Advertisement
২০ মে ২০২৪

‘কামব্যাক ইনিংসে’ সানু এখন আমলা

মেয়েদের মধ্যে ওঁর স্থান রাজ্যে সম্ভাব্য দ্বিতীয়। প্রাক্তন ছাত্রীর এই নজরকাড়া সাফল্যে শুক্রবার কন্যাশ্রী দিবসে সানুকে নিয়েই মেতে উঠলো মালবাজার আদর্শ বিদ্যাভবন।

গর্ব: নিজের স্কুলে সম্মান জানানো হচ্ছে সানুকে। নিজস্ব চিত্র

গর্ব: নিজের স্কুলে সম্মান জানানো হচ্ছে সানুকে। নিজস্ব চিত্র

সব্যসাচী ঘোষ
মালবাজার শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০১৭ ০৩:০৮
Share: Save:

উচ্চ মাধ্যমিকে পেয়েছিলেন ৮৬ শতাংশ নম্বর। শুধুমাত্র দোকান চালানোর জন্যে কলেজে ভর্তি হওয়া হয়নি। বিজ্ঞান পড়ার আশা ছেড়ে ইতিহাসে সাম্মানিক স্নাতক কোর্সে ভর্তি হতে হয়েছিল। তাও দূরশিক্ষায়। কিন্তু সম্বল ছিল জেদ। আর সেই জেদ সম্বল করেই ফিরে এলেন তিনি। পাখির চোখ করেছিলেন রাজ্যের সিভিল সার্ভিস পরীক্ষাকে। গত বৃহস্পতিবার রাজ্য সিভিল সার্ভিসের তালিকায় নবম স্থানটি দখল করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন মালবাজার মহকুমার মেটেলির বাসিন্দা সানু বক্সি।

মেয়েদের মধ্যে ওঁর স্থান রাজ্যে সম্ভাব্য দ্বিতীয়। প্রাক্তন ছাত্রীর এই নজরকাড়া সাফল্যে শুক্রবার কন্যাশ্রী দিবসে সানুকে নিয়েই মেতে উঠলো মালবাজার আদর্শ বিদ্যাভবন।

সানু তখন নবম শ্রেণির ছাত্রী। বাড়িতেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় বাবা পরিতোষ বক্সির। মণিহারি দোকান চালিয়ে কোনওরকমে সংসার চালাতেন পরিতোষবাবু। মা শঙ্করী বিশ্বাস, দিদি তানিয়া বিশ্বাস এবং সানুর জীবন সংগ্রামের সেই শুরু। সানুর মতো দিদি তানিয়াও ছিল মেধাবী। বিজ্ঞানের ছাত্রী। পড়াশোনার চাপ সামলেই দোকানের হাল ধরতে হয় দু’বোনকে। এ দিকে মেটেলি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ৮৩ শতাংশ নম্বর পেয়ে মাধ্যমিক পাশ করে মালবাজার আদর্শ বিদ্যাভবনে একাদশ শ্রেণিতে বিজ্ঞান নিয়ে ভর্তি হয় সানু। ২০১২তে ৮৬ শতাংশ নম্বর নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন সানু। কিন্তু বি়জ্ঞান নিয়ে আর এগোনো হয়নি। সেই থেকেই প্রশাসনের উঁচু পদের চাকরিতে লক্ষ্য স্থির করে ফেলেন সানু।

২০১৫তে দিদি রেলে স্টেশন মাস্টারের চাকরি পেলে কিছুটা স্বচ্ছলতা আসে পরিবারে। দোকান বন্ধ করে এরপর পুরো সময়টাই পড়াশোনা করার সুযোগ পান সানু। দূরশিক্ষায় স্নাতকস্তরের পড়াশোনার পাশাপাশি সিভিল সার্ভিসের পড়াশোনাও শুরু করে দেন সানু। পরামর্শ নিতে ইন্টারনেটের মাধ্যমে যোগাযোগ করেন রাজ্যের তিন পদস্থ বিসিএস আধিকারিকের সঙ্গে। কঠোর পরিশ্রমে আসে সাফল্য। সানুর কথায়, ‘‘দোকানদারি করতে করতে মানুষের লড়াই খুব কাছ থেকে দেখেছি। তাদের জন্য কিছু করতে চাই। তাই বিজ্ঞান পড়তে না পারায় আফশোস নেই।’’

কন্যাশ্রী দিবসে সানুকে সংবর্ধনা দিয়ে ওর জীবন সব পড়ুয়ার কাছে রোল মডেল হয়ে উঠুক, সেই বার্তাই দিয়েছেন আদর্শ বিদ্যাভবনের প্রধান শিক্ষক সুশান্ত দত্ত। আর নিজের স্কুলের কন্যাশ্রীদের উদ্দেশ্যে সানুর একটাই বার্তা, ‘‘বিয়ে করে সংসার তো করতেই হবে। তার আগে সফল মানুষ হয়ে ওঠো।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE