীদের আশা, সচেতনতা বাড়িয়ে পরিবেশ দূষণ রোধে সক্রিয় ভূমিকা নেবে এই শিবিরগুলিই।

একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সূত্রের খবর, চলতি শীতের মরসুমে অন্তত ২২টি ক্যাম্পে ২৫০০ ছাত্রছাত্রী হাতে-কলমে পরিবেশ সচেতনতার প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। আশির দশক থেকে উত্তরবঙ্গের প্রকৃতি পাঠ, অ্যাডভেঞ্চার ক্যাম্পের সঙ্গে যুক্ত থাকার সুবাদে রাজ বসুও মনে করেন, অতীতের তুলনায় পরিবেশ বিষয়ক সচেতনতা বাড়ছে। তিনি জানান, আশির দশকের গোড়ায় পাহাড়, সমতল শিলিগুড়ি ও ডুয়ার্সের হাতে গোনা কয়েকটি সংস্থা এ ধরনের ক্যাম্প করত। তখন ক্যাম্প ছিল ৬-৭টা। পরিবেশ-পর্যটন বিষয়ক গবেষক রাজ বলেন, ‘‘দূষণ বাড়াটা যতটা উদ্বেগের, ক্যাম্পের আয়োজন বেড়ে যাওয়াটা ততটাই আশাপ্রদ।’’

উত্তরের প্রকৃতি পাঠ, অ্যাডভেঞ্চারের দুনিয়ায় নর্থ বেঙ্গল এক্সপ্লোরার্স ক্লাবই অন্যতম অগ্রণী সংস্থা। ডুয়ার্সের ক্ষেত্রে রোভার্স অ্যান্ড মাউন্টেনিয়ারিং সংস্থার অবদানও কম নয়। ধীরে ধীরে আলিপুরদুয়ার নেচার ক্লাব, হিমালয়ান নেচার অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশন (ন্যাফ), জেপস, ওদলাবাড়িতে ন্যাসও শুরু করে শিবির। এক দশক আগে শিলিগুড়ির উপকণ্ঠে দাগাপুরে বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে শুরু হয়েছে ‘নেচার স্টাডি ক্যাম্প’। হলদিবাড়ি, কোচবিহার, বালুরঘাট, রায়গঞ্জের পরিবেশপ্রেমীরাও ২৫ থেকে ৩০ অবধি ক্যাম্পের আয়োজন করছেন।

ন্যাফের কো অর্ডিনেটর অনিমেষ বসু জানান, তাঁরা ফি বছর ১৮ ডিসেম্বর থেকে টানা ক্যাম্প করান। প্রথমে বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের নিয়ে ক্যাম্প হয়। তার পরে ২৫ ডিসেম্বর থেকে অ্যাডভেঞ্চার ক্যাম্প হয়। অনিমেষবাবু বলেন, ‘‘পরিবেশ সচেতনতা, পর্বতারোহণ সহ নানা অভিযানের প্রতি টান তৈরি হচ্ছে ক্যাম্প থেকেই। তবে প্রশিক্ষণের গুণগত মান যেন ভাল থাকে সেটা খেয়াল রাখা জরুরি।’’

শিলিগুড়ির পাশেই দাগাপুরের ক্যাম্পের কো-অর্ডিনেটর সুজিত রাহার ‘বসুন্ধরা’য় এ বার ক্যাম্পে যোগ দিয়েছেন প্রেসিডেন্সি কলেজের একদল পড়ুয়া। সামিল হয়েছেন জ্ঞানজ্যোতি কলেজের রাজেশ কামতি, স্নেহা কুমারীরা। মুরালিগছ হাই স্কুলের নাজনি খাতুন, দীপান্বিতা প্রামাণিক বা প্রেসিডেন্সির রাবিয়া মণ্ডলরা ফিরে গিয়েও পরিবেশ বিষয়ক প্রচার-প্রসার চালিয়ে যেতে চান। সুজিত বললেন, ‘‘গাছ-পাখি চেনানো থেকে পাহাড়ে ওঠা, নদী পেরোনো, কীটপতঙ্গ বিষয়ক জ্ঞান, রাতের আকাশের সঙ্গে পরিচয়ের জন্য ক্যাম্পে যেতে ফি বছর ভিড় বাড়ছে।’’

কিন্তু অন্যদিকে তুলনামূলক ভাবে নেচার স্টাডি ক্যাম্পের সংখ্যা কমছে কোচবিহারে। এই সময় প্রতিবছর পরিবেশপ্রেমী ‘ন্যাস’ গ্রুপের পক্ষ থেকে শিবির করা হতো। কিন্তু এ বারে তারা এখনও ওই পথে হাঁটছে না। ন্যাস গ্রুপের সম্পাদক অরূপ গুহ জানিয়েছেন, ‘‘কিছু জায়গায় শিবিরে শিক্ষাদান কম হচ্ছে। শুধু বিনোদন হচ্ছে। তাই আমরা নতুন করে ভাবছি।’’ আলিপুরদুয়ার নেচার ক্লাবের কর্মকর্তা অমল দত্তরা এ বার জয়ন্তী পাহাড়ে ক্যাম্প করছেন। ৩৬তম ক্যাম্প শুরু হচ্ছে ২৬ ডিসেম্বর থেকে। অমলবাবু বলেন, ‘‘ক্যাম্পের সংখ্যা বাড়ছে। এটা ভাল ব্যাপার। কিন্তু, ক্যাম্প মানেই আমোদপ্রমোদ নয়। এই কথা মাথায় রেখে সকলকে কাজ করতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE